ক্লান্তিহীন যোদ্ধা শেখ হাসিনা
জনবহুল বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে এককভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রশংসিত হচ্ছেন ক্লান্তিহীন যোদ্ধা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গত মার্চ মাস থেকে নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি নিজেই লকডাউনে বন্দি তথা দুর্গত মানুষকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরাসরি তদারকি করছেন। ৬৪ জেলার ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন ৬৪ জন সচিবকে। কিছুদিন পরপর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কাজের খোঁজ-খবর নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ব্যস্ততায় সামলাচ্ছেন সবকিছু; কোনো কাজই থেমে নেই। সংক্রামক ব্যাধিকে ভয় না পেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেছেন। তাঁকে দেখে সংসদ সদস্যরাও বাজেট অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন।
২.
২৯ জুন (২০২০) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে। তাই দেশ ও জাতি একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী একই সমস্যা। তবে দেশের সব ধরনের মানুষ যাতে উপকৃত হয়, এ জন্য প্রায় এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত যখন হবে তখন ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। এছাড়া প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ কর্মসুরক্ষা ও নতুন কর্মসৃজন হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তাঁর মতে, ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিড-১৯ এর প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়ে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। একই সময় নিম্ন মূল্যস্থিতি ধরে রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি সেদিন আরও বলেছেন, ‘আমরা চারটি কৌশলগত কর্মপন্থা ঠিক করেছি। তা হচ্ছে (ক) সরকারি ব্যয়বৃদ্ধিকরণ, কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়া বিলাসী ব্যয় নিরুসাহিত করা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় পিছিয়ে দেয়া। (খ) আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন। (গ) সামাজিক সুরক্ষার আওতা বৃদ্ধিকরণ, (ঘ) বাজারে মুদ্রাসরবরাহ বৃদ্ধি করা।’
একই প্রাণস্পন্দনে ১৫ জুন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি চাই আমাদের মানুষের মধ্যে যেন একটা আস্থা থাকে, বিশ্বাস থাকে, সেই বিশ্বাস-আস্থাটা ধরে রাখতে হবে। আমরা হার মানবো না, মৃত্যু তো হবে, মৃত্যু যেকোনো সময় যেকোনো কারণে হতে পারে। কিন্তু তার জন্য ভীত হয়ে হার মানতে হবে? এ ধরনের একটা অদৃশ্য শক্তির কাছে এটাতো না। সে জন্য আমাদেরও সেভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
প্রকৃতপক্ষে এই হার না মানার প্রত্যয় গত তিন মাসে শেখ হাসিনার করোনা-কর্মপঞ্জিতে প্রকাশ পেতে দেখেছি। শুরুর দিকে মহামারি সম্পর্কে তাঁর দেয়া ৩১টি নির্দেশনা ছিল সময়োপযোগী। তাছাড়া দেশের জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। এমনকি জাতীয় দিবস কিংবা উৎসবের ভাষণে তিনি জনগণকে ব্যাধি মোকাবিলায় মনোবল শক্ত করার কথা বারবার উচ্চারণ করেছেন। এ জন্য দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নির্দেশনা মেনে চলে নিজের জীবনকে চালাবে বলার পরামর্শ আকস্মিক কিছু নয়। নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, অপরকেও সুরক্ষিত রাখা সেটাই মাথায় রাখতে হবে; তাহলেই আমরা জয়ী হতে পারব ব্যাধির কবল থেকে।
আসলে করোনাভাইরাস সারাবিশ্বকে একেবারে স্থবির করে দিয়েছে তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদাজাগ্রত কার্যধারায় দেশের মানুষ সেবা পাচ্ছে। তাঁর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, একদিকে মানুষকে সংক্রমণ থেকে বাঁচানো, আবার মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা- সেগুলো যাতে ঠিক থাকে সেদিকেও তিনি বিশেষভাবে লক্ষ রাখছেন। সরকারের তরফ থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা দেয়াসহ সব ধরনের সুযোগ দিতে হচ্ছে অসহায় মানুষকে।
মূলত গত তিন মাস ধরে করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে লড়ছে বাংলাদেশ। ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার রোধের জন্য ৩০ মে পর্যন্ত ছিল সাধারণ ছুটি। তবে এখনও সবাইকে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে। রাজধানী ঢাকা শহরের ‘রেড-জোনে’ সাধারণ ছুটি ঘোষিত হয়েছে ১৫ জুন থেকে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
৩.
