একটি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ উপহার দিতে কাজ করছে বিডি ক্লিন

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ১১:১৯ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

‘পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে’ স্লোগান নিয়ে ২০১৬ সালের ৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় অরাজনৈতিক ও অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন। এখন দেশের ৫৯টি জেলা ও ১৫০টির বেশি উপজেলায় বিডি ক্লিনের সদস্য রয়েছে ৪৪ হাজারের বেশি। তারা নিজ নিজ জেলা-উপজেলায় সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে স্থানীয় একটি অপরিষ্কার স্থান নির্বাচন করে তা পরিষ্কার এবং সবুজায়ন করেন।

সম্প্রতি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের খোয়াই নদী ও মিরপুরের প্যারিস খাল পরিষ্কার করে দেশের মানুষের ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে সংগঠনটি। বিডি ক্লিনের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ফরিদ উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মুসা আহমেদ।

জাগো নিউজ: সম্প্রতি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের খোয়াই নদী পরিষ্কার করে সারাদেশের মানুষের ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে বিডি ক্লিন। কেমন লাগছে?

ফরিদ উদ্দিন: আমরা শুধু হবিগঞ্জের খোয়াই নদীটা পরিষ্কার করেছি তা নয়, এর আগে আরও অনেক নদী, বিভিন্ন শহরে খাল পরিষ্কার করেছি। শহর যেন পরিচ্ছন্ন থাকে। সবমিলিয়ে মানুষের যে প্রশংসা, মানুষ আমাদের বলছে যে আপনারা অনেক ভালো কাজ করছেন। নিশ্চয়ই আমাদের এটা অনেক ভালো লাগছে। এই অনুপ্রেরণা নিয়ে আমরা আরও সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: আপনার হাত ধরে বিডি ক্লিন প্রতিষ্ঠিত। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্পটা যদি বলতেন।

ফরিদ উদ্দিন: বিডি ক্লিন প্রতিষ্ঠার পেছনে আমার বোধটা কাজ করেছে। একদিন ভোরবেলা আমি ফেসবুকে দেখলাম একটি ডাস্টবিনের ছবি। কিন্তু এর ভেতরে ময়লা নেই, বাইরে ময়লা দেখা যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়েছে মানুষকে আসলে ডাস্টবিন ব্যবহারে সচেতন করতে হবে। মানুষ ডাস্টবিন ব্যবহার করছে না। সেই জায়গা থেকেই বিডি ক্লিনের জন্ম। আমি যদি এক কথায় বলি তাহলে বলবো ডাস্টবিন ও উপলব্ধির সমন্বয়ে বিডি ক্লিনের জন্ম হয়েছে।

পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে গিয়ে আমরা কখনোই কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। আমাদের সামনে একটাই চ্যালেঞ্জ- বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে যত্রতত্র ময়লা ফেলার অভ্যাস থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা। যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে আমরা ওই জায়গায় সতেচন করতে না পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।

জাগো নিউজ: মানুষকে সচেতন করার জায়গাটায় বিডি ক্লিন কতটুকু পৌঁছাতে পেরেছে?

ফরিদ উদ্দিন: প্রতিষ্ঠার সপ্তম বছর পেরিয়ে বিডি ক্লিনের এখন আট বছর চলছে। আমাদের টার্গেট ছিল আরও কম সময়ের মধ্যে আমরা বাংলাদেশের মানুষের যত্রতত্র ময়লা ফেলার যে অভ্যাস তা পরিহার করিয়ে ডাস্টবিন ব্যবহারে সচেতন করতে পারবো। কিন্তু মাঝখানে করোনার জন্য একটা বড় সময় চলে গেছে। এই সময় আমরা মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারিনি। এরপরে আমরা দুই বছর ধরে টানা কাজ করে যাচ্ছি, সামনের দিনগুলোতে আমরা আশাবাদী খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে পারবো।

আরও পড়ুন>> বরিশালে নির্বাচন পরবর্তী পোস্টার অপসারণ করছে বিডি ক্লিন

জাগো নিউজ: পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে গিয়ে আপনাদের কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বা হয়েছে?

