‘হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসবে না’

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৪ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০২৩

রাশেদ খান মেনন। সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। সাবেক মন্ত্রী। বামপন্থি এ রাজনীতিক মহাজোট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন জোটে থেকেও।

রাজনীতির চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: সম্প্রতি ১৪ দলের বৈঠকে মুখপাত্র আমির হোসেন আমু রাজনৈতিক সংলাপের কথা উড়য়ে দিয়েছেন, যেখানে আপনিও উপস্থিত ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে কি আসলে সংলাপের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায়?

রাশেদ খান মেনন: সংলাপের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কী ঘটবে তা আমি কীভাবে বলবো? যা ঘটাবার বিএনপি ঘটাচ্ছে।

আমরা নির্বাচনের কোনো বিকল্প দেখছি না। সরকার নির্বাচনের আয়োজন করছে। এর বাইরে তো এখন আর কোনো আলোচনা হতে পারে না। বিএনপি ফের সন্ত্রাস ঘটিয়ে নির্বাচন ভণ্ডুল করতে চাইছে। এভাবে তো রাজনীতি হয় না। বিএনপিকে একটি অবস্থানে আসতে হবে নির্বাচন করার ব্যাপারে।

জাগো নিউজ: ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আর ২০১৮ সালে অংশ নিয়ে বিএনপি তো এখন এক ধরনের অবস্থান নিয়েছে। এই সরকারকে আর কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চাইছে না।

আরও পড়ুন>> ‘সামনের নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বিপদ ঘটবে’

রাশেদ খান মেনন: ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোট মূলত কার্যকরভাবে অংশ নেয়নি। আমার নির্বাচনী এলাকায় দেখেছি, বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস নির্বাচনী মাঠে নামেনইনি। তারা কোনো প্রচারণাও চালায়নি।

জাগো নিউজ: সেই সুযোগ ছিল? সরকার তো কোণঠাসা করে রেখেছিল?

রাশেদ খান মেনন: কেন সুযোগ থাকবে না? আমার এলাকায় তো কোনো বাধা-বিপত্তির ঘটনা ঘটেনি।

জাগো নিউজ: ওই নির্বাচনের আগে প্রচুর মামলা হয়েছিল। গায়েবি মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এলাকাছাড়া ছিল, এমন অভিযোগও আছে।

রাশেদ খান মেনন: এমন অভিযোগ সব নির্বাচনের আগেই করা হয়।

জাগো নিউজ: বিএনপি-জামায়াত এখন যে শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে, তা কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?

রাশেদ খান মেনন: আমেরিকা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। নির্বাচনের আগেও সে পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, আবার নির্বাচনের পরেও করতে পারে। কম্বোডিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা বন্ধ করে দিয়ে সরকারপ্রধানের পতন ঘটালো। গত সপ্তাহে এ ঘটনা ঘটলো।

আমেরিকা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। নির্বাচনের আগেও সে পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, আবার নির্বাচনের পরেও করতে পারে। কম্বোডিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা বন্ধ করে দিয়ে সরকারপ্রধানের পতন ঘটালো। গত সপ্তাহে এ ঘটনা ঘটলো।

জাগো নিউজ: এমন আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে?

রাশেদ খান মেনন: যুক্তরাষ্ট্র সে লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে চাইছে।

জাগো নিউজ: এতে বিএনপির কী লাভ?

রাশেদ খান মেনন: লিখে রাখেন, শেখ হাসিনার পতন ঘটলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসবে না।

জাগো নিউজ: তাহলে কে আসবে ক্ষমতায়?

আরও পড়ুন>> ‘এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবো না, এটি চূড়ান্ত’

রাশেদ খান মেনন: বিএনপি চাইছে অন্য কেউ ক্ষমতায় আসুক। বিষয়টি এমন যে, ‘আমিও খাবো না, তোমাকেও খেতে দেবো না’।

জাগো নিউজ: আপনার এ ধারণার বিপরীতেও আলোচনা আছে। অনেকেই মনে করছেন আপনারাও ‘এক্সিট রুট’ খুঁছছেন?

