অন্তঃসত্ত্বা নারীকে রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
এবার তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নিজের স্বামীর খুনি বানাতে পরিকল্পিতভাবেই পুলিশ এ কাজটি করেছে বলে দাবি ভুক্তভোগী নারীর। সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনই অভিযোগ করেন তাসমিন খাদিজা সোনিয়া নামে ওই নারী। দেড় মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সোনিয়া বলেন, তার স্বামী মো. ওবায়দুল হক (৩৬) ২০১৫ সালের ২৬ জুন ঢাকার কলাবাগান থানার নর্থ সার্কুলার রোডে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের দারোগা দিপক কুমার বসু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কয়েকদিন পর তাকে গ্রেফতার করে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড চলাকালীন তাকে তার স্বামীর খুনি হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
সোনিয়া বলেন, রুবেল নামে আমার এক সহপাঠীর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক আছে মর্মে স্বীকারোক্তি আদায়েরও চেষ্টা করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানার খাজা রোডের মোহাম্মদ হাসানের ছেলে ওবায়দুল চাকরিসূত্রে স্ত্রী সোনিয়াকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে ইতোমধ্যে পুলিশ নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের মাস্টার্সের ছাত্রী সোনিয়া জানান, স্বামী যখন খুন হন তখন তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। হত্যাকাণ্ডের পর সোনিয়া নগরীর আলকরণে তার বাবার বাসায় চলে যান।
সোনিয়া আরও বলেন, রিমান্ডে পুলিশ আমাকে বারবার শারীরিক ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করে। এই হত্যাকাণ্ডে আমি জড়িত সেটা যেন আমি বলি, সেজন্য আমাকে চাপ দেয়া হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দুই মাস হাজতবাসের পর হাইকোর্ট আমাকে জামিন দেন।
ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে এলএলএম ক্লাস করার সময় রুবেল নামে এক ছেলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মাঝে মাঝে লেখাপড়ার বিভিন্ন বিষয় আমি তার কাছ থেকে জেনে নিতাম। এর বাইরে আমাদের মধ্যে আর কোনো সম্পর্ক ছিলনা বলে সোনিয়া জানান।
সোনিয়া অভিযোগ করেন, ওবায়দুলের মৃত্যুর পর তার বড় ভাই শেখ আহম্মদ এবং ফুপাতো ভাই নেছার আহমেদ সোনিয়াদের বাসায় গিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলার জন্য চাপ দেন। তিনি জানান, ওবায়দুল ছিল তাদের চার ভাইয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ আলাদা। তার তিন ভাই তাদের পৈতৃক বাড়ি দখল করে রেখেছিল। এজন্য সামাজিকভাবে বিয়ের পরও ওবায়দুল স্ত্রীকে পৈতৃক বাড়িতে না তুলে নগরীর নাসিরাবাদে ভাড়া বাসায় তুলেছিল। ওবায়দুলের টাকাপয়সা ছিল, নিজের সম্পদও ছিল। সেজন্য তার উত্তরাধিকারকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করেন সোনিয়া।
তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কার জড়িত, কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সে বিষয়ে কিছুই ধারণা করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন সোনিয়া। তিনি বলেন, গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে না পেরে আমার ভাসুর শেখ আহম্মদ ডিবি পুলিশ দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করিয়েছেন। তিনি আমার কাবিননামা লুকিয়ে ফেলেছেন। আমার স্বর্ণালংকার, টাকাপয়সা, ব্যাংকের বই সবকিছু তিনি নিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, পুলিশ যে রুবেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলছে তাকেও গ্রেফতার করেনি। এখনও মূল খুনিদের না ধরে তড়িঘড়ি করে সোনিয়াকে জড়িয়ে অভিযোগপত্র দেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। আমি কি আজ সেই একুশে আগস্টের আরেক জজ মিয়া? অসহায় আর্তনাদ ও আত্মসমর্পণ করে অন্যায়ভাবে আসামি হয়ে আমাকে চুপ থাকতে হবে? বলেন সোনিয়া।
সোনিয়া বলেন, নিষ্পাপ নবজাতকের দিকে তাকিয়ে হলেও সুষ্ঠু তদন্ত করে এ খুনের মূল হোতাদের বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। আমি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে সোনিয়ার বাবা-মাসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
জীবন মুছা/বিএ