ব্যাধিসৃষ্ট মহামারির কাছে প্রধানমন্ত্রীর হার না মানার প্রত্যয় বিভিন্ন কাজের মধ্যে ইতোমধ্যে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে। সংকট মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মতামতও নিয়েছেন; লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো যেন খাবার সমস্যায় না পড়ে সে জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন তিনি।অর্থাৎ কেবল পরামর্শ ও নির্দেশনা নয় বাস্তবায়নযোগ্য অনেককিছু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে। সেখানেও মহামারিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মহামারির কারণে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সরবরাহ ও চাহিদা দ্বিমুখী সংকটের সম্মুখীন। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে যে বৃহৎ অঙ্কের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যার মূল সুবিধা ভোগ করবে উৎপাদন ও সেবা খাত, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষামূলক খাতসমূহ। সংকট প্রলম্বিত হলে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী এ সময় শুধু কৃষি খাতে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দিয়েছেন। অর্থাৎ কৃষিখাত সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে মহামারি পরিস্থিতিতে।
কেবল দেশ ও জাতি নিয়ে ব্যস্ত নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বের নেতৃবৃন্দের কথাও ভেবেছেন করোনা মোকাবিলার মুহূর্তে। তিনি চীনে করোনাভাইরাসে প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করে ১৩ ফেব্রুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্টকে একটি পত্র পাঠান এবং এই সংকট কাটিয়ে উঠতে যেকোনো ধরনের সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় চীনের পাশে থাকায় দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন একই মাসে। মার্চ মাসে এক পত্রে যুক্তরাজ্যের যুবরাজ চার্লস করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে এই রোগ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করার বাংলাদেশের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা যুবরাজ চার্লসের পূর্ণ আরোগ্য এবং যুক্তরাজ্যের জনগণের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। উপরন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন। ২৮ মার্চ এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা কামনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
এভাবেই দেশ থেকে বহির্বিশ্বে শেখ হাসিনার করোনাভাইরাস মোকাবিলার ভাবনা ও প্রত্যয় প্রসারিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সঙ্গে সমন্বয় করে চলছে অদৃশ্য ব্যাধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এপ্রিল মাসকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস বিস্তারের জন্য ‘খারাপ সময়’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু ২৭ এপ্রিল তিনি বলেন, ‘আমরা এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠব। দুর্যোগ আসবে সেটি আবার চলে যাবে। আবার আলো আসবে।’ এই যে আশার কথা এখানেও তাঁর প্রত্যয় উচ্চারিত হয়েছে। এ জন্য রীতিমতো কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। রোজা ও ঈদুল ফিতরের মধ্যে যখন করোনায় মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছিল তখন ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ছোবলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। করোনা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মে মাস জুড়ে প্রধানমন্ত্রী ক্লান্তহীন সময় অতিক্রম করেছেন।
৪.
অর্থনৈতিক কাজ সচল রাখার জন্য লকডাউন তুলে দেন শেখ হাসিনা। আসলে পুরোপুরি কঠোর লকডাউন এদেশে কখনো বজায় রাখা যায়নি। ২৫ মে ঈদের পর মানুষ কাজের জন্য শহরমুখী হয়। আর কল-কারাখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেও দেয়া হতে থাকে। মূলত সরকারের লকডাউনসহ বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপের কারণেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং এতে মৃত্যুর হার কিছুটা হলেও বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ৩১ মে বলেছেন, সকলে যদি স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলেন তাহলে নিজেকে, পরিবারকে, পাড়া প্রতিবেশীকেও আপনারা সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। যাতে এই ভাইরাসটি আর বেশি করে সংক্রমিত হতে না পারে। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি খালি চোখে দেখা না গেলেও এর এমন একটা শক্তি যে, সারাবিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থনীতির চাকাসহ সবকিছু স্থবির করে দিয়েছে এবং সেই রকম একটা পরিস্থিতিতে আমাদের চলতে হচ্ছে। তবে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনকার মতো সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেই আমরা যেকোনো আপৎকালীন অবস্থা থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটাব এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশব্যাপী বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের দুই মাসের সুদ মওকুফ করতে সরকারের পক্ষ থেকে দুই হাজার কোটি টাকার নতুন আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমি এ পর্যন্ত ১৮টি প্যাকেজ দিয়েছি। আর এটা নিয়ে হলো ১৯টি প্যাকেজ। যেহেতু নতুন প্যাকেজে গৃহীত ঋণের দুই মাসের সুদ স্থগিত করা হয়েছে, যে সুদের পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। সেই স্থগিত সুদের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। ফলে আনুপাতিক হারে ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের আর তা পরিশোধ করতে হবে না। ইতঃপূর্বে ঘোষিত প্যাকেজসমূহে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। যেটা আমাদের জিডিপি’র ৩ দশমিক ৭ ভাগ।