রাশেদ খান মেনন: আমি তা মনে করি না। শেখ হাসিনা এত দুর্বল হয়নি যে সে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছে। একটি সমাবেশ বা রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থান নিলেই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় না। যাই ঘটুক বিএনপি ক্ষমতায় আসবে না।

জাগো নিউজ: তার মানে বিএনপির হাতে আপনারাও ক্ষমতা ছাড়বেন না। তৃতীয় কোনো শক্তি ক্ষমতায় এলে সমস্যা নেই?

রাশেদ খান মেনন: বিএনপি-জামায়াতের হাতে বাংলাদেশের ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। এটি সোজা কথা।

জাগো নিউজ: এর আগে মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এনেছিল। আবার যদি দেয়?

রাশেদ খান মেনন: ক্ষমতা দেওয়ার ফলশ্রুতিতে আমরা বাংলাদেশের সংকট দেখেছি। জঙ্গিবাদ দেখেছি। হাওয়া ভবন, ২১ আগস্ট দেখেছি। লুটপাট দেখেছি।

জাগো নিউজ: জনগণ ক্ষমতায় আনলে কী করার আছে? এবার কতটুকু চাপ অনুভব করছেন?

রাশেদ খান মেনন: আমি কোনো চাপ অনুভব করছি না। খুব বেশি একটা চাপ নেই।

জাগো নিউজ: গত দুটি জাতীয় নির্বাচন থেকে আসন্ন নির্বাচনকে আলাদা করা যায়?

রাশেদ খান মেনন: এবার শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হবে।

ক্ষমতা দেওয়ার ফলশ্রুতিতে আমরা বাংলাদেশের সংকট দেখেছি। জঙ্গিবাদ দেখেছি। হাওয়া ভবন, ২১ আগস্ট দেখেছি। লুটপাট দেখেছি।

জাগো নিউজ: বিএনপি অংশ না নিলে?

রাশেদ খান মেনন: বিএনপি নির্বাচনে না এলে তার ফল ভোগ করতে হবে। বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচন হবে।

জাগো নিউজ: আপনি কি মনে করেন রাজনীতিতে ইতোমধ্যে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়ে গেছে?

রাশেদ খান মেনন: আমি মনে করি না বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন কোনো সংকট আছে। তবে সংকট তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

জাগো নিউজ: ভবিষ্যতে যদি সংকট তৈরি হয়, তার দায় বর্তমান সরকারের কতটুকু?

রাশেদ খান মেনন: সরকারের দায় কেন থাকবে? সরকার তো নিয়মের মধ্যে থেকে রাজনীতি করছে, নির্বাচন করছে।

জাগো নিউজ: বিএনপির বিকল্প কোনো বিরোধী শক্তিও গড়ে উঠলো না। আপনারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। ভবিষ্যৎ কী?

রাশেদ খান মেনন: বাংলাদেশে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির স্বাভাবিক পরিবেশ ছিল না। হত্যা, খুনের যে রাজনীতি তার জের আরও বহুদিন চলবে। হত্যার রাজনীতি ভারতেও আছে। কিন্তু সেখানে সহাবস্থানের রাজনীতি কিছুটা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে সম্ভব হচ্ছে না। নতুন প্রজন্ম এসে পরিবর্তন করবে বলে আমি মনে করি।

জাগো নিউজ: নতুন প্রজন্ম আপনাদের ওপরেও ভরসা রাখে না।

রাশেদ খান মেনন: না রাখুক। নিজেদের ওপরে ভরসা রাখুক। কিন্তু ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সত্যিকার কোনো পরিবর্তন আসবে না।

আমার বয়স এখন ৮০। আমাকে নতুন প্রজন্মের ওপরই ভরসা রাখতে হয়। পরিবর্তন আসুক সুস্থ ধারায়।

এএসএস/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।