নায়ক নয়, সময়কে ধারণ করা এক অভিনেতা
হলিউডে বহু অভিনেতা আসে, জনপ্রিয় হয়, আবার হারিয়েও যায়। কিন্তু খুব কম শিল্পীই আছেন, যারা সময়ের সঙ্গে নিজেদের বদলে নিতে পারেন এবং প্রতিটি দশককে নিজের অভিনয়ে ধারণ করতে পারেন। ব্র্যাড পিট ঠিক তেমনই একজন। তিনি কেবল রূপ বা তারকাখ্যাতির ওপর ভর করে টিকে থাকেননি; বরং প্রতিটি বয়সে, প্রতিটি সামাজিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে নিজের অভিনয়কে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। রোমান্টিক নায়ক থেকে জটিল, ভাঙা কিংবা নীরব চরিত্র; সময়ের গল্পকে নিজের শরীরী ভাষায় তুলে ধরাই তার অভিনয়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৬৩ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে উইলিয়াম ব্র্যাডলি পিট এর জন্ম। পরে পরিবারসহ মিসৌরিতে বেড়ে ওঠা এই ছেলেটির জীবনে শুরুতে অভিনয় কোনো নিশ্চিত লক্ষ্য ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও বিজ্ঞাপন বিষয়ে পড়াশোনা করলেও, নিজের ভেতরের অজানা আকর্ষণ তাকে টেনে নিয়ে যায় অভিনয়ের জগতে। পড়াশোনার শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সবকিছু ছেড়ে তিনি পাড়ি জমান হলিউডে একটা অনিশ্চিত কিন্তু স্বপ্নভরা সিদ্ধান্ত নিয়ে।
-
হলিউডে প্রথম দিনগুলো ছিল কঠিন। ছোটখাটো কাজ, অল্প পারিশ্রমিকের চরিত্র আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সবকিছুর মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে তাকে। তবে ধীরে ধীরে তার চেহারা, আত্মবিশ্বাস আর অভিনয়ের স্বাভাবিক ভঙ্গি নজর কাড়তে শুরু করে। একসময় দর্শক বুঝে নেয়, এই অভিনেতার মধ্যে শুধু সৌন্দর্য নয়, আছে গভীরতা।
-
ব্র্যাড পিট কখনোই নিজেকে একটি নির্দিষ্ট ঘরানার মধ্যে আটকে রাখেননি। কখনো তিনি রহস্যময়, কখনো সংবেদনশীল আবার কখনো বিদ্রোহী বা নিঃসঙ্গ চরিত্রে হাজির হয়েছেন। তার অভিনয়ের বড় শক্তি হলো চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যাওয়া। এজন্যই তিনি রোমান্টিক নায়ক থেকে শুরু করে মানসিকভাবে জটিল চরিত্র সব ক্ষেত্রেই সমানভাবে গ্রহণযোগ্য।
-
শুধু অভিনয় নয়, চলচ্চিত্র প্রযোজনার ক্ষেত্রেও ব্র্যাড পিট রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। গল্পনির্ভর, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যতিক্রমী সিনেমায় বিনিয়োগ করার সাহস তাকে অন্য অনেক তারকার চেয়ে আলাদা করেছে। একজন প্রযোজক হিসেবে তিনি এমন সব গল্পকে সামনে এনেছেন, যেগুলো হয়তো সহজ পথে আলোচনায় আসত না।
-
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ব্র্যাড পিট একাধিকবার একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন এবং গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারেও পেয়েছেন স্বীকৃতি। তবে তার কাছে পুরস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল দর্শক ও সমালোচকদের আস্থা। প্রতিটি চরিত্রে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য।
-
ব্র্যাড পিটের ব্যক্তিজীবন বরাবরই গণমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। সম্পর্ক, বিবাহ, বিচ্ছেদ সবকিছুই হয়েছে প্রকাশ্য আলোচনার বিষয়। তবুও তিনি নিজেকে ভেঙে পড়তে দেননি। বরং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া উপলব্ধি তার অভিনয়কে করেছে আরও পরিণত ও বাস্তবধর্মী।
-
তিনি শুধু একজন তারকা নন, মানবিক কাজেও সক্রিয়। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, দাতব্য উদ্যোগে অংশগ্রহণ এসবের মধ্য দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, খ্যাতির বাইরেও একজন মানুষের দায়িত্ব থাকে।
-
ব্র্যাড পিট আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ তিনি সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলাতে জানেন। বয়স বাড়লেও অভিনয়ের প্রতি তার দায়বদ্ধতা কমেনি। বরং প্রতিটি নতুন কাজে আরও বেশি সংযত, গভীর ও চিন্তাশীল এক শিল্পী হিসেবে তিনি নিজেকে তুলে ধরেছেন।
-
সব মিলিয়ে ব্র্যাড পিট কেবল একজন সুদর্শন অভিনেতা নন; তিনি একজন পরিপূর্ণ শিল্পী, যার ক্যারিয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত, বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিনয় আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির এক অনন্য উদাহরণ।