তিন বছর ফাইলবন্দি মেডিকেলে শিক্ষক নিয়োগ-পদোন্নতি নীতিমালা
দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বর্তমানে শতাধিক মেডিকেল কলেজ পরিচালিত হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য হালনাগাদ কোনো নীতিমালা নেই। ১৯৮৮ সালের অর্থাৎ ২৮ বছরের পুরোনো নীতিমালার আলোকে শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। মান্ধাতা আমলের নীতিমালার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রদানের ফলে অধিকাংশ মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) উদ্যোগে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে একটি হালনাগাদ মেডিকেল কলেজে শিক্ষক ও পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন করে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনো পর্যন্ত নীতিমালাটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২৮ বছরে দেশে চিকিৎসা উচ্চশিক্ষায় ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। বর্তমান চিকিৎসা শিক্ষার সঙ্গে আগের শিক্ষার গুণগত মানের বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। এক সময় কোনো বিষয়ের উপর ছয়মাস বা এক বছরের ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলেই একজনকে ভালো চিকিৎসক বা শিক্ষক বলা হলেও কালের পরিক্রমায় পাঁচ বছর মেয়াদি এফসিপিএস, এমডি, এমএসসহ নতুন নতুন বিষয়ভিত্তিক উচ্চ শিক্ষা চালু হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা শিক্ষা পদ্ধতিতে একজন চিকিৎসককে উচ্চ ডিগ্রি পেতে হলে একাধিক পাবলিকেশনসহ নানা শর্ত পূরণ করতে হয়। কিন্তু পুরোনো নীতিমালায় উচ্চতর ডিগ্রি থাকার বাধ্যবাধকতা নেই।
বর্তমানে দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩৭টি। তার মধ্যে ৩১টি সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ও বাকি ছয়টি সেনা মেডিকেল বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন ৩১টি সরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ১শ ৩৭টি ও বেসরকারি ৭২টি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ১শ ১০টি। এছাড়া সরকারি একটি ডেন্টাল ও আটটি ডেন্টাল ইউনিটে ৫শ ১৭টি ও ২৫টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ১ হাজার ৫শ ৭৫টি আসন রয়েছে।
বিএমডিসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রখ্যাত চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ এস এম গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নিয়োগ পদোন্নতি নীতিমালা হালনাগাদকরণ কমিটি গঠন করা হয়। এ পাঁচ সদস্যের কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১৩টি বিষয়ের উপর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও বিভিন্ন সোসাইটির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নে কী কী করা উচিৎ সে সম্পর্কে পরামর্শ নেয়া হয়। ২০১৩ সালে একটি নীতিমালা করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেটি আজও আলোর মুখ দেখেনি।
বিএমডিসির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দেশে শতাধিক মেডিকেল কলেজ থাকলেও সেগুলোতে যোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা দিনকে দিন কমছে। বিশেষ করে মৌলিক বিভিন্ন বিষয় যেমন- অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, ফার্মাকোলজি ও প্যাথলজি বিষয়ে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমছে। হালনাগাদ নীতিমালা না থাকায় মৌলিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে কলেজ কর্তৃপক্ষের জন্য বাধাধরা নিয়ম না থাকায় অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষাগতযোগ্যতার অনেকেই শিক্ষক পদে নিয়োগ পাচ্ছেন। ফলে চিকিৎসা শিক্ষা প্রদানের যোগ্য শিক্ষকের প্রকৃত সংখ্যা কমছে।
শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিলম্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএমডিসির রেজিষ্ট্রার ডা. জেড এইচ বসুনিয়া জাগো নিউজকে জানান, তারা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির খসড়া নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। চিকিৎসা শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে অনতিবিলম্বে নীতিমালাটি অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রণয়ন করা উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমইউ/এনএফ/এআরএস/এবিএস