মালয়েশিয়ায় চলছে কল্যাণ বোর্ডের সদস্য অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি মালয়েশিয়া
প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

প্রবাসে এসে কর্মী হিসেবে বৈধ হলেও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সুবিধাপ্রাপ্তি অধরা ছিল রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের। কল্যাণ বোর্ডের সদস্যভুক্তির দাবি ছিল প্রবাসীদের। দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে সরকার গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বৈধ কর্মীদের কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুযোগ দেয়।

ঘটা করে গেল বছরের ২৫ মার্চ দূতাবাসে সদস্য অন্তর্ভুক্তির উদ্বোধন করেন তৎকালীণ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি। সেদিন চারজন সরাসরি মন্ত্রীর হাতে আবেদন তুলে দেন। এরপরই যেন হারিয়ে গেছে সকলের আগ্রহ। দূতাবাস প্রচারণাও করেছে বেশ এখনও প্রচারণা অব্যাহত আছে। কিন্তু ঘাটতি যেন কোথাও থেকেই গেছে। না হলে মালয়েশিয়া থেকে সদস্যভুক্তির হার তুলনামূলক কম কেন? কারণ হিসেবে জানা গেছে অনেকেই জানে না কীভাবে কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে হয়।

বিজ্ঞাপন

হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত বছর উদ্বোধনের পর থেকে লিফলেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। জানা গেছে, সদস্যভুক্তির কার্যক্রম জোরদার করার জন্য একটি নির্দিষ্ট টার্গেট ঠিক করেছে দূতাবাস। যা অর্জন করার জন্য সচেষ্ট। ২৫ অক্টোবর দূতাবাসে ফের শুরু হয়েছে সদস্যভুক্তির কার্যক্রম। এ সময় কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ গ্রহণকারীদের হাতে সনদ তুলে দেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অতিরিক্ত সচিব মো. শফিকুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মো: জহিরুল ইসলাম, কল্যাণ বোর্ডের উপসচিব মোহাম্মদ আমিনুর রহমান, প্রোগ্রামার পাপ্পু মজুমদার, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়ার সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমাদুল কবির, সাধারণ সম্পাদক বশির আহমদ ফারুক।

Malaysia-4

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ এর সদস্যপদ আবেদন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইট www.wewb.gov.bd এ পূরণ করে, ১৯০ রিংগিত ব্যাংক ড্রাফটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা প্রদান করতে হয়। কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে ২ কপি ছবি, পাসপোর্ট কপি, ভিসা কপি, আবেদন জমা দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় যাচাই ও প্রক্রিয়া শেষে দূতাবাস ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডকে জানিয়ে দেয় এরপর কল্যাণ বোর্ড সদস্য সনদ প্রদান করে।

মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করে। প্রচারপত্রে উল্লেখ রয়েছে, সদস্যপদ গ্রহণকারী প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের জন্য প্রতিবছর বোর্ড হতে শিক্ষা বৃত্তি পাবে, প্রবাসীদের সন্তানদের বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবাসী কোটায় ভর্তির সুযোগ, প্রবাসে মৃত্যু হলে মৃতদেহ দেশে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান, মৃতদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তরের সময় বিমানবন্দরে লাশ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য, প্রবাসে মৃত্যু হলে মৃত কর্মীর পরিবারকে ৩ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা, পুনর্বাসন লোনসহ আরও নানা কল্যাণমূলক সুযোগ-সুবিধা পাবে।

তবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বৈধ হলেও কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে তেমন সাড়া পাওয়ার পেছনে অনলাইনে ফরম পূরণ করাকে অধিকাংশই জটিল ও ঝামেলা মনে করে। নানা ধরনের তথ্য, কোম্পানির তথ্য ইত্যাদি প্রদানে রয়েছে সংকোচ ও দ্বিধা। এসব কাটিয়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

Malaysia-4

এ বিষয়ে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মো. জহিরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, 'অনলাইনে ফরম পূরণকে জটিল মনে করলে দূতাবাসে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দূতাবাস সব সহযোগিতা প্রদান করছে। তিনি পাশাপাশি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে প্রবাসীদের পাশে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসার জন্য কমিউনিটিকে অনুরোধ করেছেন।

কল্যাণ বোর্ডের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রবাসী কর্মীদেরও পরিবারের সুরক্ষা ও মানসম্পন্ন সেবা দেয়া, তাদের আস্থা অর্জন, মৃত কর্মীদের মরদেহ দেশে আনা, ব্যয় নির্বাহ এবং এ সংক্রান্ত কাজে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকার গত বছরের ৯ জুলাই ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিল ২০১৮’ আইন পাস করে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখা প্রবাসী কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা উদ্ভূত সমস্যার সমাধান কল্পে এ ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ গঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

আইনে আরও রয়েছে, বিদেশে কর্মরত অভিবাসী কর্মী নির্যাতনের শিকার, দুর্ঘটনায় আহত, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে বিপদগ্রস্ত হলে তাকে উদ্ধার ও দেশে আনা, আইনগত ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া, ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশে দেশে-বিদেশে হেল্প ডেস্ক ও সেফ হোম পরিচালনা করবে বোর্ড।

Malaysia-4

দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর (২) মো. হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, প্রবাসী কর্মীদের পারিবারিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি। আগামীতে আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত কার্যক্রম চালু করা হবে যাতে প্রতিটা কর্মী সুরক্ষা পায়। এক্ষেত্রে কমিনিউটি সহযোগিতা খুব প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

মালয়েশিয়া প্রবাসী শ্রমিক নেতা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকার যে আন্তরিক, তা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য কার্যক্রম অন্যতম উদ্যোগ। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের এ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচার করা হলে দূতাবাসে গিয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার আবেদন আরও বাড়বে।

এমআরএম/জেডএ/পিআর

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com