শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি


প্রকাশিত: ০৭:০৬ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। একইসঙ্গে জঙ্গিবাদের অর্থের যোগানদাতা সকল ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান করেছেন। তারা ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান।

বুধবার রাতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব জানান সংসদ সদস্যরা। এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। আলোচনা করেন সরকারি দলের মাহবুবউল আলম হানিফ, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আবদুল মান্নান, অধ্যাপক আলী আশরাফ, ড. হাছান মাহমুদ ও মনিরুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে নৌ-পরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, খালেদা জিয়ার চোখে ছানি পড়েছে বলেই উনি দেশের উন্নয়ন দেখতে পান না।  খালেদা জিয়া জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের গণতন্ত্র চান। তবে এদেশে সে ধরনের গণতন্ত্র আর আসবে না। আর কাউকে আন্দোলনের নামে মানুষকে নির্বিচারে পুড়িয়ে হত্যার সুযোগ দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। এখনও পাকিস্তানের বাংলাদেশের দূতাবাস কয়েকজন কর্মকর্তা জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছে। ঢাকাস্থ দূতাবাস কাশিমবাজারের কুঠিরে পরিণত হয়েছে। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিষয়টি আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে হবে।

তিনি পাকিস্তানের কাছে পাওয়া ৩৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ আদায় করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের প্রয়োজনে দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, একজন মন্ত্রী, এমপি, পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা ভুল করলে জেলে যেতে হয়। আর ডেইলি স্টার সম্পাদক রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করলেন, আমাদের ন্যাংটা করা হলো- তার কিছু হবে না এটা হতে পারে না। এমন আইন থাকতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ ছাপানোর দায় স্বীকার করেছেন মাহফুজ আনাম। কিন্তু বিবিসি সম্পাদকের মতো সাহস দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেননি। তথ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাব, হলুদ সাংবাদিকতা থেকে নাগরিকদের রক্ষার জন্য নাগরিক সুরক্ষা আইন করা হোক।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, পাকিস্তানের পুরনো প্রেম খালেদা জিয়া ভুলতে পারেন না। দেশে ওনার শান্তি নেই, শান্তি ওনার পেয়ারে পাকিস্তানে।

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে হানিফ বলেন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জেনেশুনেই মাহফুজ আনাম ডেইলি স্টারে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় একটি অশুভ মহলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন। সুশীল সমাজের প্রতি প্রশ্ন- মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর পরে শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ ১১টি মাস জেল খাটতে হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ যাতে এ ধরনের ভুল করতে না পারে সেজন্য বি-রাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিযে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

আবদুল মান্নান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ধ্বংস ও সরকারকে অকার্যকর করতেই ৯২ দিন ধরে নির্বিচারে মানুষ চালিয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। বিএনপি এমন একটি দল যার ঘোষণাপত্র নেই, তিন পাতার গঠনতন্ত্র। জন্মলগ্ন থেকেই এ দলটি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, সরকারের নীতি যদি হয় উন্নয়নের সিংহভাগ গুটিকয়েক লোকের হাতে দিয়ে দেয়া, তাহলে এটা জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না। গোটা উন্নয়নের মডেলকে ঢেলে সাজাতে হবে, অনুসরণ করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সূচিত সূচি। দেশে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে অনিয়মে জড়িত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭৯ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এদিকে কারোর খেয়াল নেই।

অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, বিশাল এক সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদরাও আজ বলতে বাধ্য হচ্ছেন- বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোলমডেল। অনেকের এতো উন্নয়ন সহ্য হয় না। তাই মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

এসএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।