ভৈরব এখন ছিনতাইকারীদের দখলে


প্রকাশিত: ০৮:৩৫ এএম, ১৯ মার্চ ২০১৬
প্রতীকী ছবি

সন্ধ্যার পরই ভৈরব শহরের সকল রাস্তা-ঘাট থাকে ছিনতাইকারী ও ডাকাতের দখলে। গত ১ বছরে ২ শতাধিক ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৩ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। পুলিশের প্রতি আস্থা না থাকায় পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে মাদক ও অপরাধ প্রতিরোধ কমিটি।

শনিবার সকালে স্থানীয় নাটালের পেছনে ছিনতাইকারীরা এক শ্রমিককে ছুরিকাঘাত করে আহত করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এ সময় একজন ছিনতাইকারীকে আটক করে জনতা পুলিশে দেয়। এছাড়া ১৬ মার্চ সকাল ৬ টায় স্টেশন সংলগ্ন পলাশ রোডে এক ব্যবসায়ীর সকল টাকা-পয়সা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা আবার এই ব্যবসায়ীকে ফোন দিয়ে কৌশলে কাগজপত্র ফিরিয়ে দিয়ে আরো ১০ হাজার টাকা আদায় করে নেয়।

১৫ মার্চ রাতে গাছতলাঘাট এলাকায় এক ব্যবসায়ীর টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে অপরাধীরা। ১৩ মার্চ রেলওয়ে কলোনির মাতৃমন্দির এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলাপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতর আহত করে সব কিছু ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। ১০ মার্চ পঞ্চবটি এলাকায় একটি কয়েল কারখানার ম্যানেজাররের কাছ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় স্থানীয় কয়েকজন ছিনতাইকারী। পরে তাদের চিনতে পেরে এলাকার লোকজন নিয়ে এ দিনই ১ লাখ ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে।

৭ মার্চ রাতে স্থানীয় নাটাল মোড় এলাকায় তরুণ আইনজীবী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেন পলাশকে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। ২ মার্চ একই এলাকায় নুকুল নামের এক কয়লা ব্যবসায়ীর বুকে ছুড়ি বসিয়ে ছিনতাই করে সন্ত্রাসীরা। ১ মার্চ রাত সাড়ে ৮ টায় আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ৩টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ওই রাতে ছুরিকাঘাত করে চার ব্যক্তির সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। গত এক বছরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ২ শতাধিক, ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হয়েছেন ৩ জন। ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, রাজনীতিক এমনকি প্রশাসনের লোকজনও।

জানা যায়, ‘আরএনএবিএস’ বাহিনীর প্রথম সারির সদস্য সংখ্যা ৬ । ওই ৬ জনের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে রাখা হয়েছে বাহিনীর নাম। তাদের প্রত্যেকের ডান হাতে ফুলকি এঁকে ‘আরএনএবিএস’ শব্দটি লেখা রয়েছে। ওই বাহিনীর সহযোগী সদস্য রয়েছে আরো ৭৪ জন। শহরে ঘটে যাওয়া প্রায় প্রতিটি ছিনতাই, খুন, মাদক ব্যবসার সঙ্গে এ বাহিনী কোনো না কোনোভাবে যুক্ত রয়েছে। গত ১৪ মার্চ সোমবার ‘আরএনএবিএস’ বাহিনীর এক সদস্য গ্রেফতার হয়। পুলিশের কাছে তার দেয়া জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। ১৫ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতেও এসব তথ্য স্বীকার করেছে গ্রেফতার হওয়া ওই ছিনতাইকারী দলের সর্দার রূপক। উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও আইনজীবী পলাশের কাছ থেকে ‘আরএনএবিএস’ বাহিনীর ৪ সদস্য মিলে ছিনতাই করতে গিয়ে তাকে খুন করে এর দায় স্বীকারও করেছে ওই অপরাধী।

অবশেষে দিশেহারা ভৈরবের মানুষ সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়া শুরু করেছে। গ্রাম মহল্লায় আলাদা আলাদা সমাবেশ করে ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসার প্রতিবাদে প্রতিটি গ্রামের সুধীজনদের নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি করেছে পৌর মেয়র। পুলিশের প্রতি আস্থা না থাকায় এটি হয়েছে বলে জানিয়েছে এই কমিটির এক সদস্য।

ভৈরব পৌরসভার মেয়র অ্যাড. ফখরুল আরম আক্কাছ বলেন, `এই সকল অপরাধী আমাদের চেনা জানা, আমরা সকলে মিলে অপরাধ প্রতিরোধ করব। ভৈরবে হয়ত সন্ত্রাসীরা থাকবে নতুবা আমরা থাকব।’

ভৈরব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম তালুকদার বলেন, সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে ১৩ দাগী ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেব।

আসাদুজ্জামান ফারুক/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।