২ জুন তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন ছুটির পর ৩১ মে থেকে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্যই বাংলাদেশে শর্ত শিথিল করা হয়েছে। যারা দিন আনে দিন খায়, মধ্যবিত্ত, সকলের জীবনযাত্রা যেন সচল রাখতে পারে সে জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।৩ জুন ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে ‘ফাইটিং সাইক্লোনস অ্যান্ড করোনাভাইরাস : হাউ উই এভাকুয়েটেড ডিউরিং আ প্যানডেমিক’ শিরোনামে এক নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ সুপার-সাইক্লোন ‘আম্ফান’ এবং কোভিড-১৯-এর মতো দুটি বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আমরা অন্যদের একই রকম বিপদ মোকাুবলায় পাঠ দিতে পারি।’
১০ জুন সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য সবকিছু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একদিকে যেমন করোনা মোকাবিলা করব, পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন যাতে চলতে পারে, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য করণীয় সব করব।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি মৃত্যুকে কখনো ভয় পাইনি, পাবও না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন। একদিন সেই জীবন নিয়েও যাবেন। মানুষকে কিছু দায়িত্ব, কিছু কাজ দিয়ে পাঠিয়েছে আল্লাহ। সেই কাজটুকু করতে হবে। আল্লাহর লিখিত যে দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়েছে, যতক্ষণ এই কাজটুকু শেষ না হবে, ততক্ষণ কাজ করে যাব। কাজ শেষে আমিও চলে যাব। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমি এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। জীবনটা বাংলার মানুষরে জন্য বলিয়ে দিত এসেছি। সুতরাং, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
৫.
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্ভীক চেতনার সঙ্গে আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে ব্যাধি জয় করার প্রত্যয়। করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক মাস ধরে বিপর্যয়ের পরও ১১ জুন উপস্থাপিত বাজেটের আকার কমেনি, বরং বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতির সুফল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার ওই বাজেট। করোনা মহামারি থেকে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার গতিপথ নির্ণয়ে প্রণীত এবারের বাজেট। জীবন-জীবিকার ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সাহসী চিন্তার ফসল এবারের বাজেট। এবারের বাজেট করোনায় বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর ইতোমধ্যে যে অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তাকেও একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট বলা যেতে পারে। ১৯টি প্যাকেজের কথা আগেই বলা হয়েছে।
হার না মানার প্রত্যয়ে জয়ী হওয়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত এখন দেশবাসী। আর সংক্রমণ ব্যাধির ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবকিছুতেই কঠোর নজরদারি তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম কাজ। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন তিনি বেশি ব্যস্ত। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতাদের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গেও। ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভিডিওকলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। অতি জরুরি মনে হলে মিটিং-কনফারেন্স করছেন গণভবনে। প্রতিদিন সকাল থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেশের সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন। অন্যদিকে মানুষের জীবিকা রক্ষার জন্য লকডাউন শিথিল করায় অর্থনীতির চাকা এখন কিছুটা গতিশীল হয়ে উঠেছে।
৬.
প্রশংসাসূচক মন্তব্যের মুখাপেক্ষী হয়ে কখনও কাজ করেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় তাঁর রয়েছে অনেক সাফল্য। যেমন ‘মুজিববর্ষে’ করোনাভাইরাসের মহামারি কবলিত তাঁর জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য নিরন্তর চেষ্টা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে অভিনন্দিত হচ্ছে। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এ জন্য মে মাসে প্রকাশিত দি ইকোনমিস্টের গবেষণামূলক এক প্রতিবেদনে উদীয়মান সফল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর লকডাউনের মধ্যেও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, ২০২০-এ বাংলাদেশের অর্থনীতি দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম।
অন্যদিকে বৈশ্বিক মহামারিতে আক্রান্তের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ১.২৬ শতাংশ যা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম।বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২২ এপ্রিল সংখ্যায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়েছে। তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬ কোটির বেশি মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানে দুর্যোগ কোনো নতুন ঘটনা নয়। আর এই করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রধানমন্ত্রীর ত্বরিত সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছে, বিষয়টি বেশ ‘প্রশংসনীয়’। তবে এ কথা সত্য দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় প্রশংসা পাওয়ার জন্য নয় বরং দায়বদ্ধতা ও মানবিক কারণেই জনগণের সেবায় নিবেদিত ক্লান্তিহীন যোদ্ধা শেখ হাসিনা।
লেখক : বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম; নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected])
এইচআর/বিএ/পিআর