যদ্যপি আমাদের গুরু

মেজর ফরিদ আহমেদ ভুঞা স্মরণে

একদিকে বসন্তের বাতাস। অন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জ্ঞানচর্চা ও পাণ্ডিত্যের ‘লিজেন্ড’ এবং সামরিক সার্কেলে ‘গুরু’ হিসেবে সুপরিচিত মেজর ফরিদ আহমেদ ভুঞার চির বিদায়ের বিহ্বল বিউগল। এবার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বসন্ত নেমেছে ঢাকা সেনানিবাসের কুর্মিটোলা গল্ফ ক্লাব এলাকায়। এটি যেন ঢাকায় একখণ্ড নয়নাভিরাম সুইজারল্যান্ড।... ঢেউ খেলানো সবুজাভ প্রান্তর। কোথাও স্নিগ্ধ সরোবরে মায়াবী পাখিদের ওড়াউড়ি। কোকিলের ডাক। কোনখানে বৃক্ষ লতায় লাল-বেগুনি রঙের ফুলের অনুপম উচ্ছ্বাস।

গল্ফ কোর্সের ঠিক দক্ষিণের দেওয়াল ঘেঁষা (বনানী ডিওএইচএস) সাদা রঙের ‘শাল্মলি’ নামাঙ্কিত বাড়িটিতে থাকতেন মেজর ফরিদ। তার ছয়তলার ফ্ল্যাটটি থেকে গল্ফ কোর্সের অসাধারণ দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। এটি জ্ঞানচর্চা, লেখালেখি ও আড্ডার অসাধারণ একটি স্থান বটে। পুরো ফ্ল্যাটটিই নানান রকম বই পুস্তকে ঠাসা। তবে ফরিদ আহমেদের জীবনসঙ্গী বা বন্ধুরূপে কোন প্রিয়দর্শিনীর কলহাস্য এখানে কোনোদিন শোনা যায়নি।

এমন দারুণ বসন্তেই, গত ৫ মার্চ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন অসাধারণ পন্ডিত, আলোকিত মানুষ ও সেনাবাহিনীর ‘জীবন্ত জ্ঞান কোষ’ মেজর ফরিদ। তাঁর জীবন উৎসর্গিত ছিল জ্ঞানচর্চা ও মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করায়। ফরিদ আহমেদ যেন ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক’। তাঁর লেখালেখি কম, কিন্তু আড্ডা, আলাপচারিতা ও ব্যক্তিগত মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর অন্তত দুই প্রজন্মের সেনা কর্মকর্তা ও বিদ্যোৎসাহীদের জ্ঞানচর্চায় অনুপ্রাণিত, উদ্বুদ্ব ও উৎসাহিত করেছেন।

অসাধারণ মানবিক গুণসম্পন্ন মেজর ফরিদ নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। মৃত্যুকালে মেজর ফরিদের বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৮ বছর। মেজর ফরিদের মৃত্যুর পর, তাঁর পরিচিত মানুষের মাঝে বিশেষত, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমেছে। তাঁকে শ্রদ্ধা-স্মরণে ভাসছিল সোশ্যাল মিডিয়া। ‘শাল্মলি’ বাড়িটির চারপাশে এখন শুধুই পাতা ঝরার ক্রন্দন।

বিশেষত ফেসবুকে প্রিয়জন, বন্ধু, সহকর্মী, সামরিক কর্মকর্তা, শুভ্যানুধায়ীরা মেজর ফরিদকে বিভিন্ন অভিধায় অভিষিক্ত করেছেন। ফেসবুকের কল্যাণে এই জ্ঞানী ও মানবতাবাদী মানুষটির যাপিত জীবনের অবয়ব বিশেষত জ্ঞান অণ্বেষী অসাধারণ যাত্রা পথ প্রস্ফুটিত হয়েছে।

বিএসএস-১২৯২ মেজর ফরিদ আহমেদ ভুঞা ১৯৫৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর নেত্রকোনার বারহাট্রায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তরুণ ফরিদ, জুন ১৯৭৫ এ কুমিল্লাস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ৬ ডিসেম্বর ১৯৭৫ এ ২য় শর্ট সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি-২) সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি সেকেন্ড লে. হিসেবে ২৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন।