ফরিদ উদ্দিন: পরিচ্ছন্নতার এ কাজ করতে গিয়ে আমরা কখনোই কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। আমাদের সামনে একটাই চ্যালেঞ্জ- বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে যত্রতত্র ময়লা ফেলার অভ্যাস থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা। যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে আমরা ওই জায়গায় সতেচন করতে না পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। সুতরাং, প্রতিটি মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়াই একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

জাগো নিউজ: ৩ জুন জাতীয় পরিচ্ছন্নতা দিবস ঘোষণার জন্য বিডি ক্লিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছে। সেই আহ্বানে কতটুকু সাড়া পেয়েছেন?

ফরিদ উদ্দিন: আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এবং জেলা-উপজেলা প্রশাসন বরাবর একটা চিঠি দিয়েছিলাম ৩ জুনকে জাতীয় পরিচ্ছন্নতা দিবস ঘোষণা করার জন্য। কারণ অনেক দিবস রয়েছে, তবে একটি দিবস আসলে বাকিই রয়েছে ‘পরিচ্ছন্নতা দিবস’। আমরা যেহেতু স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি, তাই মনে হয় এটা একটি যৌক্তিক দাবি। যেহেতু একটা চিঠি দিয়েছি নিশ্চয়ই স্মার্ট বাংলাদেশের যৌক্তিকতায় প্রধানমন্ত্রী ৩ জুনকে পরিচ্ছন্নতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করবেন। এটার জন্য আমরা সবাই আশাবাদী হয়ে অপেক্ষা করছি।

জাগো নিউজ: সারাদেশের তুলনায় ঢাকা শহরের নদী, খাল-ঝিল সব জায়গায় ময়লা-আবর্জনা বেশি। এর দায় আসলে কার?

ফরিদ উদ্দিন: আমি যদি মোটা দাগে বলি তাহলে বলবো উভয় (সিটি করপোরেশন ও নাগরিক) দিকের দায় রয়েছে। যদি স্পেশালি বলি তাহলে বলবো এর পরিপূর্ণ দায়টা নাগরিকদের। আমরা যদি ময়লা-আবর্জনা না ফেলি তাহলে কোনোভাবেই ময়লা জমতো না। আমরা যদি ময়লা-আবর্জনা না ফেলি, নাগরিক দায়িত্বটা পালন করি তাহলে কোথাও কোনো ময়লা পাওয়া যেত না। তাই আমি এখানে সিটি করপোরেশনকে দোষ দিতে পারি না। যেটা আমাদের দোষ সেটা স্বীকার করে দায়িত্বটা পালন করা উচিত বলে মনে করে বিডি ক্লিন।

আমাদের লক্ষ্য আমরা পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আর উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাংলাদেশের নাগরিককে সারা পৃথিবীর মধ্যে আদর্শবান সুনাগরিকের উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা ঠিক সেদিকেই এগোচ্ছি। মোটা দাগে হয়তো কেউ দেখবে আমরা ময়লামুক্ত পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি-প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

জাগো নিউজ: সারাদেশে বিডি ক্লিনের চুয়াল্লিশ হাজার সদস্য রয়েছে। এ সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াটা কীভাবে করেন।

ফরিদ উদ্দিন: প্রথম ২০১৬ সালের ৩ জুন বিডি ক্লিন যাত্রা শুরু করে। তারপর আমরা ফেসবুকে একটা ইভেন্ট খুলি। সেখানে জানাই যে এ স্থানটি আমরা আজ পরিষ্কার করতে চাই। সেখান থেকে যাদের দেশপ্রেম রয়েছে, যারা চায় দেশটা পরিচ্ছন্ন করে গড়ে তুলতে তাদের মধ্য থেকে একটা অংশ আমাদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে যোগ দেয়। এভাবে করতে করতে এখন ৫৯টি জেলা এবং ১৫০টির অধিক উপজেলা নিয়ে চুয়াল্লিশ হাজারেরও অধিক সদস্য এখন আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। আর আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়াটা খুবই সহজ। যে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। প্রত্যেক জেলায়ই ফেসবুক পেজ রয়েছে। বিশেষ করে বিডি ক্লিন পেজে যদি কেউ নক দেয় সেটাতে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই রেসপন্স করি। সেখানে আমরা তাদের বলি আপনার নাম-এলাকা এবং আপনার ফেসবুক আইডি দিয়ে আমাদের সহায়তা করুন। এসব যখন আমাদের কাছে সাবমিট করে তখন ওই জেলা বা উপজেলার যিনি সমন্বয়ক আছেন তিনি আমাদের সঙ্গে তাকে যুক্ত করে নেন।

