নরওয়ের যেসব চাকরিতে সর্বোচ্চ বেতন

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:১৯ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

উত্তর ইউরোপের একটি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র (রাজার শাসন চলে কিন্তু আক্ষরিক অর্থে কোনো ক্ষমতা নেই) নরওয়ের অফিসিয়াল নাম কিংডম অব নরওয়ে। রাজধানী অসলো। নরওয়ের মুদ্রাকে ক্রোনার বলা হয়। ১ ক্রোনারে দাঁড়ায় বাংলাদেশি ১০ টাকা। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আন্না সলবার্গ।

নরওয়ের পূর্বে সুইডেন, দক্ষিণে ফিনল্যান্ড ও পশ্চিমে রাশিয়া অবস্থিত। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ও ব্যারেন্টস সাগরের জলসীমা রয়েছে। এর আয়তন ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৫২ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৫৫ লাখ। দেশটিতে প্রতিবর্গ কিলোমিটারে ১৬ হাজার ৫৩ জন বসবাস করে। ২য় বৃহত্তম শহর বার্গেন। পর্যায়ক্রমে ট্রন্ডহাইম, ট্রমসো, স্টাব্যাংগার ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

দেশটিতে অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছে পাকিস্তানিরা। এরপর সোমালিয়া, আফগানিস্তান ছাড়াও ইউরোপের নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে পোলিশ, সুইডিস এবং লিথুয়ানিয়ান ও লাটভিয়ার নাগরিক। নরওয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ও শান্তিপ্রিয় দেশ। নরওয়ে নিশীথ সূর্যের দেশ নামেও পরিচিত। যেখানে মধ্যরাতেও সূর্যের দেখা মেলে।

নরওয়ের নাগরিকদের পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন ও উন্নত পরিবেশ দিয়ে থাকে দেশটি। নরওয়েজিয়ানরা আইনের প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল। আর এ কারণেই কাজের পরিবেশ উন্নতমানের।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

নরওয়েতে যেসব সেক্টরে বেশি বেতন দেয়া হয়-

কৃষি ও ফার্মিং, কনস্ট্রাকশন, ক্লিনিং স্টাফ, সিফুড ওয়ার্কার্স, ইলেকট্রনিক্স হসপিটালিটি, রিসার্চ। অন্যান্য সেক্টরের বেতন কেমন হবে তা নিয়েই আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া জানানো হবে লিভিং এক্সপেন্স কেমন।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কর্মীদের সব থেকে বেশি বেতন দিয়ে থাকে নরওয়ে। দেশটিতে যেমন বেতন বেশি দেয়া হয় সেই তুলনায় খরচের পরিমাণও কম নয়। দেশটিতে অফিসিয়ালি বেতন নির্ধারণ করা নেই। বেতন কেমন হবে সেটা অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। যারা গবেষণার কাজে নিয়োজিত তারাই সবচেয়ে বেশি বেতন পেয়ে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া যারা রেস্টুরেন্ট, ক্লিনিং জব কিংবা কনস্ট্রাকশনে লেবারের কাজ করেন থাকেন তারা কম টাকা আয় করে থাকেন। নরওয়েতে মিনিমাম কোনো বেতন কাঠামো না থাকলেও সবাই বেশি বেতন পেয়ে থাকে। বয়স, দক্ষতা আর যোগ্যতা এই তিনের উপর ভিত্তি করে নরওয়েতে বেতন নির্ধারণ করা হয়। ১৮ বছরের উপরে হলে ঘণ্টা হিসেবে বেতন নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ ঘণ্টায় কত ক্রোনার করে দেওয়া হবে সেটা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

এগ্রিকালচার এবং ফার্মিং :

এগ্রিকালচার কিংবা ফার্মিংয়ের জন্য মূলত নরওয়েজিয়ানরা সিজনাল ভিসায় বাহিরের দেশ থেকে কর্মী নিয়ে থাকেন। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের মানুষ এই তালিকা থেকে অনেক আগেই বাদ পড়েছে। তার অনেক কারণ রয়েছে- মূলত সিজনাল ভিসায় বাহির থেকে কাউকে আনলে ৬ মাসের ভিসায় চুক্তি দিয়ে নেয়া হয়। এই সিজনাল ভিসার মূল শর্ত হচ্ছে আপনাকে ৬ মাস কাজ করার পর দেশে ফেরত চলে যেতে হবে এবং ভিসার কোনোভাবেই মেয়াদ বাড়াতে পারবেন না।

বিজ্ঞাপন

শর্ত পূরণ করে দেশে চলে গেলে ৬ মাসের মধ্যে আপনি সেকেন্ড টাইম আবার সিজনাল ভিসায় নরওয়ে আসতে পারবেন কিন্তু বাংলাদেশি যারাই আগে সিজনাল ভিসায় নরওয়ে এসেছে তাদের কেউই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফেরত যায়নি ফলে বাংলাদেশিদের জন্য এই ভিসার পথ আজীবনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন আপনার হাতে অপশন আছে যদি আপনি ইউরোপের অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট হোল্ডার হন তাহলে এই কাজ করতে পারবেন। ৬ মাসের না চাইলে স্থায়ীভাবে করতে পারবেন।