তরুণ অফিসার হিসেবে ফরিদ আহমেদ দুটি পদাতিক ইউনিটে অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ রেজিমেন্টাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর তিনি রংপুর স্টেশন সদর দপ্তরে স্টাফ অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ থেকে ২০০৩ সালে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় তিনি গোয়েন্দা সংস্থায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০০-২০০১ এ ইরাক-কুয়েত অঞ্চলে (ইউনিকম) জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করেছিলেন।

চাকরির একপর্যায়ে স্থূলতার কারণে তিনি নিম্ন মেডিকেল ক্যাটাগরিভুক্ত হয়ে পড়েন ফলে পরবর্তী পদোন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। কিন্তু এসব নিয়ে তার কোনো খেদ, আক্ষেপ ছিল না। চিরকুমার মেজর ফরিদের পৃথিবীতে কোনো চাহিদা ছিল না। একমাত্র চাহিদা ছিল জ্ঞান অর্জন ও মানুষের উপকার করা।

মেজর ফরিদ স্যারের সঙ্গে পরিচিত হওয়া আমার সামরিক জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহের একটি। ১৯৯৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঢাকায় অবস্থানকালীন সময়টুকুতে অন্তত সপ্তাহে একটিবার সাক্ষাৎ করেছি ও তাঁর বিখ্যাত ‘আড্ডায়’ অংশ নিয়েছি। আমার সামান্য লেখালেখি ও পড়াশোনার উৎসাহের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আমার মেন্টর। তাঁর মতো এত বড় মাপের মানুষের সান্নিধ্য ও স্নেহ প্রাপ্তিতে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। অনেকের কাছে তিনি ছিলেন একজন ‘ফ্রেন্ড, ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড’। রীতিমতো স্পিরিচুয়াল গাইডও ছিলেন কারও কারও কাছে।

মেজর ফরিদের সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় ছিল, বিচিত্র বিষয়ের ওপর পড়াশোনা ও অগাধ জ্ঞান। তাঁর আগ্রহ ছিল বহুমুখী ও দিগন্ত প্রসারীঃ সামরিক কৌশল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, দর্শন, চিত্রকলা, মিথলোজি, সুফিবাদ, আর্ট ফিল্ম, পোস্ট মর্ডানিজম, সাহিত্য, ধর্মবিদ্যা...। তার বই পড়া ও খাদ্যপ্রিয়তার বহু গল্প ও মিথ আছে।

লাল রঙের ঐতিহ্যবাহী আর্মি হেডকোয়ার্টার্স অফিসার মেসের তাঁর বিখ্যাত ৬ নম্বর রুমে হাস্যমুখর সান্ধ্যকালীন আড্ডা ছিল অসম্ভব আনন্দঘন। এই চলন্ত বিশ্বকোষ, কখনো কখনো ইতিহাসের ঘটনা বর্ণনাকালে কণ্ঠের তারতম্য ঘটিয়ে নাটকীয়ভাবে কথা বলতেন, যা ছিল খুবই মজার। কখনো জেনারেল এমএজি ওসমানীসহ মুক্তিযুদ্ধের সেনানায়কদের বীরত্ব গাথার গল্প, কখনো এক্সারসাইজ আয়রন শিল্ড এর কথা, সেখান থেকে আবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলোয়’ বর্ণিত…গঙ্গার তীরে মোরান সাহেবের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার প্রিয় বৌঠান কাদম্বরী দেবীর আলাপচারিতা।

হয়তো সেখান থেকে ২য় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান হেডকোয়ার্টারে ফিল্ড মার্শাল রোমেলের সঙ্গে দুর্ধর্ষ হিটলারের কথোপকথন। কখনো নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণকালে মস্কোর পতনের সময় রাজা জার আলেকজান্ডারের সঙ্গে প্রধান সেনাপতি জেনারেল কুতুজভের আলাপচারিতা। তার জ্ঞানগর্ভ দীর্ঘ আলোচনায়ও কখনই বিরক্তিকর মনে হতো না। কারণ মেজর ফরিদের রসবোধ ছিল অসাধারণ।

মুক্তিযুদ্ধের কথা যখন বলতেন, মনে হতো ইন্দিরা গান্ধী আর ভারতের সেনাপ্রধান স্যাম মানেকশের আলাপকালে মেজর ফরিদ উপস্থিত ছিলেন। কখনো বলতেন মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাধারণ সাহসিকতাপূর্ণ নেতৃত্বের কথা। প্রাচীনকালের চীনা জেনারেল সান জুর গল্প বলার সময়ে মনে হতো আড্ডায় উপস্থিত আমরাও চীনা রাজপ্রাসাদে দিব্যি বেড়াচ্ছি।

