সিঙ্গাপুরে এখন সবচেয়ে বড় করোনা ক্লাস্টার ‘S11’ ডরমেটরি

সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বড় করোনা ক্লাস্টার পংগল S11 ডরমেটরি। ১ লা এপ্রিল থেকে এই প্রথম ১০ ও ১১ মে এই ডরমেটরি থেকে করোনাভাইরাসে কোনো ব্যক্তি শনাক্ত হয়নি৷ দেশটিতে এখন বড় ক্লাস্টার বিভিন্ন ডরমেটরিগুলো৷ শুধুমাত্র S11 থেকেই এখন পর্যন্ত ২৫৪৫ জন করোনা আক্রান্ত অভিবাসী শনাক্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ২১ হাজারের উপরেও ব্যক্তি করোনায় শনাক্ত যারা ডরমেটরিতে থাকেন৷ মোট আক্রান্তের ৯০ ভাগের উপরে ডরমেটরির সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। আসুন জেনে নেই S11 ডরমেটরি কিভাবে এত বড় ক্লাস্টারে পরিণত হলো।
২৮ মার্চ প্রথম দুইজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় যাদের S11 ডরমেটরির যোগাযোগ রয়েছে। ৪৮ বছর বয়স্ক একজন বাংলাদেশি যিনি সিঙ্গাপুরে লং টার্ম পাস হোল্ডার। তিনিই প্রথম S11 ডরমেটরি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। ৩৪ বছর বয়সী এক ইন্ডিয়ান নাগরিক তিনিও একই দিনে করোনায় পজিটিভ হন এবং তিনি S11 ডরমেটরিতে বাস করতেন৷
৩০ মার্চ S11 ডরমেটরি থেকে আরও দুইজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়৷ সেদিনই নতুন ক্লাস্টার হিসেবে S11 ডরমেটরিকে চিহ্নিত করা হয়৷ পরেরদিন ওখান থেকে করোনায় আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি।
তবে ১ লা এপ্রিল আরও ৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়৷ যা নিয়ে মোট আক্রান্ত ১০ জনে দাঁড়ায়। ৫ এপ্রিল তৃতীয় দিন ডাবল সংখ্যায় আক্রান্ত হয়। একই দিন S11 ডরমেটরিকে আইসোলেশন ঘোষণা করা হয়। সেদিন ওয়েস্টলাইট টগুয়ান ডরমেটরিও একই সাথে আইসোলেশন ঘোষণা করা হয়৷
এই দুই ডরমেটরিতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিকের বাস। দুটি ডরমেটরির শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন রুমে থাকতে বলা হয়৷ আর শ্রমিকরা কিছুটা ভয় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করতে লাগলেন। তাদের চেহারায় ভয় ও শংকা ফুটে উঠে। তবে সবাই প্রত্যাশা করেন সৃষ্টিকর্তা যেন এই মহামারি থেকে সকলকে দ্রুত মুক্তি দেয়।
ডরমেটরি আইসোলেশন ঘোষণা করার পর জনশক্তি মন্ত্রী জোসেফিন টিও বলেছিলেন ‘এই সমস্ত ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো প্রত্যেকের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা নিশ্চিত করা। কেবল সিঙ্গাপুর নাগরিকই নয়, বিদেশি কর্মীরা যারা এখানে আছেন, তারা আমাদের অর্থনীতিতে এবং তাদের নিয়োগকর্তাদের সহায়তা করছেন। আমরা বিদেশি কর্মীদের এই আশ্বাস দিতে চাই যে এই পদক্ষেপগুলি তাদের স্বার্থে নেওয়া হয়েছে এবং এতে তাদের মঙ্গলও রয়েছে।
এরপর S11 ডরমেটরিতে ৮ এপ্রিল মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ জন পার করে। কিন্তু এর পরেরদিন ৯ এপ্রিল একদিনেই ১৬৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়৷ যা নিয়ে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৩ জনে।
এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে S11 ডরমিটরিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৩ এপ্রিল নতুন করে ২২২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় এবং সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮৬ জন।
পরেরদিন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে প্রত্যেকটি ডরমেটরিতে মেডিকেল টিম পাঠানো হবে। অভিবাসীদের শ্রমিকদের সোয়াব টেস্ট করা হবে৷ সেই সপ্তাহে প্রতিদিন তিন সংখ্যায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৭ এপ্রিল মোট আক্রান্ত ১০০০ ছাড়িয়ে যায়৷ পরেরদিন ২৫২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে S11 ডরমেটরি সবচেয়ে বড় ক্লাস্টারে পরিণত হয়৷
২০ এপ্রিল S11 ডরমেটরি থেকে একদিনে সর্বোচ্চ ৪৬৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯৭৭ জন৷
এভাবে S11 ডরমেটরি থেকে করোনাভাইরান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকে ২১ এপ্রিল ১৬৬ জন ব্যক্তি শনাক্ত হয় এবং মোট আক্রান্ত ২০০০ ছাড়িয়ে যায়।
২২ এপ্রিল ৭১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। তিন সপ্তাহ পর ২৫ এপ্রিল প্রথম সিঙ্গেল সংখ্যায় ৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, তারা অভিবাসী কর্মীদের সোয়াব পরীক্ষা কমিয়ে দেননি৷ তাদের দৈনিক ৩০০০ লোকের সোয়াব টেস্ট করার ক্ষমতা থাকলেও তারা আরো বেশি সংখ্যক অভিবাসী কর্মীদের সোয়াব টেস্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরের সপ্তাহে S11 ডরমেটরি থেকে কম সংখ্যক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে থাকে তবে ২৯ এপ্রিল ১৩৪ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়।
এরপর S11 ডরমেটরি থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলেও এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় ক্লাস্টার পংগল S11 ডরমেটরি।
জনশক্তি মন্ত্রী জোসেফিন টিও ৪ মে সংসদে বলেছিলেন, বৃহত্তর ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল আছে। তার বক্তব্যের ছয়দিন পরে, ১০ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জানিয়েছে, S11 ডরমেটরি থেকে নতুন কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি৷ এমনকি ১১ মে এই ডরমেটরি থেকে নতুন কেউ করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়নি।
এপ্রিলের শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম পরপর দুইদিন এই ডরমেটরি থেকে কোন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়নি। আমরা সকলেই প্রত্যাশা করি এই মহামারি থেকে খুব শীঘ্রই মানবজাতির মুক্তি মিলবে। ডরমেটরিতে অবস্থানকারী সকল ভাইদের জন্য দোয়া ও ভালোবাসা রইল।
আসুন একনজরে দেখে নেই আইসোলেশনে থাকা ২৪টি ডরমেটরিতে সর্বশেষ আক্রান্তের সংখ্যা।
১) S11 Dormitory at Punggol
মোট শনাক্ত- ২৫৪৫ জন।
২) Sungei Tengah Lodge
মোট শনাক্ত- ১১৫৯ জন।
৩) Tuas view Dormitory
মোট শনাক্ত- ১২২৩ জন।
৪) Mandai Lodge 1
মোট শনাক্ত - ৪৬৮ জন
৫) North coast Lodge
মোট শনাক্ত - ৩৮৭ জন।
৬) Kranji Lodge 1
মোট শনাক্ত - ৪৫৬ জন।
৭) Changi Lodge 2
মোট শনাক্ত - ৪৩৯ জন।
৮) Cochrane Lodge 2
মোট শনাক্ত - ৩৭০ জন৷
৯) 31 Sungei Kadut Avenue
মোট শনাক্ত -২১৪ জন।
১০) Jurung penjuru Dormitory
মোট শনাক্ত - ৫৯৯ জন।
১১) Westlight Mandai
মোট শনাক্ত - ৪১০ জন।
১২) Cochrane Lodge 1
মোট শনাক্ত- ২৬৭ জন৷
১৩) PPT Lodge 1A
মোট শনাক্ত - ৩০৭ জন।
১৪) Westlight Toh guan dormitory
মোট শনাক্ত - ৩৬৭ জন।
১৫) 21B Senoko Loop
মোট শনাক্ত - ১৭৭ জন।
১৬) Homestay Lodge
মোট শনাক্ত - ২৮৩ জন
১৭) Toh guan dormitory
মোট শনাক্ত - ১৮৮ জন
১৮) Acacia Lodge
মোট শনাক্ত - ১৬৪ জন।
১৯) Shaw Lodge
মোট শনাক্ত - ২০৯ জন।
২০) Tuas south dormitory
মোট শনাক্ত - ২৮৭ জন৷
২১) Tampanies Dormitory
মোট শনাক্ত - ১০৪ জন।
২২) Avery Lodge dormitory
মোট শনাক্ত - ৩২২ জন।
২৩) Cassia @ Penjuru
মোট শনাক্ত - ২৫৯ জন।
২৪) CDPL Tuas dormitory
মোট শনাক্ত - ৩০৫ জন।
এমআরএম/এমএস