ট্রেন বন্ধে চট্টগ্রামে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভরসা বিআরটিসি

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫

রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে চট্টগ্রাম থেকে কোনো ট্রেন ছাড়েনি। এতে করে আগে টিকিট কাটা যাত্রীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। বিপাকে পড়ে নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করা এসব নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা হয়েছে বিআরটিসির বাস।

বিআরটিসি চট্টগ্রাম বাস ডিপো ম্যানেজার জুলফিকার আলী চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে জাগো নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে আমরা চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আছি। নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি বাস ঢাকা, সিলেট ও কুমিল্লার উদ্দেশ্যে ছাড়া হয়েছে। যাদের রেলের টিকিল ছিল তারা ওই টিকিট দেখিয়ে গন্তব্যে গেছে। যারা অগ্রিম টিকিট নেননি তাদেরও বাসে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার খবর প্রচার হওয়ায় বেশিরভাগ যাত্রী রেলস্টেশনে আসেননি। যারা কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়েছিলেন তাদের একটি অংশ টিকিট ফেরত দিতে স্টেশনে আসছেন। আবার যেসব ট্রেনের অগ্রিম টিকিট নেই এ ধরনের অনেক যাত্রী স্টেশনে আসছেন। এখানে চাঁদপুর, কুমিল্লাগামী কম আয়ের মানুষ বেশি। ট্রেনের ভাড়ায় আমাদের বাসগুলো দেওয়ার কারণে কম আয়ের মানুষরা বেশি উপকৃত হয়েছেন।

ট্রেন বন্ধে চট্টগ্রামে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভরসা বিআরটিসি

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ছিলেন আবদুর রউফ। বিকেল ৫টার দিকে রেলস্টেশনে এসে জানতে পারেন মেঘনা এক্সপ্রেস ছাড়ছে না।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ১০ জন বরিশাল থেকে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম এসেছি। অনুষ্ঠান শেষে বরিশাল চলে যাচ্ছি। এজন্য চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেসের টিকিট নিয়েছিলাম। আমরা দেখলাম ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন বন্ধ। এখন স্টেশনে এসেছি। এখানে এসে দেখি কোনো ট্রেন ছাড়ছে না। আমরা যদি বাসে যাই তাহলে জনপ্রতি এক হাজার টাকা খরচ হবে। আর যদি ট্রেনে এবং লঞ্চে যাই তাহলে পড়ে ৫০০ টাকা।

তিনি বলেন, ট্রেন কর্তৃপক্ষ আমাদের টিকিট ফেরত নিতে চাইছে। এত টাকা খরচ করে আমাদের বাসে যেতে কষ্ট হবে।

নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় ছেলের বাসায় থাকেন মধ্যবয়সী আয়েশা বেগম। তিনি ছেলে, বউ ও নাতি-নাতনি নিয়ে গ্রামের বাড়ি বরিশাল যাচ্ছিলেন। আগে টিকেট কাটেননি। স্টেশনে এসে দেখেন ট্রেন চলছে না। পরে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা বিআরটিসি বাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

আয়েশা বেগম বলেন, আমার ছেলের আইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) বানানোর জন্য পরিষদে (ইউনিয়ন পরিষদ) যেতে হবে। এখন ট্রেন ছাড়ছে না। এখন বাসে করে চাঁদপুর যেতে হবে।

দুপুর সাড়ে ১২টায় মহানগর এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন হায়দার আলী। কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা হায়দার চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করেন। সাড়ে ১২টায় ট্রেন না ছাড়লেও অপেক্ষা করতে থাকেন স্টেশনে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কুমিল্লার জন্য আলাদা একটি বাসের ব্যবস্থা করে বিআরটিসি। পরে ওই বাসেই চড়েন হায়দার।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে দিনমজুরের কাজ করি। কখনো রাজমিস্ত্রির হেলপার, কখনো মাটি ভরাট, ইট টানাসহ নানান কাজ করি। কখনো কাজ থাকে না। ভাড়া কম হওয়ায় সবসময় ট্রেনে যাতায়াত করি। আজ হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় আমার মতো অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিআরটিসি বাস পাই।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে কোনো ট্রেন ছাড়েনি। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবগুলো ট্রেনের শিডিউল বাতিল করা হয়। যেসব যাত্রী কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়েছিলেন তাদের টিকিট ফেরত নেওয়া হচ্ছে।

ট্রেন বন্ধে চট্টগ্রামে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভরসা বিআরটিসি

তিনি বলেন, মেইল ট্রেনগুলোতে কম আয়ের মানুষ বেশি ছড়েন। ট্রেন না ছাড়ায় যারা টিকিট কেটেও গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তাদের মধ্যে অনেক যাত্রীকে বিআরটিসি বাসে করে গন্তব্যে পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম স্টেশনে প্রতিদিন আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল মিলে ২৭ জোড়া ট্রেন যাওয়া-আসা করে। এসব ট্রেনে প্রায় ১২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।

যেসব ট্রেন ছাড়েনি
রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে আন্তঃনগর, মেইল ও কমিউটার মিলে বেশ কয়েকটি ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। এর মধ্যে সকাল ৬টায় ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস, সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সকাল পৌনে ১০টা ঢাকাগামী কর্ণফুলী কমিউটার, দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস, বিকেল তিনটায় ঢাকাগামী মহানগর গোধুলী ছাড়েনি।

একইভাবে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, সকাল ৮টায় চাঁদপুরগামী সাগরিকা কমিউটার, ৯টা ৫০ মিনিটে কক্সবাজারগামী কক্সবাজার কমিউটার, বিকেল ৪টা ১০ মিনিট ময়মনসিংহের ভুঞাপুর স্টেশনগামী ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, সন্ধ্যা ৬টায় চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস, সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজারগামী দোহাজারী কমিউটার-১ ছাড়েনি।

পাশাপাশি মহানগর প্রভাতি ঢাকা থেকে পৌনে ৮টায় ছেড়ে বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রাম পৌঁছে ১টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও চলেনি।

অন্যদিকে সকাল ৬টা ৫ মিনিট পটিয়াগামী পটিয়া কমিউটিার-১, সকাল পৌনে ৭টায় নাজিরহাটগামী নাজিরহাট কমিউটার-১, বেলা ১১টা ২৫ মিনিট নাজিরহাট কমিউটার-৩, বিকেল সোয়া ৫টা দোহাজারীগামী দোহাজারী কমিউটার-৩ এবং সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাজিরহাট কমিউটার-৫ ছেড়ে যায়নি।

তাছাড়া রাত ৮টায় সিলেটগামী জালালাবাদ এক্সপ্রেস, রাত পৌনে ১০টায় সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস এবং রাত পৌনে ১২টায় ঢাকাগামী ঢাকা মেইল চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কর্মবিরতির কারণে ছাড়া সম্ভব হবে না।

এমডিআইএইচ/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।