এক বাস, এক গন্তব্য-তবু ভাড়া তিন রকম!
ঈদ মানেই ঘরে ফেরার তাড়া, আর সেই সুযোগেই বাড়তি মুনাফার ফাঁদ পাতে পরিবহন কোম্পানিগুলো। একই বাসে, একই গন্তব্যে রওনা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে তিন রকম ভাড়া কখনো ৭০০, কখনো ৯০০, আবার কখনো হাজার টাকা! দাঁড়িয়ে গেলে কম, বসলে বেশি, আর দরদাম করলেই ভাড়া বাড়ছে। ভাড়া নির্ধারণে নেই কোনো নিয়ম বা নিয়ন্ত্রণ, সবকিছুই যেন চলছে খেয়ালখুশিমতো। ছবি: ফজলুল হক মৃধা
-
রাত পোহালেই ঈদ। তাইতো শেষ সময়ে রাজধানীজুড়ে ছুটছে ঘরমুখো মানুষের ঢল। সকাল থেকে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও জনপথ মোড়সহ রাজধানীর প্রধান বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
-
বিশেষ করে বরিশাল, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
-
কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, টিকিটের সংকট না থাকলেও অধিকাংশ রুটেই অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। কেউ দাঁড়িয়ে গেলে ফরিদপুর, মাদারীপুর বা শরীয়তপুরে জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর কিংবা বরিশালগামী যাত্রীদের ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও দিতে হচ্ছে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
-
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগের দিন হওয়ায় যাত্রীসংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। ফলে কাউন্টারগুলোতে চলছে দরকষাকষির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি। কেউ কাউন্টারে গিয়ে দরদাম করে কম মূল্যে টিকিট পাচ্ছেন, আবার কেউ বেশি দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
-
বরিশাল রুটে চলাচলকারী মিজান পরিবহনের যাত্রীরা জানান, যেখানে পটুয়াখালী রুটে সাধারণ সময়ে ৪৫০-৬০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়, সেখানে বর্তমানে দিতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা। সাকুরা পরিবহনে একই রুটের জন্য যাত্রীপ্রতি ভাড়া হাঁকানো হচ্ছে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
-
মাওয়া রোডে যাত্রীদের পরিবহনসেবা দিচ্ছে ট্রান্সসিলভা, রাইদা ও গাবতলী মেরিবাস। এই রুটে পাঁচ্চর, ভাঙ্গা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর কিংবা রাজবাড়ীগামী যাত্রীদের থেকে জনপ্রতি আদায় করা হচ্ছে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। যদিও এসব গন্তব্যে সাধারণ সময়ের ভাড়া এর অর্ধেক।
-
পরিবার নিয়ে বাড়ি ফেরা আমিনুল নামের এক যাত্রী জানান, টিকিট কিনতে গিয়ে দরদাম করেই টিকিট নিতে হয়েছে। কারোর কাছ থেকে ৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে, আবার কেউ একটু কমে দিয়ে দিচ্ছে।
-
গ্রিন সেন্ট মার্টিন পরিবহনের যাত্রীরা জানাচ্ছেন, বরিশালগামী বাসে এখন জনপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৯০০ টাকা। ফরিদপুরের যাত্রীদের কাছ থেকে সাউদিয়া পরিবহন নিচ্ছে ৮০০ টাকা, যেখানে অন্য সময়ে তা ৫০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
-
গোপালগঞ্জের বাসিন্দা রাফিউল হাসান জানান, বছরের বাকি সময় গোপালগঞ্জ যেতে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা লাগে। এখন এক লাফে সেটা হয়ে গেছে ৭৫০ টাকা।
-
ভাড়া বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে সায়েদাবাদে ইকোনো পরিবহনের এক ম্যানেজার বলেন, ঈদ উপলক্ষে মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তেই কিছুটা বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ঈদের তিন দিন পর আগের ভাড়ায় ফেরত যাব।
-
চাটখিলগামী হিমালয় ও আল-বারাকা পরিবহনে অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ সময়ে যেখানে ভাড়া ৫০০ টাকা, সেখানে এখন ৬০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী-নড়াইল রুটে দাঁড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা, আর বসার টিকিটের ভাড়া ৮০০ টাকা পর্যন্ত।
-
বাস খালি ফিরে যাওয়ার অজুহাতে অনেক পরিবহন কর্তৃপক্ষই অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তবে ভাড়া দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি আদায়ের বিষয়ে পরিবহন কর্তৃপক্ষ কথা বলতে অনিচ্ছুক। এইভাবে নানা অজুহাতে রাজধানী ছাড়তে চাওয়া সাধারণ মানুষকে বাড়তি ভাড়া দিয়েই ঘরে ফিরতে হচ্ছে।