কখনো ক্ষ্যাপাটে চিত্রশিল্পী ভ্যান গঘের ‘সানফ্লাওয়ারের’ গল্প বলতে বিখ্যাত ‘মাস্টারদের’ আর্ট গ্যালারি ঘুরিয়ে আনতেন। কোনো একদিন হয়তো জোহান স্ট্রসের ‘দি ব্লু দানিয়ুব’র গল্প। কখনো জ্যাক দারিদা-মিশেল ফুকো-নোয়াম চমস্কির দর্শনের কঠিন আলোচনা। তার সঙ্গে গল্প করা মানেই বিশ্ব মনোভ্রমণ...। আড্ডার অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো চা, কফি, জিলাপি, মুড়ি ও বিরানিসহ অন্য খাদ্যের প্রায় বিরতিহীন সরবরাহ।

আড্ডার বিষয়ে কবি বুদ্ধদেব বসু একদা লিখেছেন- ‘আড্ডা দিতে গিয়ে প্রায়ই আমরা…পড়া-বিদ্যার আসর জমাই আর নয়তো পরচর্চার চন্ডীমণ্ডপ গড়ে তুলি’। তবে মেজর ফরিদের আড্ডায় এর কোনোটিই হতো না। এই চির কুমারের আড্ডা স্বভাবতই ছিল নারী বিবর্জিত। সুরাও নিষিদ্ধ। তবুও কত প্রাণময়, বিনোদনমুখর ও জ্ঞান-অন্বেষী।

তবে ছিল প্রচণ্ড খাদ্য-সম্ভারময়। তাঁর বেতনের বড় অংশই খরচ হতো সম্ভবত আড্ডাবাজ শিষ্য-আপ্যায়নে...। অসামরিক পরিমণ্ডলেরও অনেক অধ্যাপক, লেখক, কবি, সাংবাদিক, যারা মেজর ফরিদের সান্নিধ্যে এসেছেন, তারাও মুগ্ধ হয়েছেন তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও ব্যক্তিত্বে। ফরিদ আহমেদকে অনেক সময় প্রাচীনকালের দার্শনিকদের মতো মনে হতো। যারা আলাপচারিতার মাধ্যমে জ্ঞান বিতরণ করতেন।

১৯৮৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত, দীর্ঘ সময়ব্যাপী মেজর ফরিদ গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছেন। গোয়েন্দা বা ইনটেলিজেন্স অফিসারদের সঙ্গে অনেকে সতর্ক হয়ে কথা বলেন। জার্মান সেনাবাহিনীতে মজা করে বলা হয় ‘গোয়েন্দাদের স্ত্রীরাও লুকিয়ে নোট বই বহন করে’! অথচ সেনা সদরদপ্তরের অফিসার মেসের তাঁর রুমেই রাতে নিয়মিত আড্ডা বসতো।

তিনি কখনো আড্ডায় ‘মজলিসি’ ঢঙের কথাবার্তা, অসতর্কভাবে চর্চিত শব্দাবলি, আলোচনা ও বক্তব্য কখনো ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনে’ শামিল করেননি। একইভাবে প্রফেশনাল গোয়েন্দা মেজর ফরিদ কখনই ‘মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের’ স্পর্শকাতর বিষয়গুলো আড্ডায় শেয়ার করতেন না। এটাই ছিল তার পেশাগত সততা। তাই গোয়েন্দা হলেও তার সাথে মন খুলে কথা বলা যেত।

তাঁর কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা ও কথোপকথনে আশ্চর্যরকম পরিমিতবোধ ও ব্যালান্স ছিল। তিনি প্রশ্ন করতে শেখাতেন। কিন্তু সব সময় মনে রাখতেন যে এটা সেনাবাহিনী। কখনো হয়তো ‘একাডেমিক ডিসকার্শন’ হিসেবে সমাজ, রাষ্ট্র, সেনাবাহিনীর অসঙ্গতি, ভুলত্রুটি, সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতেন। কিন্তু সে আলোচনায় কখনও উগ্রপন্থা, চরমপন্থা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা বা অপেশাদার মনোভাব উসকে দিতেন না। ধর্মপ্রাণ, উদার ও অত্যন্ত আধুনিক চিন্তার মানুষটি কখনো কোন দলীয় বৃত্তে বা সংগঠনে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেননি। যে কোনো বিষয় তিনি আশ্চর্যরকম নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে মূল্যায়ন বা বিচার করতে পারতেন।

