এক হাতেই ব্যাট এবং বল করে ছেলেটি... (ভিডিও)


প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এ এক অদ্ভূত ক্রিকেটার। অদ্ভূতেরও তো একটা রকম থাকে। ভারতীয় ক্রিকেটে কয়েকদিন আগেই একজন একহাজারের বেশি রান করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। এর কয়েকদিন পর দেখা গেলো এক ক্রিকেটার ডান হাতে-বাম হাতে সমান তালেই বোলিং করতে পারেন। আবার চলতি অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও শ্রীলংকার এক ক্রিকেটারকে ডান হাত-বাম হাতে বোলিং করতে।

কিন্তু কখনও শোনা গেছে যে, এক হাত নেই কনুইয়ের নীচ থেকে বাকি অংশ। বাকি এক হাত দিয়ে দিব্যি ব্যাটিং করে যাচ্ছে কিংবা বল ঘুরিয়ে চলছে! তেমনই এক ক্রিকেটারের দেখা মিলেছে ভারতে। তামিলনাড়ুর পি হরিহরণ। এক হাত দিয়েই যিনি ব্যাটিং করেন এবং লেগ স্পিন করে ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করেন। তারই গল্প কলকাতার এবেলা পত্রিকা থেকে তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য।

ব্যাট করতে কোনও সমস্যাই হয় না পি হরিহরণের। বন্ধুমহলে হরি নামেই সে বেশি পরিচিত। বল তার হাতে কথা বলতে শুরু করে। কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাকালামের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মজে বছর চৌদ্দের হরি। শেন ওয়ার্ন তার হৃদয়ের অনেকটা জুড়ে রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই স্পিনারের মতোই তামিলনাড়ুর ছেলেটি লেগ স্পিন বলও করে। তার বলের ছোবল সামলাতে রীতমতো হিমশিম খেতে হয় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। হরি ব্যাট করে ডান হাতে। মিডল অর্ডারেই ব্যাট করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে নবম শ্রেণির ছেলেটি।

হরিহরণ কিন্তু আর পাঁচটা ছেলের মতো স্বাভাবিক নয়। সেই ছোটবেলায় ভুল চিকিৎসায় তার বাম হাতটি কনুইয়ের নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়। ডান হাতের আঙুলেও বেশ সমস্যা রয়েছে। এতকিছুর পরেও কংক্রিট উইকেটে হরির বল ঘোরাতে কোনও সমস্যাই হয় না। হাতেও ব্যথা অনুভব করে না সে। ব্যাট করার সময়েও বেশ সাবলীলভাবে ব্যাট ঘোরায় ছেলেটি। ফিল্ডিং করে বাজপাখির ক্ষিপ্রতা নিয়ে। এই তো গত বছরই অনূর্ধ্ব-১৬ প্রতিযোগিতায় সেরা ফিল্ডারের সম্মান পেয়েছে হরিহরণ।

বাম হাতের কনুইয়ের নীচ থেকে কেন বাদ দিতে হল? হরি বলছিল, ‘আমার বয়স তখন ছ’ মাস। হাসপাতালে আমার ভুল চিকিৎসা হয়। ভুলভাবে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় আমাকে। তার ফলে আমার বাম হাত পঁচে যায়। অস্ত্রোপচার করে বাম হাতের কনুইয়ের নীচের অংশ বাদ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না।’ সেই থেকেই সমাজের চোখে হরিহরণ প্রতিবন্ধী।

হরির গুরু আর চন্দ্রশেখর। প্রায় তিন বছর ধরে তার কোচিংয়েই খেলছে হরিহরণ। ছাত্রের মধ্যে অদ্ভুত একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন গুরু।  প্রচণ্ড মনের জোর তার। বাম হাত থেকেও না-থাকার মতোই, তাতেও দমবার পাত্র নয় ছেলেটি। প্যাড পরার সময়ে কারোর সাহায্যই নেয় না একরত্তি ছেলেটি। সে যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেটাই প্রমাণ করার তাগিদ লক্ষ্য করা যায় হরির মধ্যে। নিজের হাতেই প্যাড পরে, গ্লাভস পরে, তার পরে তরতরিয়ে ব্যাট করতে চলে যায় বাইশ গজে। হরিহরণ বলছিল, ‘আমার সঙ্গে তো অন্যদের কোনও তফাত নেই। আমি ক্রিকেট বলকে কোনওদিনও ভয় পাইনি।’

ছেলেবেলায় পাড়ার মাঠে-ময়দানে ক্যাম্বিস বল পেটাত হরি। সেখান থেকেই নজরে পড়ে যায় চন্দ্রশেখরের। ছাত্র সম্পর্কে কোচ বলছিলেন, ‘প্রথমটায় তো হরিহরণকে দেখে প্রতিবন্ধীর গ্রুপেই ফেলেছিলাম। হরিহরণের মানসিক গঠন সম্পর্কে পরবর্তীকালে পরিচয় পাই।’ সেই থেকেই সুস্থ, স্বাভাবিকদের সঙ্গে খেলতে শুরু করে সে। উইকেটকিপার হিসেবে হরিকে প্রথমটায় ভেবেওছিলেন গুরু। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদল করেন চন্দ্রশেখর। এই বছরই তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থা-পরিচালিত ক্রিকেট লিগে হরির নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছে ছেলেটি।

‘আর পাঁচজনের মতোই তো আমি ব্যাট করি, বল করি। তাহলে আমি কেমন করে প্রতিবন্ধী হলাম?’— প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ছোট্ট ছেলেটি।



আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।