দেশ-বিদেশে তৃতীয় টার্মিনালকে ঘিরে কৌতূহল
# ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস— সব কিছু অটোমেশন পদ্ধতিতে হবে
# অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে ও কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ টার্মিনাল
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে নির্মিত হচ্ছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল (টার্মিনাল-৩)। আগামী ৭ অক্টোবর আংশিক উদ্বোধন করা হবে এ মেগা প্রকল্পের। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। এটা হলে বর্তমানের ৮০ লাখের জায়গায় বছরে শাহজালাল বিমানবন্দরে সেবা নিতে পারবে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ।
দেশ-বিদেশে সবার মধ্যে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালকে ঘিরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আসছে এবং একসঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। তৃতীয় টার্মিনালের বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক ইসমাইল হোসাইন রাসেল।
আরও পড়ুন>> শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন শনিবার, মঞ্চ প্রস্তুত
জাগো নিউজ: বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরুর পর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এটি যথাসময়ে সম্পন্ন করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
প্রতিমন্ত্রী: আমাদের এসময়টা অনেকটা আনন্দের এবং গৌরবের। ৭ অক্টোবর তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং হতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে আমরাদের যখন কাজ শুরু হয়, এর পরপরই করোনার অভিঘাত। ওই সময়ে বিশ্বের সব কাজকর্ম বন্ধ ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ চালিয়ে গেছি। একদিনের জন্যও কাজটি বন্ধ হয়নি। এটি একটি বড় ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব কাজ করতে সমর্থ হয়েছি। এজন্য আমরাও গৌরবান্বিত এবং দেশের মানুষের জন্যও এটি গৌরবের। বহির্বিশ্বেও আমাদের এ প্রকল্প নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। অনেকের মধ্যেই উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন>> এক্সপ্রেসওয়ে-মেট্রোতে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল
জাগো নিউজ: এ টার্মিনালে কী দেশের বাইরের বিমান বন্দরগুলোর মতো উন্নত সেবা মিলবে?
প্রতিমন্ত্রী: নানান সমস্যায় এরআগে হয়তো আমরা ফুল সার্ভিসটা সেভাবে দিতে পারিনি। কিন্তু চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। চেষ্টা করেছি যাতে আন্তর্জাতিক মানের সেবা বজায় রাখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং তারই নেতৃত্বে আমরা এত বড় একটা প্রকল্প সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। শুধু কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য নয়, এর মূল লক্ষ্য একটি সুন্দর এয়ারপোর্ট করা, যাতে সেবাটাও আন্তর্জাতিক মানের হয়। সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে, আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে কাজকর্ম অব্যাহত আছে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যে সেবা যার কাছ থেকে পাওয়া যায়। যে ধরনের সেবা দেশের বাইরের বিমান বন্দরগুলোতে পাওয়া যায় সেই একই সেবা যেন দিতে পারি সে লক্ষ্যে কাজ অব্যাহত আছে।
জাগো নিউজ: ইমিগ্রেশনে ভোগান্তির কথা প্রায়ই শোনা যায়, সেটি কতটা লাঘব হবে?
প্রতিমন্ত্রী: ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস— সব কিছু অটোমেশন পদ্ধতিতে হবে। আমরা এটার মেইনটেনেন্সের ব্যাপারে জাপানের সঙ্গে আলোচনা করছি। এখানে যাতে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। টার্মিনাল যখন অপারেশনে যাবে তখন কোনো ধরনের যাত্রী হয়রানি বলতে যা বোঝায় এমন কিছুই থাকবে না। সম্পূর্ণ অটোমেশন পদ্ধতিতে হবে। যাত্রীর ইমিগ্রেশন হবে, কাস্টমস হবে এবং লাগেজ রিলিজও দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হবে। বর্তমানে অনেকগুলো সীমাবদ্ধতা আছে। একসঙ্গে যখন দশটা ফ্লাইট ল্যান্ড করে একটার মালামাল রিলিজের পরে আরেকটার মালামাল রিলিজ করতে হচ্ছে। যার কারণে সেবা দিতে এক ঘণ্টার জায়গায় দুই ঘণ্টা লাগছে। কিন্তু নতুন টার্মিনাল অপারেশনে যাওয়ার পর এ ধরনের সমস্যা থাকবে না।
আরও পড়ুন>> বাণিজ্য বাড়াবে ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল
নতুন টার্মিনালে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে, বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ২৬টি। এখানে প্রায় ৩০ মিলিয়ন যাত্রীর ক্যাপাসিটি থাকবে। কোনো ধরনের অচলায়তন কিংবা যাত্রী সেবার মানের অবকাঠামোগত কোনো সমস্যা থাকবে না। সব ডিজিটালাইজেশন থাকবে। ডিজিটালাইজ পদ্ধতিতে সব সেবা দেওয়া হবে। এর বাইরেও ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার থাকবে। এছাড়া বিমান বন্দরে যাত্রীর জন্য আগতদের বসার ব্যবস্থা থাকবে। বডিং ব্রিজগুলো অত্যন্ত আধুনিক, যা আধুনিক বিমানবন্দরগুলোতেও নেই। আমাদের এটা এ যুগের চেয়েও আধুনিক বিমানবন্দর। আপনারা দেখেছেন, এরই মধ্যেই বিভিন্ন চ্যানেলে এটা যে শৈল্পিক টার্মিনাল। ভেতরে অনেক সুন্দর বিশ্বের যেকোনো এয়ারপোর্টের তুলনায়। এ টার্মিনাল নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশাকরি, সবাই খুশি হবে। দেশ-বিদেশে সবার মধ্যে একটা কৌতূহল তৃতীয় টার্মিনালকে নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আসছে। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। অ্যাভিয়েশনে বাংলাদেশ একটা বড় ধরনের মার্কেট, তাই সবার লক্ষ্য আমাদের দিকে।
জাগো নিউজ: তৃতীয় টার্মিনালের মাধ্যমে অ্যাভিয়েশন খাতে কি ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?
প্রতিমন্ত্রী: এ মন্ত্রণালয়ে আসার পরে আমার জানার সুযোগ হয়েছে— দেশে অ্যাভিয়েশন একটা বড় মার্কেট। যতগুলো এয়ারলাইন্স দেখেন বিশ্বের মধ্যে যারা লিডিংয়ে আছে, এমিরেটস, কাতার, সিঙ্গাপুর, টার্কিশসহ সব এয়ারলাইন্সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ বিমান যথেষ্ট ভালো করছে। ফলে সবারই নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। বিপুল সংখ্যক যাত্রী বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে। অভ্যাসগতভাবেও বাংলাদেশের মানুষ অনেক কর্মঠ। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, জাপানসহ সব জায়গায় আমাদের নাগরিক রয়েছে। তারা সেসব দেশে বিমানে যাতায়াত করেন। ফলে এয়ারলাইন্সগুলোর দৃষ্টি আরও বেশি পড়েছে। তারা প্রতিনিয়ত অনুরোধ করছে যাতে তাদের বেশি সুযোগ দেওয়া হয় এবং অনেকগুলো এয়ারলাইন্স পাইপলাইনে আছে, তারাও আসতে চায়। এ টার্মিনাল করার ফলে অনেক বডিং বিস্তৃত হবে। তাদের সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো সীমাবদ্ধতা থাকবে না। আমরা তাদের সুযোগ দিতে পারবো। আমাদের মার্কেট দু-তিন গুণে নিয়ে যেতে পারবো। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে ও কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ টার্মিনাল।
আরও পড়ুন>> তৃতীয় টার্মিনালে পরীক্ষামূলক ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
জাগো নিউজ: তৃতীয় টার্মিনালের ফলে পর্যটন খাতে কোনো প্রভাব পড়বে কি?
প্রতিমন্ত্রী: আমাদের দেশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরের মতো জায়গা রয়েছে। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। এগুলো বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন করেছি। বিশ্ববাসী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েকদিন আগে রাশিয়ান এক প্রতিনিধি এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ান অনেক পর্যটক মালদ্বীপ, দুবাই ও মিশরে যান। তিনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অভিভূত।
আরও পড়ুন>> তৃতীয় টার্মিনালে বছরে সেবা মিলবে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীর
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম লীলাভূমি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন- বিশ্ববাসীর সামনে সেই বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য পর্যটন করপোরেশন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পর্যটন মহাপরিকল্পনা একেবারে চূড়ান্ত হওয়ার পথে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়ার পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ মহাপরিকল্পনা নেবো। এরই মধ্যে অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা কীভাবে এখানে আসবেন সে ব্যাপারেও মহাপরিকল্পনায় সুপারিশ আছে। অনেক বিনিয়োগকারী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা খুব দ্রুত মাস্টারপ্ল্যান নেওয়ার পরেই পরিকল্পিতভাবে পর্যটনকে নিয়ে অনেক দূর অগ্রসর হতে চাই।
আইএইচআর/এমএএইচ/জেআইএম