দিনে ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষার দাবি
দিনে কমপক্ষে ৫০ হাজার করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। কেন্দ্র ঘোষিত ১১ দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার (২১ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে গিয়ে সচিবালয়ে অবস্থিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আকবর খান, কমিউনিস্ট লীগের নেতা নজরুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য কাফি রতন, অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, কমিউনিস্ট লীগের শামীম ইমাম, বাসদ নেতা জুলফিকার আলী প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম দুর্দশা ও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনগণের স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা না দিয়ে করোনাকে পুঁজি করে ত্রাণ চুরিসহ স্বাস্থ্য খাতের চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ে চরম অনিয়ম, দুর্নীতি-লুটপাটে ব্যস্ত। বর্তমান সময়কে মহামারি বা অতি মহামারি ঘোষণা করে সর্বদলীয় সমন্বিত উদ্যোগে করোনা মোকাবিলা করা এবং দেশ যেভাবে পরিচালিত হওয়া দরকার ছিল সরকার সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ-বিশেষজ্ঞদের দাবি উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটে অতীতের মতো এবারেও গতানুগতিক লুটপাটের এক বাজেট ঘোষণা করেছে।’
বাম জোট নেতৃবৃন্দ বর্তমান পরিস্থিতিতে দুর্যোগকালীন বাজেট প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ ভাগ বরাদ্দ, প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন, দিনে কমপক্ষে ৫০ হাজার পরীক্ষা করা, ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ, ডাক্তার, নার্সসহ ফ্রন্ট লাইনারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ জোটের পক্ষ থেকে দেয়া ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
>> জনগণের সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত এবং বাজেটে কমপক্ষে ২০ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করা, সময়মতো অর্থছাড় ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
>> প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করে উপজেলায় ২০০, জেলায় ৫০০ এবং সারা দেশে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
>> স্বাস্থ্য সামগ্রী ও সুরক্ষা উপকরণ কেনা এবং সরবরাহ করার সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
>> নন করোনা রোগীদের কোনো হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়া যাবে না, কোনো বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ফিরিয়ে দিলে তাদের শাস্তি দিতে হবে এবং হাসপাতাল রাষ্ট্রকর্তৃক অধিগ্রহণ করতে হবে।
>> করোনা সংক্রমণ ব্যাধি, ফলে সকল নাগরিকের টেস্ট এবং চিকিৎসা রাষ্ট্রীয় খরচে করতে হবে।
>> করোনাকালে সকল বাণিজ্যিক বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করতে হবে।
>> চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা সেবাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সংবাদকর্মীসহ সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
>> করোনাকালে দায়িত্ব পালনকারীদের ঝুঁকিভাতা, বীমা ও সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।
>> করোনাকালে কোনো কারখানার শ্রমিক ছাঁটাই করা চলবে না, কোনো মালিক শ্রমিক ছাঁটাই করলে ওই কারখানা রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করতে হবে। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনর্বাসন করতে হবে।
>> করোনায় কর্মহীন-রোজগারহীনদের খাদ্য ও নগদ অর্থসহায়তা দিতে হবে।
>> কৃষি, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মসংস্থান খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো এবং সামরিক, জনপ্রশাসনসহ অনুৎপাদনশীলখাতে বাজেট বরাদ্দ কমাতে হবে।
এফএইচএস/এফআর/এমকেএইচ