ছিনতাইকারীর হাতে আর কত প্রাণ যাবে?

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ১৬ মার্চ ২০২০

সন্তানের পরীক্ষা শেষ। কথা ছিল পরীক্ষা শেষ হলে ঢাকায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সিলেট থেকে ঢাকায় বেড়াতে আসে গোলাম কিবরিয়া দম্পতি। বেশ কয়েক দিন ঢাকায় বেড়িয়ে গত ১ মার্চ সকালে সিলেট ফেরার পথেই বাঁধে বিপত্তি। ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী তারিনা বেগম লিপার (৩৮) ব্যাগ ধরে টান দেয়। এতে রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে মারা যান লিপা। শনিবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে রাজধানীর মুগদা স্টেডিয়ামের কাছে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীর হাতে এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম নয়। ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম বন্ধ করতে না পারলে এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আশার কথা হচ্ছে এ ধরনের একটি চক্রকে ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এখন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

গ্রেফতাররা হলেন- মিজুয়ান মিয়া, শেখ লিটন, আব্দুল মজিদ ও রফিক হাওলাদার। সে সময় তাদের কাছ থেকে এক রাউন্ড গুলিভর্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র, দুটি ছুরি ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেটকার এবং ভিকটিমের একটি ট্যাব ও নগদ এক হাজার সাতশ টাকা উদ্ধার করা হয়।

‘রাজধানীতে এত এত বাহিনী। বলতে গেলে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে রাজধানী। এর মধ্যেও যদি জানমালের নিরাপত্তা না থাকে সেটি খুবই দুঃখজনক। রাজধানীসহ সারাদেশেই নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ছিনতাইকারী একাধিকবার ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে আবারও ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধের শাস্তি না হলে তা কমার কোনো কারণ নেই। এজন্য অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর মুগদায় চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ে রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে তারিনা বেগম লিপা মারা যান। তারিনার ব্যাগ ছিনতাইয়ের পর ওই দিনই টয়েনবি সার্কুলার রোড ফকিরাপুল, মতিঝিল, মিরপুর টেকনিক্যাল ঘুরে সুযোগ বুঝে আরও একটি ছিনতাই করে তারা। তবে রাতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তারিনার মৃত্যুর সংবাদে গাঁঢাকা দেয় এই ছিনতাইকারী চক্র। গত শনিবার রাতে সংঘবদ্ধ চক্রটি ফের ছিনতাইয়ের জন্য বের হয়। ওঁৎ পেতে থাকা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পূর্ব বিভাগের একটি দল মিরপুর থেকে মুগদায় গিয়ে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে চারজনকে গ্রেফতার করে।

গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন। সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল বাতেন বলেন, মুগদায় ছিনতাইয়ের সময় তারিনা বেগম লিপা হত্যায় জড়িত ৪ জন ছিনতাইকারী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেটকার ব্যবহার করে রিকশাযাত্রী ও পথচারীদের ব্যাগ ছিনতাই করে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জানমালের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে সামান্যতম গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই। দুঃখজনক হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে-বাহ্যত এমন মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু বিষয়টি সে রকম নয়। কেননা খোদ রাজধানীতেই বেড়ে গেছে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য। এছাড়া দেশব্যাপী চুরি ছিনতাই এমনকি ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।

রাজধানীতে এত এত বাহিনী। বলতে গেলে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে রাজধানী। এর মধ্যেও যদি জানমালের নিরাপত্তা না থাকে সেটি খুবই দুঃখজনক। রাজধানীসহ সারাদেশেই নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ছিনতাইকারী একাধিকবার ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে আবারও ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধের শাস্তি না হলে তা কমার কোনো কারণ নেই। এজন্য অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন ঘর থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ বাইরে বের হন। তারা যেন নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে সেটি দেখতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। রাজধানীতে থানার সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সংখ্যাও। কিন্তু অপরাধ না কমে বরং বাড়ছে। এই বৈপরীত্য চলতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।