মেজর ফরিদ স্যারের বিখ্যাত ৬ নম্বর কক্ষে, মাঝে মধ্যে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা-লেখক-গবেষক মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার সঙ্গে আমার দেখা হতো। তিনি ফরিদ স্যারেরও এক কোর্স সিনিয়র ছিলেন। তারা একে অন্যকে গুরু বলে সম্মোধন করতেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখা ও গবেষণাকে কামরুল হাসান উচ্চস্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বয়ানের মধ্যে তাঁর ‘জনযুদ্ধের’ বিষয়টি (মুক্তিযুদ্ধের সাবল্টার্ন ইতিহাস) তিনি চমৎকারভাবে সামনে এনেছেন।

মেজর ফরিদ আহমেদ ভুঞা স্মরণে

একই সঙ্গে দুই ‘লিজেন্ডকে‘ দেখা আমার জন্য একটি অনুপ্রেরণাময় ঘটনা বটে। মেজর কামরুল স্যার ছিলেন আশ্চর্যরকম একজন মানুষ। তিনি মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া সাধারণত অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতেন না। তবে কামরুল স্যার এলে তার কথাবার্তার আবেগ, তেজ ও যুক্তির তীব্রতায় কক্ষের তাপমাত্রা বেড়ে যেত। ‘দুই ভূইঞার’ উন্নততর খাবারের আয়োজনে ব্যাটম্যান ও মেস ওয়েটারদের প্রায় নাভিশ্বাস উঠতো!

মেজর ফরিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেন ও একই বিভাগ থেকে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। বিচিত্র বিষয়ে জ্ঞান-অন্বেষী ফরিদ আহমেদ ‘নন ওয়েস্টার্ন স্ট্রাটেজিক থিংকিং অ্যান্ড ফিলোসপি’ বা ‘অপশ্চিমা কৌশলগত চিন্তাভাবনা ও দর্শন’র ওপর পড়াশোনা ও গবেষণায় বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। প্রাচীন চীনের বিখ্যাত সেনাপতি, সমর কৌশলবিদ, দার্শনিক সান জু এর সমর কৌশল, চিন্তাভাবনা ও দর্শনের ওপর তিনি এমফিল করেন।

এই অসাধারণ গবেষণা কর্মটি পরে ‘টেকনোলজি, মোরালিটি অ্যান্ড ওয়ার: সান জু অ্যান্ড মর্ডান স্ট্রাটেজিক থিংকিং’ শিরোনামে ই-বুক আকারে প্রকাশিত হয়। এটি ইউপিএল ২০১৭ সালে প্রকাশ করে। এমফিলে মেজর ফরিদের সুপারভাইজার ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। যতদূর জানা যায়, সান জুর ওপর বাংলাদেশে এটাই ছিল প্রথম একাডেমিক গবেষণাকর্ম।

মেজর ফরিদ পিএইচডি করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। চীনের সমর কৌশলবিদ ও দার্শনিক সান জু (আর্ট অব ওয়ার) ও প্রাচীন ভারতের দার্শনিক, কূটকৌশলী রাজনৈতিক গুরু কৌটিল্য বা চানক্যের (অর্থশাস্ত্র) চিন্তাভাবনা, দর্শনের সঙ্গে জার্মানির সামরিক তাত্ত্বিক মেজর জেনারেল কার্ল ভন ক্লসউইজটের (অন ওয়ার) তুলনামূলক আলোচনা ছিল তার পিএইচডির বিষয়। তবে দুঃখজনকভাবে বিভিন্ন কারণে তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করতে পারেননি।

প্রতিভাবান মেজর ফরিদের লেখালেখি বা পাবলিকেশনের সংখ্যা বেশ কম। অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ও ফরিদ আহমেদ ভূঞা যুগ্মভাবে লিখেছেন ‘স্পল আর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ ইন বাংলাদেশ, দি প্লাইট অব দি ভিকটিম’। এটি মনোগ্রাফ হিসেবে সেন্টার ফর অলটারনেটিভ থেকে ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়। প্রায় একই সময়ে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ও মেজর ফরিদ আহমেদ ভুঞা যুগ্মভাবে আরও লিখেছেন- ‘উইপনস টেকনোলজি অ্যান্ড রিকনসেপচুয়েলাইজেশন অব টেরোরিজম’।

