ধর্ম

পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা রাখার বিষয়ে ইসলামি শিক্ষা

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২

ইসলাম এমন এক পরিপূর্ণ ধর্ম যেখানে ছোট থেকে ছোট বিষয় সম্পর্কেও আলোকপাত করা আছে এবং সব বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম শুধু বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার কথা বলে না, বরং অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার শিক্ষাও দেয়। যিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পবিত্রতা অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করেন, মহান আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা লাভে সচেষ্টদেরও ভালোবাসেন’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২২২)।

মানুষ আল্লাহতায়ালার প্রকৃত প্রেমিক তখনই হয়, যখন তওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজের বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার প্রতিও দৃষ্টি দেয়। ঈমানের দাবি করার পর নিজেদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেকের কর্তব্য, যাতে আমাদের আত্মা ও দেহ একযোগে আল্লাহতায়ালার প্রেম ভালোবাসা আকৃষ্ট করতে পারে।
মহানবি (সা.) নিজে যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতেন, তেমনি সবাইকে তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নসীহত করতেন। হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘আত্তুহুরু শাতরুল ঈমান’ অর্থাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অবলম্বন করা ঈমানের অঙ্গ (মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, বাব ফাযলু ওয়াযু)।

বিজ্ঞাপন

অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু মালিক আশ’আরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল করিম (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা হচ্ছে ঈমানের অর্ধেক’ (আল মু’জিমুল কাবীর, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮৩)।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগী হওয়া যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা উল্লিখিত হাদিস থেকে স্পষ্টরূপে বোঝা যায়। শুধু নিজকে পরিষ্কার রাখলেই চলবে না, বরং চারপাশের পরিবেশকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আমরা অনেকেই এমন আছি, যারা নিজের ঘরকে ঠিকই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন, কিন্তু বাইরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি দৃষ্টি রাখি না। এটা মোটেও উচিত নয়। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখাও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা আমরা নিজেদের ঘর পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেই। কেননা ময়লা-আবর্জনার কারণে বাইরের পরিবেশ নোংরা হলে এর প্রভাব পুরো পরিবেশেই পড়ে আর এর ফলে রোগ-বালাই দেখা দেয়।
আমাদের দেশে শিশুরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছে। এর একটি কারণ হলো নোংরা পরিবেশ। রাস্তাঘাটে চলার পথে আমরা দেখতে পাই ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান থাকা সত্ত্বেও আমরা তা সেখানে না ফেলে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ নোংরা করি আর এর ফলে আপনার, আমার সবার ক্ষতি হচ্ছে। শুধু নিজের ঘর আর নিজকে পরিষ্কার রাখলেই চলবে না, বরং পুরো পরিবেশের চিন্তা করতে হবে। আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা আপনার, আমার, সবার কর্তব্য। মনে রাখতে হবে, রাস্তা-ঘাট ও সার্বিক পরিবেশ আমাকেই পরিষ্কার রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

হাদিস পাঠে আমরা জানতে পারি, রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে হজরত রাসূল করিম (সা.) খুবই সচেতন ছিলেন। রাস্তাঘাটে যদি কাঁটাবিশিষ্ট ছোট বৃক্ষ অথবা পাথর বা নোংরা কোনো কিছু থাকতো, তাহলে মহানবি (সা.) নিজে তা উঠিয়ে এক পাশে রেখে দিতেন এবং বলতেন যে, ‘চলার পথের পরিচ্ছন্নতার প্রতি যে ব্যক্তি যত্নবান হয়, খোদা তায়ালা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তাকে সওয়াব দান করেন’ (মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাতি)।

এছাড়া রাস্তার ওপর বসে তাতে পথচারীর চলাফেরায় কষ্ট সৃষ্টি করা তিনি (সা.) খুবই অপছন্দ করতেন এবং রাস্তায় এমন কোনো বস্তু ফেলে রাখা, যার ফলে মুসাফিরের কষ্ট হয় অথবা রাস্তায় মলমূত্র ত্যাগ করা প্রভৃতি খোদা তা’লার নিকট অপছন্দনীয় বিষয় বলেও মহানবি (সা.) বর্ণনা করেছেন। চলার পথে আমরা একটি বিষয় প্রায়ই লক্ষ্য করি, কারও কারও মাঝে এই বদ অভ্যাস দেখা যায় যে, পথে বা ফুটপাতে তারা বার বার থু থু ফেলে, যা বড়ই দৃষ্টিকটূ। থুথু ফেলার প্রয়োজন যদি হয়, তবে এমন ব্যক্তিদের উচিত, রাস্তার এক পাশে আলাদা হয়ে গিয়ে এমন স্থানে থু থু ফেলা যেখানে কারও দৃষ্টিতে না পড়ে।

আপনি বা আমি গ্রামে বা শহরে যেখানেই থাকি না কেন, সবার এটি নৈতিক দায়িত্ব, নিজ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। কারণ, আমাদের সন্তানকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখি আর আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করি।

এইচআরফারুক/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।