ঝালকাঠিতে ১৭ জনের মৃত্যু

ঘাতক বাসের ‘মিটার নষ্ট’ ছিল, চালকের ছিল হালকা যানের লাইসেন্স

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২৩

বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় পুকুরে বাস পড়ে ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসের ‘মিটার নষ্ট’ ছিল। এজন্য চালক বাসের গতি বুঝতে পারেননি। তাছাড়া বাসে ধারণক্ষমতার বাইরে বেশি যাত্রী ছিল। এসব কারণে বাসটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়।

বাসচালক মোহন খানকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। বুধবার (২৬ জুলাই) ভোরে তাকে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।

একই দিন দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বাসচালক মোহনকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মূলত মোহন যে বাসটি চালাচ্ছিল সেটির কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। গাড়িটি দ্রুতগতিতে চললেও মিটার ছিল নষ্ট। আর মোহনের হালকা যান চালানোর সার্টিফিকেট থাকলেও ভারী যানবাহন চালানোর কোনো সার্টিফিকেট ছিল না। গত তিন বছর ধরে মোহন এ রুটে ভারী যান চালিয়ে আসছিল।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অনেক ক্ষেত্রে মালিকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়। এ ঘটনায় চালকের পাশাপাশি মালিকের কোনো গাফিলাতি থাকলে তাকেও আসামি করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে দায়ের করা মামলায় চালকের সহযোগী, সুপারভাইজার ও চালককে আসামি করা হয়েছে।

র‌্যাব মুখপাত্র জানান, চালক মোহন দুর্ঘটনার পর কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এরপর ঝালকাঠি, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় তার বিভিন্ন আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপনে থাকেন। এরপরই আশুলিয়া থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে।

ঘাতক বাসের ‘মিটার নষ্ট’ ছিল, চালকের ছিল হালকা যানের লাইসেন্স

যা জানিয়েছে চালক মোহন

চালক মোহন গত ২২ জুলাই সকাল ৯টায় বাশার-স্মৃতি পরিবহনের বাস নিয়ে ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল রওয়ানা হন। পথে বিভিন্ন স্টপেজে ৫৫ জন যাত্রী তুলে বাস বোঝাই করেন। এরপর বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি চালাতে থাকেন। পরে ৯টা ৫০ মিনিটে ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় পৌঁছালে গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত গতির কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের পুকুরে পড়ে যায়। এসময় বাসটি পানিতে ডুবে যায়। যাত্রীরা যে যার মতো পানি থেকে উঠে আসেন। কিন্তু বাসের ভেতরে আটকা পড়েন অনেকে। সেখান থেকে উঠে মোহন দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

ঘাতক বাসের ‘মিটার নষ্ট’ ছিল, চালকের ছিল হালকা যানের লাইসেন্স

এদিকে সেদিনের বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে আটজন নারী, ছয়জন পুরুষ ও তিনজন শিশু ছিল। বাস থেকে বাকিদের ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয়রা উদ্ধার করেন। আহতদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

এর আগে সোমবার (২৩ জুলাই) বিকেলে ঝালকাঠির রাজাপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বাসটির সুপারভাইজার মো. ফয়সাল মিজানকে। দুর্ঘটনার পর রোববার (২২ জুলাই) রাতে ঝালকাঠি সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুশংকর বাদী হয়ে বাস দুর্ঘটনার ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

টিটি/এমআইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।