এটি ড. ইমতিয়াজ আহমেদ সম্পাদিত- ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং টেরোরিজম ইন সাউথ এশিয়াঃ বিয়ন্ড স্টেটিস্ট ডিসকোর্সেস’ বই এ অন্তর্ভুক্ত হয়। (রিজিওনাল সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিস’, কলম্বো এর পক্ষ থেকে মনোহার পাবলিসার্শ, নিউ দিল্লি থেকে ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়)।

এছাড়াও সেনানী, সেনাবার্তাসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ম্যাগাজিনেও তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন। শেষ দিকে তিনি কবিতাও লিখতেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায় নিরাপত্তার বিষয়ে তার বেশ কিছু প্রবন্ধ রয়েছে, যা কখনো আলোর মুখ দেখেনি।

মেজর ফরিদের মধ্যে জানার এবং বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করার পিপাসা কাজ করতো। মেজর ফরিদ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দর্শন ও গবেষণা অ্যাপ্রোচের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিলেন। দুর্বোধ্য বিষয়েও বিশেষত উত্তরাধুনিক দর্শন (বিশেষত মিশেল ফুকো ও জ্যাক দারিদা) আগ্রহ নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। বড় মাপের স্কলারের লেখা শুধু তাকে মুগ্ধ করতো না, তিনি এগুলো দখলে এনে আরও দূর এগোতে চাইতেন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এরকম সাহস ও প্রবণতা প্রয়োজন।

২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে যান মেজর ফরিদ। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম আলোচিত ফরাসি দার্শনিক জ্যাক দারিদার সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি চেষ্টা করেন। জ্যাক দারিদা ঠিক সেই সময় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে তার সঙ্গে দেখা হয়নি। তবে তার সঙ্গে দেখা হয় বর্তমানে সময়ের আরেকজন আলোচিত বু্দ্ধিজীবী অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক এর সঙ্গে।

উল্লেখ্য গায়ত্রী চক্রবর্তী, জ্যাক দারিদার বিখ্যাত ‘দে লা গ্রামাটোলজি’ বইটিকে মূল ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন (অন গ্রামাটোলোজি)। সাহিত্য সমালোচক ও তাত্ত্বিক গায়ত্রী চক্রবর্তী, মেজর ফরিদকে অনেক সময় দেন এবং দর্শন ও গবেষণার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে মেজর ফরিদ আমাকে গায়ত্রী চক্রবর্তীর অফিসে তাদের দুজনের তোলা ছবি দেখিয়েছিলেন।

তিনি পঠন-পাঠনে আজীবন নিবেদিত ছিলেন। জীবনের একমাত্র প্যাশন ছিল তার বই। তিনি জ্ঞান জিজ্ঞাসাকে উসকে দিতেন। আশি-নব্বইর দশকে ইন্টারনেট এবং লাইব্রেরি সুবিধা এত প্রসারিত ছিল না। সেই সময় দেশি বিদেশি কোর্সে ‘পেপার’ লেখা, উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তা ও স্টাডি পিরিয়ডসহ বিভিন্ন ধরনের লেখালেখির জন্য অনেক সেনা কর্মকর্তা মেজর ফরিদের শরণাপন্ন হতেন।

তিনি ছিলেন রীতিমতো সার্চ ইঞ্জিন। অসাধারণ জ্ঞানী মানুষটি ছিলেন অত্যন্ত নিরহংকার। সদাহাস্য মেজর ফরিদ ছিলেন সর্বজন গ্রহণীয় একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি চিরকুমার থেকেও ছিলেন একজন ‘ফ্যামেলি ম্যান’। তার সারা জীবনের প্রিয় বাহন ছিল একটি পুরাতন মোটরসাইকেল।

মেজর ফরিদ বাংলায় সাধারণত ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন। এর অন্যরকম এক সৌন্দর্য ছিল। তিনি চমৎকার ইংরেজি বলতেন। মিরপুর সেনানিবাসের ‘স্টাফ কলেজে’ চীনা জেনারেল সান জুর ওপর তার অতুলনীয় জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা স্টাফ কলেজের মেধাবী সামরিক কর্মকর্তা-ছাত্রদের মুগ্ধ করেছিল।

