মহাখালীতে ঘরমুখো মানুষের স্রোত
ঘড়ির কাঁটা ছুঁয়েছে সকাল সাতটা। ঢাকার আকাশ তখনো পুরোপুরি জেগে ওঠেনি, কিন্তু মহাখালী বাসস্ট্যান্ড যেন জেগে আছে বহু আগে থেকেই। বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর চোখে ঘুম নেই, ক্লান্তি নেই, শুধু একটাই আশা ঘরে ফেরা। ঈদ আসছে, ছুটির ঘনঘটা বাড়ছে, আর সেই সঙ্গেই বাড়ছে মানুষে মানুষে গা ঘেঁষাঘেঁষি। ছবি: মাহবুব আলম
-
সকাল হতেই দেখা যায় রঙ-বেরঙের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে, কোলে শিশু নিয়ে কিংবা বৃদ্ধ বাবার হাত ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শত শত মানুষ।
-
কেউ অফিস থেকে ছুটি পেয়েছেন, কেউ শেষমুহূর্তে টিকিট জোগাড় করে ছোটাছুটি করছেন, আর কেউ পরিবারসহ রওনা হয়েছেন বহু প্রতীক্ষিত গ্রামের বাড়ির পথে।
-
মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের চিত্রটা যেন একটা জীবন্ত চিত্রকর্ম যেখানে প্রতিটি মুখের মধ্যে লুকিয়ে আছে আলাদা গল্প।
-
এক তরুণ দাঁড়িয়ে আছেন লাইনের একদম শেষ মাথায়। পিঠে ব্যাগ, হাতে মোবাইল আর চোখে বাড়ি ফেরার আনন্দ।
-
এই শহরে মানুষ আসে স্বপ্ন নিয়ে। কাজ করে, জীবন গড়ে তোলে। কিন্তু কোনো উৎসব বা ছুটির দিনে সেই মানুষগুলো ছুটে চলে ফেলে আসা শিকড়ের দিকে। গ্রামে পড়ে থাকা মা-বাবার মুখ, ছোটবেলার আঙিনা কিংবা ঈদের সেমাইয়ের ঘ্রাণ টেনে আনে সবাইকে। তাইতো শত কষ্ট সয়ে হাজার মানুষ বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায়, শুধু একটি টিকিটের আশায়।
-
মহাখালীতে এমন অনেকেই আছেন যারা রাত কাটিয়েছেন বাসস্ট্যান্ডেই, ভোরের প্রথম বাসটি যেন মিস না হয়।
-
ভাড়া বেশি নিচ্ছে অনেক পরিবহন, অভিযোগ আছে সময়মতো বাস না পাওয়ার। তারপরও মানুষ হাল ছাড়ছে না। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ মাটিতে বসে, কেউবা ছাউনি খুঁজে বিশ্রাম নিচ্ছেন একটু। কিন্তু চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, এই অপেক্ষার শেষে রয়েছে আত্মীয়ের কোল, গ্রামের মেঠোপথ, ঈদের নামাজের জামাত।
-
মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের এই দৃশ্য কেবল এক জায়গার নয়; এটি যেন সারাদেশেরই এক প্রতিচ্ছবি। ঘরে ফেরার টান, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষা এসবই মিলেমিশে তৈরি করে এক অনন্য আবেগময় মুহূর্ত।
-
শহর যতই আলোয় ঝলমলে হোক না কেন, ঈদের সময় মানুষ ফিরে যেতে চায় নিজের চিরচেনা ছোট্ট গ্রামে। আর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড হয় সেই যাত্রার প্রথম ধাপ। এই অপেক্ষা কষ্টের, এই পথ দীর্ঘ; তবু এই পথই সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে আপন কারণ এর শেষ প্রান্তে আছে একটাই শব্দ ‘বাড়ি’।