উদ্বেগ দূর করুন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৪:৪১ এএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭

এটা খুবই উদ্বেগজনক ব্যাপার যে অপহরণ-নিখোঁজের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সবশেষ গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ। এ ধরনের ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। জননিরাপত্তার জন্যও তিা বিরাট হুমকি। এ কারণে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে গুম-অপহরণ, নিখোঁজদের উদ্ধারে তৎপর হতে হবে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা।

ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান সোমবার বিকেল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) মারুফের বিদেশ ফেরত মেয়ে সামিহা ধানমন্ডি থানায় এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহিল কাফি গণমাধ্যমকে জানান, সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মেয়েকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হন মারুফ। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বিমানবন্দরে যাননি বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তার ব্যবহৃত গাড়িটি খিলক্ষেত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসি আরও বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা কাজ শুরু করেছি। তাকে খুঁজে পেতে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।

দুঃখজনক হচ্ছে অপহরণ-নিখোঁজের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। শুধু রাজধানী থেকেই গত তিন মাসে ১২ জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পরে পুলিশ জানায়। বাকিদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এর আগে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৪৮ জন নিখোঁজ হন। গত জুন পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে ২৮৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এসব অপহৃত-নিখোঁজ ব্যক্তির মধ্যে ব্যবসায়ী, ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক-সব শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।

একজন মানুষ নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবারের মানসিক অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এর মানবিক দিকটাকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিক থেকেও এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই যদি পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঔদাসীন্য কিংবা অক্ষমতার পরিচয় দেওয়া হয় তাহলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে তো আরো ভয়াবহ অবস্থা হবে। নিখোঁজ হওয়ার পর উদ্ধার তৎপরতা জোরদার হলে অনেককেই উদ্ধার করা যেত। এবং সেটিই ছিল পুলিশের দায়িত্ব। সেটি পালনে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। নইলে দিনের পর দিন এত মানুষ নিখোঁজ থাকে কী করে? যে কারণেই গুম অপহরণের ঘটনা ঘটুক না কেন একজন নাগরিককে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব কিন্তু রাষ্ট্রের। এ ব্যাপারে কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন কাম্য নয়। কোনো অজুহাত বা উসিলা দেখিয়ে এখান থেকে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

এটা ঠিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে পুলিশকে এ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। কিন্তু জঙ্গিদের উদ্দেশ্যও তো এটিই যে তারা পুলিশকে ব্যস্ত রেখে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। কাজেই জঙ্গি দমনের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলার দিকেও নজর দিতে হবে। অপরাধীদের অপতৎপরতা বন্ধে আরো সক্ষমতার পরিচয় দিতে হবে পুলিশকে।

এইচআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।