বৃষ্টিতে কাঁপে শরীর, কিন্তু দায়িত্বে অটল তারা
একটানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি। আকাশ মেঘে ঢেকে আছে সারাদিন। এমন দিনে আমরা চায়ের কাপে চুমুক দিই, মোড়ানো কম্বলের উষ্ণতায় খুঁজি আরাম। কিন্তু শহরের এক প্রান্তে তখন একজন রিকশাওয়ালা মাথায় গামছা বেঁধে যাত্রী তুলছেন। অন্য পাশে এক তরুণ ডেলিভারি ম্যান বৃষ্টিতে ভিজে পৌঁছে দিচ্ছেন আমাদের অর্ডার করা খাবার। কাঁপছে শরীর, জুতা ভিজে গেছে, তবু নেই বিরতি। কারণ তাদের কাছে বৃষ্টি মানেই শুধু জল নয়, জীবনের লড়াইয়ের আরও একদিন। দায়িত্বের জায়গা থেকে তারা থেমে যান না, কারণ সেই দায়িত্বই তাদের রুটি-রুজির পথ, প্রিয়জনের মুখে হাসির কারণ। লেখা: জান্নাত শ্রাবণী, ছবি: মাহবুব আলম
-
আমরা জানি, বৃষ্টি মানেই ছাতা, রেইনকোট অথবা বাসায় আটকে থাকার অজুহাত। কিন্তু তাদের কাছে বর্ষা মানে কষ্ট, পানি মাড়িয়ে হেঁটে চলা, ভিজে শরীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করা, আর জীবনের তাগিদে থেমে না যাওয়া।
-
রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে মোবাইল, ফুড ডেলিভারির ব্যাগ পিঠে ঝুলিয়ে ছুটে চলেছে এক তরুণ। কোনো অ্যাপে খাবারের অর্ডার পড়েছে, সময়মতো পৌঁছাতে হবে। বৃষ্টি কোনো অজুহাত না, বরং প্রতিদিনের রুটিন। হয়তো তার নিজের বাড়িতে মা বসে আছেন-ছেলের শরীরে যেন জ্বর না আসে, এই আশায়।
-
রিকশাচালক মামা বসে আছেন ভেজা গামছা মাথায় দিয়ে। আবার কেউ যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
-
এই শহরের ছাতা ওরা, যারা নিজেদের ভিজিয়ে আমাদের শুকনো রাখেন।
-
আমরা যখন দুপুরে গরম গরম বিরিয়ানি খাই বা সন্ধ্যায় পিৎজা অর্ডার করি, তখন ভাবি না এই খাবারটা পৌঁছে দিতে গিয়ে কে কেমন কষ্ট করেছে। অথচ আমাদের এক ক্লিকেই সেই খাবার, সেই চা, কিংবা প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে যায়। ওরা কোনো জাদুকর নয়, ওরা আমাদের পাশে থাকা অসংখ্য নিরলস মানুষ।
-
তাদের এই অবদান আমরা হয়তো এক মুহূর্তেই ভুলে যাই, কিন্তু তারা প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে আমাদের জীবনকে সহজ করেন। তারা শুধু খাবার নয়, পৌঁছে দেন আমাদের সুবিধা, আরাম আর নিরাপত্তার একখানা ছাতা।
-
বর্ষার এই দিনে, যখন বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি, তখন যারা সেই বৃষ্টি ভেঙে আমাদের সুবিধা নিশ্চিত করেন, তাদের জন্য একটু ভালোবাসা জমিয়ে রাখা উচিত আমাদের সবার।