লাইনচ্যুত অনলাইন!

তুষার আবদুল্লাহ তুষার আবদুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৯:৫১ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

মন খারাপ হয়েছিল যখন হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন নিবন্ধিত ৯২টি ছাড়া সব ওয়েব পোর্টাল সাতদিনের মধ্যে বন্ধ করে দিতে। কতো সহকর্মী কাজ হারাবে এ শঙ্কায় বুক কেঁপে উঠেছিল। এমনিতেই করোনাকালে নানা ছুঁতোয় গণমাধ্যমে নীরবে ছাঁটাই অভিযান চালিয়েছে ব্যবসাসফল গণমাধ্যমও।

নিবন্ধন নেই স্বল্প বিনিয়োগের অনলাইন পত্রিকাও লোক কমিয়েছে। সারাদেশে কতো অনলাইন পোর্টাল আছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ২ হাজার ১৮টি অনলাইন পোর্টালের আবেদন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে জমা আছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়। শহর গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে আছে, এমন সব অনলাইন পোর্টাল, রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেছে, এমন বলা যাবে না। কোন কোন অনলাইন ওয়েব পোর্টাল আইপি টিভির রূপ ধারণ করারও চেষ্টা করছে।

মন খারাপের কারণ হলো নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত দুই প্রকারের অনলাইন পোর্টালের অধিকাংশই চলছে অপেশাদার আচরণে। এখানে একে অপরের তথ্য, ছবি ব্যবহার করছে বিনা অনুমতিতে। যাকে বলা যায় এক ওয়েব পোর্টাল থেকে কাট করে এনে পেস্ট করে দেওয়া হচ্ছে আরেক পোর্টালে। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুল তথ্য বা খবর এভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে, যা রাষ্ট্র ও সমাজে প্রভাব ফেলছে নেতিবাচক। এ কাজটি স্বল্প বিনিয়োগের বা অল্প পরিচিতরাই যে করছে এমন নয়। পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত ওয়েব পোর্টালও এই কাজটি করছে।

বাংলাদেশের প্রথম নিউজ ওয়েব পোর্টালের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ২০০৪ সালে । তখন ওয়েব পোর্টালের যে স্বাদ পাওয়া গিয়েছিল, তা এখল অনেকটাই বিস্বাদে রূপ নিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ওয়েব পোর্টাল তৈরিতে বিনিয়োগ, পেশাদার সাংবাদিকদের নিয়োগ, সন্তোষজনক বেতন কাঠামো এবং পেশাদারির নজির পরবর্তীতে হাতেগোনা দু-একটি ওয়েব পোর্টাল অনুসরণ করার চেষ্টা করেছে। বাকি ওয়েব পোর্টালগুলো সেটা অনুসরণ না করতে পারার বড় কারণ হচ্ছে, বেশির ভাগ ওয়েব পোর্টালের জন্ম হয়েছে ব্যক্তিনির্ভর। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও শক্তি নিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটেনি।

স্বাদ কমে যাওয়া বা মানের অবনমনের মূল কারণ হলো দুষ্টু প্রতিযোগিতা। মিথ্যা স্পর্শকাতরতা তৈরি করে, যৌন সুড়সুড়ি দিয়ে পাঠক আটকানো। লাইক, ভিউ বাড়ানো। এই প্রতিযোগিতায় নেমে ওয়েব পোর্টালগুলো হারিয়েছে বস্তুনিষ্ঠতা। পাঠক এখন কোনো একটি ওয়েব পোর্টাল দেখেই কোন খবর বা তথ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। তাকে একাধিক ওয়েব পোর্টাল ঘুরে একটি সিদ্ধান্তে বা বিশ্বাসে পৌঁছাতে হচ্ছে।

মন খারাপের আরও কারণ হচ্ছে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে এখন সাংবাদিকতায় আসছে এই ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে। কিন্তু এখানে এসে তারা কাজ শিখতে পারছে না। তারা সাংবাদিকতার প্রথম তালিম বা হাতেখড়িটিই নিচ্ছে কাট পেস্টের মাধ্যমে।

টেলিভিশন ও পত্রিকার ওয়েব পোর্টাল সংক্ষরণও অবহেলিত এবং এখনও নীরিক্ষার মধ্যে রয়েছে। বিনিয়োগ নিয়েও দোলাচলে আছে অনেকে। একে অন্যের দেখাদেখি ওয়েব সংস্করণ খুললেও, সেরা কর্মীদের ওয়েব পোর্টালে পাঠাচ্ছেন না। এক প্রকার ডাম্পিং বা রিসাইকেল বিন বলা যেতে পারে ওয়েব পোর্টাল বা সোশ্যাল মিডিয়াকে। ফলে এখানে নতুনরা এসে সঙ্গত কারণেই কাজ শিখতে পারছে না। পুরোনোরা ডুবে আছে হতাশা এবং অনিশ্চয়তায়।

কিন্তু আমি দেখছি আমাদের তরুণদের মধ্যে সোশ্যাল বা নিউ মিডিয়ায় কাজ করার যোগ্যতা আছে, আছে অফুরান ভাবনা ও গতি। কিন্তু অভাব দক্ষ কোচের। দক্ষ কোচ বা স্বপ্নদ্রষ্টা না থাকার কারণেই, আমরা আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক পর্যায়েও বিষয় ভাবনা বা কনটেন্ট এর দিক থেকে পিছিয়ে আছি। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিনিয়োগ ও পেশাদারির মিশ্রণ ঘটতে হবে। তবেই এ খাতে দক্ষ জনবল ও চাকরির নিশ্চয়তা দৃঢ় হবে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট।

এইচআর/এমএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।