পিরোজপুরের রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি
ইতিহাসের সাক্ষী ৪৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক পিরোজপুরের রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি। ভারতবর্ষের মোঘল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে ১৬০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয় এই জমিদার বাড়ি। ঐতিহাসিক এই স্থাপনা দেখতে আসেন অসংখ্য পর্যটক। ছবি: জাগো নিউজ
-
প্রায় ২০০ একর জমি নিয়ে অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এ প্রাসাদ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভাটিয়াল রাজা রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী।
-
বিস্তৃত এই বাড়িতে নির্মাণ করা হয় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি ভবন। ইট-সুঁড়কি দিয়ে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয় রাজবাড়ির প্রাসাদ ও মঠগুলো।
-
এরই একটি মঠে স্থাপন করা হয়েছে ২৫ মণ ওজনের বিশালাকার একটি শিবলিঙ্গ। কষ্টি পাথরের তৈরি এ মহামূল্যবান শিবলিঙ্গটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গ বলে জনশ্রুতি আছে।
-
রাজা রুদ্র নারায়ণ হুগলির দে গঙ্গায় এক ব্রাহ্মণ বাড়ির রাখাল ছিলেন। সেখানে সম্রাট জাহাঙ্গীর একদিন গঙ্গা দিয়ে যাওয়ার সময় রাজা রুদ্র নারায়ণকে দেখতে পান। তখন রাজা রুদ্র নারায়ণ শিশু, সম্রাট জাহাঙ্গীরের চোখে পড়েন তিনি।
-
সম্রাট রাজা রুদ্র নারায়ণকেই এই অঞ্চলের জমিদার ঘোষণা করেন। বাংলার এই অঞ্চলে রাজা রুদ্র নারায়ণের হাতেই সম্রাট জাহাঙ্গীর জমিদারি প্রথা শুরু করেন।
-
৪৫০ বছরের পুরোনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও কালের বিবর্তনে তা এখন ধ্বংস হতে চলেছে। মঠ এবং পুরোনো জমিদার বাড়িটির অবস্থা ভুতুড়ে।
-
চরম অবহেলা ও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ঐতিহাসিক এই রাজবাড়ির মূল্যবান পুরাকীর্তিগুলো এখন ধ্বংস হতে চলেছে। কালের স্বাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সুউচ্চ ১১টি মঠ।
-
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দেশের বাইরে থেকেও পর্যটকরা আসেন এখানে। যদিও তারা এসে শুধুই আস্তরণ খসে পড়া কিছু পুরোনো বাড়ি দেখতে পান। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইতিহাসের এই নিদর্শন হারিয়ে যেতে বসেছে।
-
স্থানীয়দের দাবি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যদি এই ঐতিহাসিক স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ করে তাহলে যুগের পর যুগ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ থেকে অনেক কিছু জানতে পারবে।
-
সরকারিভাবে দেখভাল করলে গড়ে উঠতে পারে পিরোজপুরের অন্যতম বৃহৎ পর্যটক কেন্দ্র। যেখান থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
-
পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, ‘রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি প্রায় সাড়ে চারশ বছরের পুরোনো। এটি একটি দর্শনীয় ও ঐতিহ্যবাহী স্থান। এখানে দেশ বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন। এটি সংস্কারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানানো হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
-
বাড়িটি বছরের পর বছর ধরে পড়ে রয়েছে অবহেলিত অবস্থায়, তবু ইতিহাসপ্রেমী পর্যটকদের আগ্রহ কমেনি। সঠিক উদ্যোগ নিলে রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি হয়ে উঠতে পারে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র।