পিরোজপুরের চাঁইয়ের হাট: ঐতিহ্যের মেলা আর সংকটের ছায়া
বর্ষার আগমনেই পিরোজপুর সদর উপজেলার দামোদর নদীর পাড়ে প্রাণ ফেরে মাছ ধরার ফাঁদ ‘চাঁই’ এর হাটে। জেলার নানা প্রান্ত থেকে কারিগররা তৈরি করে আনে বাঁশের তৈরি এই চাঁই, যেগুলো মাছ ধরার সবচেয়ে জনপ্রিয় সরঞ্জাম। প্রতি সপ্তাহে রোববার ও বুধবার বসে এই চাঁইয়ের হাট, যেখানে হাজার হাজার চাঁই বিক্রি হয়। তবে জমজমাট বাজারের পেছনে বিক্রেতাদের মুখে দেখা যায় চিন্তার ছায়া। চাঁই তৈরির উপকরণের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে অনেক গুণ। আর সঠিক মুল্য না পাওয়ায় বিক্রেতারা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। ছবি: মো. তরিকুল ইসলাম
-
গ্রামবাংলার কৃষিজীবী মানুষের প্রিয় সরঞ্জাম বাঁশের চাঁই, যা বিশেষ করে এই সময়ে বেশি বিক্রি হয়। নদীর স্রোতের বিপরীতে বসিয়ে মাছ আটকে রাখার সুবিধাজনক এই ফাঁদ।
-
পিরোজপুরের দামোদর নদীর তীরে পালপাড়া সড়কের পাশে, নেছারাবাদের আটঘর-কুড়িয়ানা এবং নাজিরপুরের দীঘিরজান হাটে সপ্তাহে একাধিক দিন বসে চাঁইয়ের হাট।
-
প্রতি হাটে দুই থেকে তিন হাজার চাঁই বিক্রি হয়, যার দাম ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
-
চাঁইয়ের কারিগর তপন কুমার দাস জানান, ১৫ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছেন। এবারও আড়াই লাখ টাকার মতো চাঁই বিক্রি করবেন। কিন্তু সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে। বাঁশের দামও বাড়ায় চাঁইয়ের দাম বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিনা সুধে ঋণ দিলে অনেক উপকার হতো।
-
চাঁই কেনার জন্য আসা সরোয়ার শেখ বলেন, এই ফাঁদ দিয়ে বিভিন্ন মাছ ধরা হয়, যা তাদের পরিবারের খাওয়ার জোগান দেয়। প্রতিবছর বর্ষার তিন মাস তারা এভাবেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
-
পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল কবির জানান, এই চাঁইয়ের হাট বহু বছর ধরে চলে আসছে, যদিও আধুনিক প্রযুক্তির কারণে এ ব্যবসার চাহিদা ধীরে ধীরে কমছে। তারা সংশ্লিষ্টদের পাশে থেকে হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।
-
বর্ষার এই মৌসুমে পিরোজপুরে কয়েকশো পরিবারের জীবিকা জড়িয়ে আছে মাছ ধরার ফাঁদ চাঁইয়ের সঙ্গে। প্রত্যেক পরিবার প্রতিটি মৌসুমে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করে থাকে। কিন্তু দাম বৃদ্ধির চাপ ও কম দাম পাওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।