সাবিনার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
সাবিনা। পেশায় একজন টাইপিস্ট। নওগাঁ জজ কোর্টের বারান্দায় পুরুষ সহকর্মীদের পাশাপাশি তিনিও টাইপ করেন। তবে আধুনিক ডিজিটাল যুগে টাইপ মেশিন বিদায়ের পথে। তাই টাইপ মেশিনের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়ে পড়বে তার । কিন্তু একটি কম্পিউটার হয়তো তার সংসার জীবনকে পরিবর্তন করে দিবে।
বাড়ি তার নওগাঁ শহরের ইকড়তাড়া গ্রামে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সাবিনা তিন নম্বর। ২০০৩ সালে বিয়ে হয় পাশের গ্রামে। সংসারের মধ্য দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে মাদরাসা থেকে ডিগ্রি (ফাজিল) পাস করেছেন। ২০১০ সালে আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তারপর বাবার বাড়িতে মেয়ে ও মাকে নিয়ে বসবাস। বাবা মৃত আনোয়ার হোসেন। মেয়ে সুমাইয়া এবার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
সাবিনা জানান, বিচ্ছেদ হওয়ার পর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোন কাজ পেলাম না। এরপর কোর্টের মহুরি নূরুল ইসলাম সম্পর্কে মামা পরামর্শ দেন টাইপিংয়ের কাজ করার জন্য। ২০১০ সালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তিন মাসের একটা কোর্স করলাম। টাইপিং শেখার পর সে বছরই বড় বোনের স্বামী (দুলাভাই) ঢাকা থেকে দশ হাজার টাকা দিয়ে একটা টাইপ মেশিন কিনে দেন। কাজ করার মধ্য দিয়ে যে আয় হয় তা থেকে একটু একটু করে টাকা পরিশোধ করে দিলাম।
প্রথমে কাজের একটু সমস্যা হতো। অ্যাডভোকেটদের লেখা তেমন বোঝা যেত না। সহকর্মীদের কাছ থেকে দেখে নিতে হতো। লেখা এবং কাজের ধরন বুঝতে এভাবে প্রায় তিন মাসের মতো লেগে যায়। প্রথমে কাজ তেমন না পেলেও ২শ থেকে ৩শ টাকা আয় হতো। এরপর আস্তে আস্তে কাজ বাড়তে থাকেল আয়ও বাড়তে থাকে। দিনে ৫শ থেকে ৬শ টাকার হতো। 
সাবিনা আরও জানান, আদালত চত্বরে এখন কম্পিউটার দিয়ে কাজ করেছেন অনেকে। যারা কম্পিউটার দিয়ে কাজ করেন তারা দিনে প্রায় ৭শ থেকে ৮শ টাকা আয় করেন। যারা টাইপ মেশিন দিয়ে কাজ করে নিতেন তারা আর কাজ করে নিচ্ছেন না। ফলে কাজও কম হচ্ছে। চার বছরে মেশিন ৬ বার ঠিক করতে হয়েছে। দিনে এখন ৩শ থেকে ৪শ টাকার মতো কাজ হয়। এছাড়া ছুটির দিনগুলো আদালত বন্ধ থাকায় কাজ হয় না। তখন কিছুটা কষ্টে সংসার পার করতে হয়।
সাবিনা জানান, টাইপিংয়ের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ায় কাজও কম হচ্ছে। যারা আগে কাজ করে নিতেন তারা আর আসেন না। কম্পিউটার কিনলে তারা আবার কাজ দিতে চেয়েছেন। কম্পিউটারের কাজও মোটামুটি জানা আছে। কিন্তু এতো টাকা পাবো কোথায়। গরীব হওয়ায় এতো টাকা দিয়ে কম্পিউটার কিনতে পারছি না। কেউ যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। 
নওগাঁ জেলা টাইপস্টি কল্যাণ সমিতির সভাপতি এরফান আলী জানান, আমাদের ১৯ জন সদস্যের মধ্যে সাবিনা শুধু মেয়ে। প্রথমে সদস্য ভর্তি এবং কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন কাজ একটু কমে গেছে টাইপস্টিদের ক্ষেত্রে। আমাদের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই কম্পিউটার দিয়ে কাজ করছেন।
এসএস/এমএস