দেশপ্রেমিক না হলে দেশের সেবা করা সম্ভব না!

রহমান মৃধা
রহমান মৃধা রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ১০:৫১ এএম, ২২ জানুয়ারি ২০২৩

সুইডেনের কিরুনায় ইউরোপের সবচেয়ে বড় (তরল খনিজ) বিরল ধাতুর খনি পাওয়া গেছে। এটি বিশ্বের সব থেকে বড় ধাতুর খনিগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এই খনি নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই খনিজ পদার্থ সরবরাহ সমস্যা সম্মুখীন হলে কোনো বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে না।

শুধু কি তাই? টেলিফোন, কম্পিউটারসহ সবধরনের ইলেকিট্রিক যন্ত্রপাতি তৈরির ক্ষেত্রে এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোরও ব্যাঘাত ঘটবে। এ মুহূর্তে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে কিরুনায় যেখানে গোটা ইউরোপের টপ লিডারসহ সুইডেনের রাজার উপস্থিতি রয়েছে।

কয়েকদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন একটি খবর প্রকাশ করছে সুইডেন। এটি ইউরোপে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার এবং এই বিপ্লবের জন্য একটি মূল ভূমিকা পালন করবে এবং ইউরোপের এই সংক্রান্ত বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

তদন্তাধীন সুইডেনের এই এলাকায়, লোহা, ফসফরাস এবং বিরল ধাতুর সন্ধান মিলেছে, আরও জানা গেছে যে অনুসন্ধান এই অংশেই সীমাবদ্ধ নয়, কেবল একটি ছোট অংশ পরীক্ষা করা হয়েছে। কিরুনার পার গেইজার এলাকায় বিরল ধাতুগুলো অন্যান্য জিনিসগুলির মধ্যে অন্যতম যা বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং বায়ু টারবাইন তৈরির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

চীনের এই খনি খনন থেকে শুরু করে ধাতু পরিশুদ্ধকরণ এই সব ক্ষেত্রেই একক আধিপত্য রয়েছে। বর্তমানে, প্রশ্নযুক্ত ধাতুগুলি চীন থেকে আসে। খনন এবং পরিশোধন উভয় ক্ষেত্রেই চীন সম্পূর্ণভাবে প্রভাবশালী। এতে একটি ঝুঁকি জড়িত, চীন যদি আর কাঁচামাল সরবরাহ করতে না চায় তবে এটা হবে গোটা ইউরোপের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের কথাও জানা গেছে।

বৃত্তাকার শিল্প পার্কটি এরই মধ্যে বর্তমানের খনিজ খনন, প্রক্রিয়াকরণ এবং উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে ফসফরাস, মাটির উপাদান, ফ্লোরিন নিষ্কাশন এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য নতুন প্রযুক্তিসহ লুলিওতে (লুলিও সুইডেনের একটি শহরের নাম) একটি বৃত্তাকার শিল্প পার্কের পরিকল্পনা করছে৷ যেখানে, আজকের যত বর্জ্য আছে সেগুলো জমা করে নতুন টেকসই পণ্য তৈরি করা যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৭ সাল থেকে উৎপাদন শুরু হবে।

একই সময় ফিনল্যান্ড সমুদ্র শৈকতের তলে শেওলা যা সাধারণ উদ্ভিদ হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে বা উদ্ভিদের মতোই, (শৈবাল সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সৌরশক্তিকে আবদ্ধ করে এবং এইভাবে জলজ বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে) এই শেওলা দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করছে।

যেটা জানানোর জন্য মূলত লেখাটি শুরু করেছি সেটা হলো ইউরোপে যুদ্ধ চলছে, ঠিক তেমন একটি সংকটময় সময় সুইডেন, ফিনল্যান্ড গবেষণা করছে কীভাবে ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির সংকট মোকাবিলা করা যায় এই খনিজগুলো ব্যবহার করে। অন্যদিকে আমরা বাংলাদেশে কে কত টাকা লুটপাট করছে সেটা এবং সরকারের সু এবং কু-কর্মের আলোচনায় মগ্ন। ঠিক একই ঘটনা লক্ষ্য করেছিলাম করোনা প্যান্ডামিকের সময়ও।

আমার প্রশ্ন কীভাবে চলবে আমাদের ভবিষ্যৎ? আর কতকাল পরগাছা হয়ে বসবাস করতে হবে? আমরাও কিন্তু অনেক কিছু উৎপাদন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। সুইডেনেও বিরোধী দল রয়েছে। তারাও নানা বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে থাকে তবে দেশের কঠিন বা সুখের সময় ঠিকই রাজাকে সঙ্গে নিয়ে একত্রে সমস্যার যেমন মোকাবিলা করছে, ঠিক ভালো কাজের জন্য সেলিব্রেটও করছে একসঙ্গে।

আমরা সারাক্ষণ সংসদ ভবন থেকে শুরু করে মাঠে, ঘাটে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিসে, হাডুডু খেলার মতো একে অপরকে টেনে পিছে ফেলার চেষ্টা করছি। বেশিরভাগ সময় ব্যয় করছি অনেকটা শিয়াল-কুকুরের মতো কামড়া-কামড়ি করে অথচ সেই সময়টুকু যদি গুরুত্বের সঙ্গে কাজে লাগানো যেত তবে বাংলাকে অবশ্যই সোনার বাংলা করা সম্ভব। সংসারে ভালোবাসা না থাকলে সংসার করা যায় না, ঠিক দেশকে ভালোবাসতে না পারলে দেশের জন্য ভালো কিছু করার মন মানসিকতা তৈরি হয় না। যার ফলে দেশকে ধ্বংস করা বা দেশের অর্থ পাচার করা সহজ হয় যা সচারচর লক্ষণীয় বাংলাদেশে।

গণমাধ্যমের সব ঘটনাগুলো দেখলে এটাই কিন্তু আমি দেখে আসছি গত ৩৮ বছর ধরে। এমনকি পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলের মতো অনেক বড় এবং ভালো কাজও কিন্তু দেশে গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে হয়েছে, তা সত্ত্বেও কখনও এক সঙ্গে শুকরিয়া আদায় করা শিখিনি। যদিও দেশের শতকরা প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী!

আমাদের লজ্জা শরম বলে যে কিছু আছে সেটা নিয়ে আমার মনে সন্দেহ ঢুকেছে। এত কিছুর পরও আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমাদের এখনও সময় আছে ভালো হওয়ার এবং দেশটাকে পরিপাটি করে সাজাবার এবং এজন্য দরকার মাইন্ড সেট পরিবর্তন; নেভার ট্যু লেট চেঞ্চ আওয়ার মাইন্ড, প্লিজ!

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]