প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ বাস্তবতা-বিবর্জিত : মান্না
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন হলেও প্রকৃত অর্থে অর্থনৈতিক উত্তরণ এবং ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমার কোনো দিকনির্দেশনা এতে নেই।
তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ বাস্তবতা-বিবর্জিত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী একটি গতানুগতিক বাজেট। জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রমাণ করতে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়েছে যার মধ্যে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন।
মান্না বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা যা সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। তার মানে, এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে গেলে ঘাটতি বাজেট আরও বড় হবে। এবারের বাজেটে সুদব্যয় বেড়ে হয়েছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এই ব্যয় এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধরেই নেয়া যায়।
তিনি বলেন, এখানে কেবলমাত্র কিছু বড় বড় সংখ্যা দেখানো হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের যে করুণ দশা, এই করোনা মহামারিতে তা স্পষ্ট হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রকৃতঅর্থে গঠনমূলক কোনো ব্যবস্থা এই বাজেটে নেয়া হয়নি। যেসব প্রকল্প নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে সেসব প্রকল্পকেই সরকারের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। সংকট কাটিয়ে অর্থনৈতিক উত্তরণের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত কিছু প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে যা কেবলমাত্র কিছু ব্যাংক লোন। যা ব্যাংকিং খাতকে আরও রুগ্ন করে তুলবে।
আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এই বাজেটে করোনা সংকট কাটিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে কিন্তু সেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নেই। শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং খাদ্যের নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট স্বাস্থ্য খাতের মতোই অসুস্থ। ঘাটতি বাজেট মেটানোর জন্য ব্যাংক থেকে যে অর্থ ঋণ নেয়া হবে তা আর্থিক খাতকে আরও দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলবে। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে, শিল্প খাতসমূহ মুখ থুবড়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারির পর যে বেকারত্ব বাড়বে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ যেখানে করোনা সংকটে অর্থনৈতিক মন্দায় কবলিত সেখানে বিদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। যা এই মুহূর্তে অসম্ভব। করোনার প্রভাবে কর্ম হারানো প্রবাসীদের দেশে পুনর্বাসন ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। পোশাক খাতের অস্থিরতা কাটানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সংকটের মধ্যেও মেগা প্রকল্পের মেগা লুটের সুযোগ তৈরি করতে এডিপি ৬.২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
মান্না বলেন, দুর্নীতিবাজ এবং লুটেরাদের প্রশ্রয় দিয়ে এবারের বাজেটেও সহজ শর্তে, বলতে গেলে একরকম শর্তহীনভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এত বড় একটি বৈশ্বিক মহামারির পর অর্থনীতিতে তার যে নেতিবাচক প্রভাব সেই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত এমন একটি গতানুগতিক বাজেট কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না।
কেএইচ/এমএআর/এমএস