‘সাখাওয়াত মোচড় দিয়ে আমার পা ভেঙে দেয়’


প্রকাশিত: ১০:২৮ এএম, ০২ মার্চ ২০১৬

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাতীয় পার্টির নেতা ও যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন মুক্তিযুদ্ধা মিরন শেখের পা মোচড় দিয়ে ভেঙে দেন বলে অভিযোগ করেছেন সাক্ষী নিজেই।

বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি পেশকালে এই অভিযোগ করেন মিরন শেখ।

এদিন মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন প্রসিকিউশনের ৬ষ্ঠ সাক্ষী  মিরন শেখ। সাক্ষীর জবানবন্দি পেশ ও জেরার সময় প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন  ও  রেজিয়া সুলতানা চমন উপস্থিত ছিলেন।

মামলায় সাখাওয়াত হোসেন ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন; মো. বিল্লাল হোসেন, মো. ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ সরদার, মো. আজিজ সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মো. লুৎফর মোড়ল এবং মো. আব্দুল খালেক মোড়ল। আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন সাখাওয়াত হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন ও মো. লুৎফর মোড়ল।

সাক্ষীর জবানবন্দি পেশ করার পরে তাকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস শুক্কুর খান এবং আব্দুস সাত্তার পালোয়ান জেরা করেন। জেরা শেষে মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন আদালত।

সাক্ষী মিরন শেখ তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমি মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করি। যুদ্ধ চলাকালে আমি আমার স্ত্রী ও ভাই-বোনদের দেখতে গ্রামের বাড়িতে আসি। গ্রামে আসার খবর পেয়ে পার্শবর্তী চিংড়া রাজাকার ক্যাম্পের ৩০/৪০ জন রাজাকার আমাদের গ্রাম ঘেরাও করে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে’।

তিনি আরো বলেন, ‘এরপর ১০/১২ জন রাজাকার আমাদের বাড়ি ঘেরাও করলে আমি দৌড়াতে থাকি এবং এক পর্যায়ে মাঠের মাঝখানে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে যাই। এই মামলার আসামি আব্দুল খালেক হত্যা করার জন্য আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে আমার বাম হাতে গুলি লাগে এবং আমার বাম হাতের দুটি আঙ্গুল ঝুলে পড়ে। এরপর আমাকে রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আসামি সাখাওয়াতের নির্দেশে আমাকে পিটাতে থাকলে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি’।

তিনি বলেন, রাতে জ্ঞান ফিরলে রাজাকার সাখাওয়াত আমার কাছে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প সম্পর্কে তথ্য চায়। আমি তথ্য দিতে না চাওয়ায় রাজাকার সাখাওয়াত মোচড় দিয়ে আমার বাম পা ভেঙে দেয় এবং তখন আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। পরের দিন জ্ঞান ফিরলে দেখতে পােই আমি কপোতাক্ষ নদের দক্ষিণ পাড়ে পড়ে আছি। আমার কান্নাকাটির শব্দ শুনে গ্রামের লোকজন গরুর গাড়িতে করে আমাকে ভারতের টাকি হাসপাতালে ভর্তি করায়। তখন ডাক্তার আমার অপারেশন করে আমার দুইটি আঙ্গুল কেঠে ফেলে দেন। পরে আমি দেশে ফিরে এসে দেখতে পাই, রাজাকাররা আমার বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দিয়েছে।   

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। মোট ১২ আসামির মধ্যে বাকি তিনজনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ১৬ জুন সাখাওয়াতসহ আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এর আগে আদালত ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন।

২০১২ সালের ১ এপ্রিল থেকে এ মামলায় তদন্ত শুরু করে গত ১৪ জুন শেষ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান। মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩২ জনকে এ মামলার সাক্ষী করা হয়।

শাখাওয়াত ১৯৯১ সালে জামায়াত থেকে যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে একই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নেন। আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগে বিচার চলছে।  

এফএইচ/এসকেডি/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।