তিনি ২০০০ সালে জাতিসংঘের ইউনিকম মিশনে (ইরাক-কুয়েত) মরুভূমির মধ্যে স্থাপিত ‘ক্যাম্প খোর’ এ ‘কুইক রিএকশন ফোর্স’র ওপর জাতিসংঘের অবজারভারদের উদ্দেশ্যে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন-৮ আয়োজিত এই প্রেজেন্টেশনে বিস্ময়াভিভূত হয়েছিলেন শতাধিক বিদেশী সেনা কর্মকর্তা।

মেধাবী ও মননশীল মেজর ফরিদ তাঁর অনেক প্রিয় বই থেকে ইন্টারেস্টিং অংশ কোটেশনের মতো করে বলতে পারতেন। ‘তৈল’ প্রসঙ্গে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের প্রবন্ধটি তার খুব প্রিয় ছিল। ‘যে তৈল দিতে পারিবে তাহার বিদ্যা না থাকলেও- হইতে পারে’। একদিন তাঁর প্রিয় পুরাতন মোটরসাইকেলের গল্প করতে করতে চির তরুণ বিপ্লবী চে গুয়েভারার বিখ্যাত ‘মোটরসাইকেল ডায়েরির’ মনোমুগ্ধকর বর্ণনা দিয়েছিলেন।

মনে হয়েছিল আড্ডায় উপস্থিত আমরা যেন একেক জন ‘আলবার্তো গ্রানাদো’ বিপ্লবী চে গুয়েভারার মোটরসাইকেলের পেছনে বসে ঘুরছি তামাম দক্ষিণ আমেরিকা। তাঁর বর্ণনার ডিটেইলস ছিল বিস্ময়কর। মেজর ফরিদের প্রিয় আরেকটি প্রিয় বিষয় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জাতীয় পুনর্মিত্রতা (ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন) অর্জনের মহৎ প্রচেষ্টা।

মেজর ফরিদ জুনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের পড়তে ও লিখতে খুব উৎসাহ দিতেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখায় একজন সেনা কর্মকর্তার বই নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়। কয়েক মাস আগে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেনের ‘মিলিটারি হিস্ট্রি অব এনসিয়েন্ট বেঙ্গল: এ স্টাডি অব ফরটিফিকেশনস অ্যাট ওয়ারী-বটেশ্বর’। এটি অরিয়ন বুকস ইন্টারন্যাশনাল, দিল্লি থেকে ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছে। এই মাস্টার পিসটি বাংলার সামরিক ইতিহাসের অসাধারণ এক অন্বেষণ।

মেজর ফরিদ জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথা বলতেন। বাংলাদেশ-অন্তঃপ্রাণ মেজর ফরিদ বাংলাদেশের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত বিষয়সমূহ নিয়ে খুব ভাবতেন। এই ‘মিলিটারি ইন্টেলেকচুয়াল’ মনে করতেন যে, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে অবশ্যই ‘ডেটারান্স’ অর্জন করতে হবে।

এর সঙ্গে আরও প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও প্রতিরক্ষায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের পরিকল্পনা। ফরিদ আহমেদ সামরিক বাহিনীর ঐতিহ্য, পেশাদারত্ব, রীতিনীতি, সামরিক নীতি ও মূল্যবোধ (মিলিটারি ইথোস অ্যান্ড ভ্যালুস), ভ্রাতৃত্ববোধ ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের মান বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিতেন।

ব্রিটেনের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, অধ্যাপক স্যার মাইকেল এলিয়ট হাওয়ার্ড প্রথম জীবনে একজন সেনা কর্মকর্তা (ক্যাপ্টেন) ছিলেন। ইউনিট থেকে এই অধ্যাপকের কাছে কিংস কলেজে চিঠি আসতো ‘ক্যাপ্টেন প্রফেসর’ ঠিকানায়। মেজর ফরিদ যেন ছিলেন আমাদের অনানুষ্ঠানিক-‘মেজর প্রফেসর’।

আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরও এগিয়ে যাবে। তবে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও দুঃখজনকভাবে ক্রমাগত নৈতিক অধঃপতন দৃশ্যমান। দিন দিন আমরা স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি। এরকম সময়ে, মেজর ফরিদ ছিলেন উজ্জ্বল এক ব্যতিক্রম। মেজর ফরিদের বিল্ডিংয়ের দরিদ্র কেয়ারটেকারের মেয়ে ফারিহা। এক বছরের এই মেয়েটি হার্টের অসুখ নিয়েই এ পৃথিবীতে এসেছে।