যদি এগ্রিকালচার সেক্টরে কাজ করেন তাহলে শুরুতে ১২৪.১৫ ক্রোনার করে বেতন দেয়া হবে। আর বয়স ১৮ এর নিচে হলে ৯৮.৬৫ ক্রোনার করে দেয়া হবে।

অদক্ষ অর্থাৎ যাদের বিশেষ কোনো দক্ষতা নেই তারা শুরুতে ১৩৮.৫৫ ক্রোনার কমপক্ষে ঘণ্টায় পাবেন এবং সর্বোচ্চ ১৬৮.৫০ করে। যদি বয়স ১৮ এর নিচে তারা ১১৫ ক্রোনার করে কমপক্ষে।

বিজ্ঞাপন

কনস্ট্রাকশন :

নরওয়েতে প্রচুর বিদেশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে কনস্ট্রাকশন, টানেল, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে থাকেন। যেমন- পোল্যান্ড লিথুয়ানিয়ান, লাটভিয়া, রাশিয়ান, ইউক্রাইনের নাগরিকেরা। তবে যে কেউ চাইলে এই কাজ করতে পারবেন। যদি আপনি এসব কাজে প্রফেশনাল হন তাহলে অনেক টাকা বেতন পাবেন। কনস্ট্রাকশনের কাজে দক্ষ শ্রমিকের বেতন শুরু ১৯৭.৯০ ক্রোনার প্রতিঘণ্টায়। আর যারা লেবার হিসেবে কাজ করে তাদের ১৭৭.৮০ ক্রোনার ঘণ্টাপ্রতি বেতন দেয়া হয়।

সিফুড :

বিজ্ঞাপন

নরওয়েতে সিফুড ওয়ার্কার্স পেশায় ভালো কিছু করার সুযোগ রয়েছে। তবে এই সিফুড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে হলে নরওয়েজিয়ান ভাষায় দক্ষ হতে হবে। ওইসব কাজের ক্ষেত্রে মূলত প্রসেসিংয়ে কাজ হয়ে থাকে। সিফুড ওয়ার্কার্স হিসেবে কাজ করলে প্রতিঘণ্টায় ১৭৩.৫০ ক্রোনার করে বেতন পাবেন আর যদি স্কিলড ওয়ার্কার্স আর প্রোডাকশনের কাজ করেন তাহলে ১৮৩.১৫ ক্রোনার ঘণ্টাপ্রতি বেতন হবে।

ইলেকট্রিশিয়ান-প্লাম্বিং-পেইন্টার :

যদি ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বিং কিংবা পেইন্টার হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে যত ইচ্ছা ততো আয় করতে পারবেন। তবে কারো অধীনে কাজ করলে ২১১.৭০ ক্রোনার ঘণ্টাপ্রতি দেয়া হবে। আর যদি আপনার কোনো সহযোগী থাকে সে পাবেন ১৮৪.৩৬ ক্রোনার করে ঘণ্টাপ্রতি। যাদের প্রফেশনাল কোনো ডিগ্রি নেই তারা নরওয়েতে কাজের জন্য কোর্স করতে পারবেন। দেশটিতে ভোকেশনাল স্কুল আছে যারা ইমিগ্রান্টদের ভাষা শিক্ষা এবং এসব স্বল্প মেয়াদি ডিপ্লোমার কোর্স করে থাকে চাইলে সেই ডিপ্লোমা করে নিতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

রেস্টুরেন্ট-ক্যাটারিং-হোটেল-ট্যুরিজম :

যাদের বয়স ২০ বছরের উপর এবং ৪-৫ মাসের এসব সেক্টরে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে তারা কমপক্ষে ১৬৭.৯০ ক্রোনার করে ঘণ্টাপ্রতি বেতন পাবেন। ১৮ এর নিচে হলে ১৩৪ ক্রোনার করে পাবে। এই সেক্টরগুলোতে ঘণ্টাপ্রতি আয়ের সুবিধা বাদেও বাড়তি কিছু আয়ের সুযোগ থাকে। যেটাকে টিপস বলা হয়ে থাকে। মাস শেষে টিপসের টাকা হিসেব করলে পোল্যান্ডের এক মাসের বেতন দাঁড়াবে।

গবেষক-ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তার :

নরওয়েতে যারা সর্বোচ্চ বেতন পান তারা হলেন গবেষক ও চিকিৎসক। এরপরে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার। তাদের ঘণ্টা হিসেবে বেতন দেয়া হয় না। মূলত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। তবে কমপক্ষে একজন গবেষক ৪৫০০০০ ক্রোনার করে আয় করতে পারে। চিকিৎসকদের কমপক্ষে ৪ লাখ ৫০ হাজার ক্রোনার থেকে ৫০ হাজার ক্রোনার বাৎসরিক বেতন হয়ে থাকে।

অন্যান্য পেশায় বেতন :

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

যারা অন্যান্য সেক্টরে কাজ করে থাকে তাদের সবার কমপক্ষে বেতন শুরুতেই ১৬৮ ক্রোনার। তবে বাস/ট্রাক ড্রাইভারের বেতন বছরে প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার ক্রোনার থেকে ৪ লাখ ৪০ হাজার ক্রোনার পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর যারা ট্যাক্সি চালান তাদের আয় আরও বেশি হয়ে থাকে। বছরে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার ক্রোনার।

যুবরাজ শাহাদাত/এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com