বাঁচতে হলে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে

বিশ্বব্যাপী চলছে করোনা মহামারি কাল। ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে ছোঁয়াচে, প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রমণে। বাংলাদেশও এই সংকটের বাইরে নয়। শুধু তাই নয় প্রাকৃতিক নানা দৈব-দুর্বিপাকে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে অকাতরে। এরমধ্যে বজ্রপাতে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি মোকাবেলার সহজ কোনো পন্থা নেই। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মসূচির মাধ্যমে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
এবার ফেনীর সোনাগাজীতে বজ্রপাতে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৮ জুলাই) সকালে উপজেলার বাগাদানা ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছে- ওই গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে শাকিব (১২) ও একই গ্রামের মো. গোফরানের ছেলে ইমরান (১২)। শাকিব স্থানীয় ওসমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আর ইমরান ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় মোবারক আলী মাঝি বাড়ির বাগানে শাকিব, ইমরান ও নাহিদসহ (১১) কয়েকজন শিশু মিলে খেলাধুলা করছিল। এ সময় বজ্রপাতে তিনজন গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাকিব ও ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন। নাহিদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিরূপ পরিস্থিতিতে বজ্রপাত বাড়ছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক অবস্থা বায়ুমণ্ডলে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আর বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে জনসচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে করণীয় বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তি করে ছোটবেলা থেকেই সচেতনতা বাড়াতে হবে। বজ্রপাত থেকে রক্ষার বিভিন্ন উপায় আরও বেশি করে প্রচার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য বেশকিছু উপায়ের কথা বলছেন। এরমধ্যে রয়েছে- ১. দালান বা পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নেয়া, ২. উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকা, ৩. জানালা থেকে দূরে থাকা, ৪. ধাতব বস্তু স্পর্শ না করা, ৫. বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র থেকে সাবধান থাকা, ৬. গাড়ির ভেতর থাকলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া, ৭. খোলা ও উঁচু জায়গা থেকে সাবধান থাকা, ৮. পানি থেকে দূরে থাকা ৯. পরস্পর দূরে থাকা, ১০. নিচু হয়ে বসে পড়া, ১১. বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ জানা, ১২. রবারের বুট পরা এবং ১৩. বাড়ি সুরক্ষিত রাখা।
বজ্রপাতে আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে এ সময় বজ্রাহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখুন। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে প্রকৃতির ওপর অত্যাচারও বন্ধ করতে হবে। গাছপালা লাগিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখাটাও জরুরি।
এইচআর/পিআর