মিশরে রমজান সংস্কৃতিতে ফানুস!

আফছার হোসাইন
আফছার হোসাইন আফছার হোসাইন কায়রো-মিশর থেকে
প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২৩

ফেরাউনদের দেশ যেমন মিশর, ঠিক তেমনি অসংখ্য নবী-রাসুল সাহাবা ওলি আউলিয়াদের দেশও মিশর। পবিত্র কোরআনে ‘মিশর’ শব্দটি পাঁচবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাওয়ালা অনেক নেয়ামত-অনুকম্পায় মিশরীয়দের সিক্ত করেছেন। নীল নদের পানির বরকতে মিশরের জমিন থাকে সবসময় উর্বর। তাই দেশটিকে বলা হয় নীল নদে দান।

বিশ্বের প্রাচীন কৃষ্টি সভ্যতা সমৃদ্ধ এই দেশটিতে রোজা শুরু হয় বেশ ধূমধাম আয়োজনে। এদেশের প্রতিটি বাড়ি, রাস্তা ও দোকানে ফানুস জ্বালানো রমজানের সংস্কৃতি। দেশটির রাজধানী কায়রোর অলি-গলির দোকানগুলো এখন বাহারি রঙের ফানুসে সয়লাব। রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকেই দোকানিরা হরেক রকম ফানুস এনে সাজিয়েছেন দোকান। বিভিন্ন ডিজাইন ও রঙ বেরঙ এর ফানুসের রয়েছে অদ্ভুত ধরনের যতসব বাহারি নাম। যেমন, আল- খামাসি, আবু শামা, আবু লাদ, আল-দালিয়াইয়া, আল-খুম্মাস, আল-বুর্জ, শামামা ইত্যাদি।

মিশরীয়দের কাছে সব থেকে জনপ্রিয় ফানুসটির নাম খামাসি। লোহা ও তামার কাঠামোতে তৈরি রঙিন কাচ দিয়ে ঝরানো ফানুসটি খুবই শক্ত ও টেকসই। ত্রিশ দশকের দিকে মিশরের সংসদ ভবনে এই ফানুসটি ঝোলানো হয়েছিল বলে হয়ত এর এত জনপ্রিয়তা।

রমজান উপলক্ষে ফানুস দিয়ে ঘর সাজানো, রাস্তা আলোকিত করা মিশরীয়দের বহু পুরনো একটি ঐতিহ্য। ফানুস মিশে আছে মিশরীয় রমজান সংস্কৃতিতে। ৩৫৮ হিজরিতে মিশরবাসী ফানুস সংস্কৃতির সঙ্গে প্রথম পরিচিত হন। সে রাতে ফাতেমি খলিফা ‘তামিম মা’দ আল-মুইজ’ কায়রো প্রবেশ করেন। তার সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কায়রোকে ফানুস দিয়ে সাজানো হয়েছিল। সেই থেকে রমজানে ফানুসের ব্যবহার করে আসছে মিশরীয়রা।

আরও পড়ুন: নীলনদের ছোট্ট দ্বীপে যেন ‘সবুজ বাংলাদেশ’

কায়রোর কূটনৈতিক এলাকার ৯ নম্বর রোডের এক দোকানি বলেন, এখানে বিভিন্ন আকার এবং মাপের ফানুস রয়েছে, প্রকারভেদে একেকটি ফানুসের দাম ১০ গিনি (৪০ টাকা) থেকে ৩ হাজার গিনি (১২ হাজার টাকা)। তবে এর মধ্যে ছোট সাইজের ফানুস বিক্রি হচ্ছে বেশি, যার মূল্য ২০০ থেকে ৩০০ গিনি বা ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের রমজানে ফানুসের চাহিদা উল্লেখযোগ্য ভাবেহ্রাস পেয়েছে। কারণ, গত বছরের তুলনায় এবছর ফানুসের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

কায়রো চেম্বার অফ কমার্সের স্টেশনারি ও শিশুদের খেলনা বিভাগের উপ-প্রধান বারাকাত সাফা বলেন, গত বছর প্রায় ৫ মিলিয়ন ফানুস বাজারজাত করলেও এ বছর ২ মিলিয়ন কমিয়ে ৩ মিলিয়ন ফানুস বাজারজাত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বছর মিশরীয় পাউন্ডের বিপরীতে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে ফানুসের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। মিশর প্রতি বছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ও ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে প্রায় ২ লাখ রমজান ফানুস রপ্তানি করে। ক্ষুদ্র পুঁজি নিয়ে বেসরকারি খাতে স্থানীয়ভাবে ফানুস তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে মিশর।

এমআরএম/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]