হতভাগ্য ফারিহাকে তিনি নিজের ফ্ল্যাটে আশ্রয় দিয়েছেন। নিজের তেমন আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও শিশুটির ব্যয়বহুল অপারেশনের ব্যবস্থা প্রায় শেষ পর্যায় নিয়ে এসেছিলেন। গত ৮ মার্চ তার অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই ফরিদ আহমেদ চলে গেলেন। তবে তাঁর সেনাবাহিনীর বন্ধুরা অসহায় শিশুটির চিকিৎসার প্রতিশ্রুতির কথা ঘোষণা করেছেন। ফারিহার চোখের জল থামছে না। এক বছরের শিশু ফরিদ স্যারের চলে যাওয়ার কথা কীভাবে জানতে পারলো?

মেজর ফরিদ চলে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে, তাঁর থেকে রাষ্ট্র, সমাজ বা সামরিক প্রতিষ্ঠান হয়তো অনেক কিছু পেতে পারতো। মেজর ফরিদের মতো এ ধরনের উচ্চতাসম্পন্ন পণ্ডিত বা জ্ঞানী ব্যক্তি হয়তো আমাদের সমাজে অনেকে আছেন। তবে তাঁদের অনেকেই অন্তর্মুখী, লাজুক প্রকৃতির, নির্দলীয়, প্রচারবিমুখ, যোগাযোগহীন এবং অসংগঠিত। এই ধরনের পণ্ডিত ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর কথা আমাদের এখন ভাবতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোও তৈরি করতে হবে।

গত ৬ মার্চ বিকেল ৩টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে মেজর ফরিদের দাফন সম্পন্ন হয়। দাফনের পর রাওয়ার পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বর্তমান রাওয়া চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আলাউদ্দিন মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, বীর প্রতীক (অবসরপ্রাপ্ত)। মানুষের শ্রদ্ধা সম্মান ভালোবাসা আর চোখের জলে বিদায় নিলেন আমাদের প্রিয় মেজর ফরিদ আহমেদ ভুঞা।

মেজর ফরিদ এখন ঘুমিয়ে আছেন বনানী সামরিক কবরস্থানের দক্ষিণ দিকের একটি কবরে। এই কবরটিতে এখন প্রশান্ত নীরবতা। মানুষ নয়, তাঁর বন্ধু এখন সম্ভবত শুধু মাটি আর অন্ধকার। ফরিদ স্যার আপনি ওখানে এখন কি বই পড়ছেন? কীভাবে সেখানে পান আপনার প্রিয় বইগুলো: আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ আবুল হাসানের ‘পৃথক পালংক’, মাওলানা রুমির ‘মসনভী’, সান জুর ‘দি আর্ট অব ওয়ার’, এডোয়ার্ড সাইদের ‘প্রাচ্যতত্ত্ব’, স্টিভেন রেভিসকির ‘হাউ ডেমোক্রেসি ডাই’ এবং কোরআন মজিদ...। কার সঙ্গে আপনি মগ্ন হন সুমধুর আলাপচারিতায়?

মেজর ফরিদের কবরের ঠিক ওপরই চোখে পড়ে একটি বৈদ্যুতিক ল্যাম্প পোস্ট। চিরকাল আলোর দিশারি এ মানুষটির কবরে হয়তো সারারাত আলোয় উদ্ভাসিত থাকবে। মেজর ফরিদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের হৃদয়েও তিনি ল্যাম্প পোস্টের মতোই আলোর দিশারি হয়েই থাকবেন। ওপারে ভালো থাকুন, শান্তিতে থাকুন প্রিয় ফরিদ স্যার। স্যালুট টু ইউ। আপনাকে অভিবাদন। পরম করুণাময় আল্লাহ মেজর ফরিদ আহমদ ভূঞাকে বেহেশত নসিব করুন।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, গবেষক।
[email protected]

এইচআর/ফারুক/জেআইএম

মেজর ফরিদের সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় ছিল, বিচিত্র বিষয়ের ওপর পড়াশোনা ও অগাধ জ্ঞান। তাঁর আগ্রহ ছিল বহুমুখী ও দিগন্ত প্রসারীঃ সামরিক কৌশল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, দর্শন, চিত্রকলা, মিথলোজি, সুফিবাদ, আর্ট ফিল্ম, পোস্ট মর্ডানিজম, সাহিত্য, ধর্মবিদ্যা...। তার বই পড়া ও খাদ্যপ্রিয়তার বহু গল্প ও মিথ আছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।