আরও পড়ুন>> অসহায়দের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে ‘বিডি ক্লিন’

জাগো নিউজ: বিডি ক্লিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মানুষকে সচেতন করে। এর বাইরে আর কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না?

ফরিদ উদ্দিন: অবশ্যই জড়িত। আমরা সব সময়ই বলি আমরা দেশের জন্য কাজ করছি। দেশের যে কোনো ধরনের জরুরি মুহূর্তগুলোতে আমরা কাজ করি। কোথাও আগুন লাগার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওই স্থানে বিডি ক্লিনের সদস্যরা গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা, মানুষকে যতটুকু সহায়তা করা যায় করি। এছাড়া করোনার সময় আমরা সবাইকে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। উত্তরাঞ্চলে দুবার শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রম পরিচলানা করেছি। বন্যার্তদের জন্য কাজ করেছি। সবুজায়নের জন্য এবং পৃথিবীর উষ্ণতা থেকে বাঁচতে আমাদের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একদিনে দেড় লাখ গাছ লাগিয়ে ছিলাম। সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমরা তিন লাখেরও বেশি গাছ লাগিয়েছি।

জাগো নিউজ: বিডি ক্লিনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ফরিদ উদ্দিন: আমাদের লক্ষ্য আমরা পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আর উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাংলাদেশের নাগরিককে সারা পৃথিবীর মধ্যে আদর্শবান সুনাগরিকের উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা ঠিক সেদিকেই এগোচ্ছি। মোটা দাগে হয়তো কেউ দেখবে আমরা ময়লামুক্ত পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি-প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মূলত আমরা যারা বিডি ক্লিনের সঙ্গে কাজ করছি তারা মানুষের মানসিকতার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের মানসিকতার মানোন্নয়নের কাজ এভাবে অব্যাহত থাকলে ইনশাআল্লাহ একদিন বাংলাদেশের সব নাগরিক আদর্শবান সুনাগরিক হবে এবং সারা পৃথিবীর মধ্যে তা উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে।

বিডি ক্লিনের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ফরিদ উদ্দিন

জাগো নিউজ: পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে বিডি ক্লিন নাগরিকদের কী বার্তা দেবে?

ফরিদ উদ্দিন: পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে প্রথমেই যেই বার্তাটা দিতে চাই তা হচ্ছে অপরিচ্ছন্ন শহরের তুলনায় পরিচ্ছন্ন শহরে ৪৭ শতাংশ রোগ-জীবাণুর প্রকোপ কমে যায়। আমরা সবাই মিলে এ পরিবেশটা সুন্দর করে তুলতে পারি। দেশটাকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে পারি। তাহলে আমরাসহ আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ৪৭ শতাংশ রোগ-জীবাণু থেকে রক্ষা পাবো।

নিজেদের সুস্থ রাখার জন্য হলেও নিজের নাগরিক দায়িত্ববোধ পালন করে দেশটাকে পরিচ্ছন্ন করা উচিত। জাগো নিউজের মাধ্যমে সারাদেশের সব নাগরিককে বিডি ক্লিনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আমরা সবাই মিলে নাগরিক দায়িত্ব পালন করি। যত্রতত্র ময়লা ফেলার যে অভ্যাস আছে তা পরিহার করি। আমাদের ময়লা আমরা নির্দিষ্ট স্থানে রাখি, পরিচ্ছন্ন ও জীবণুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।

জাগো নিউজ: জাগো নিউজকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ফরিদ উদ্দিন: জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।

এমএমএ/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।