কেউ তামাশা করলে আমার পায়ের তালু চুলকায়

অমিয় দাশ, যুক্তরাষ্ট্র
হ্যাঁ, আমি শুনেছি অনেক সিরিয়াস দাগী আসামিদেরও অনেক মেয়ে ভক্ত থাকে। বলেই অংশু হো হো শব্দ কোরে হেসে উঠলো। বাঁধন বেশ রাগত স্বরেই অংশুকে বলল, ‘দেখেন, এভাবে আমাকে নিয়ে তামাশা করে হাসবেন না’।
বলেই স্যান্ডেল খুললো। বাঁধন টেবিলের ওপরে একটু ঝুঁকলো। অংশু বেশ ভয় পেয়ে গেলো। আজকালকার মেয়েদের কাণ্ডকারখানা বোঝা মুশকিল। ভাবলো, স্যান্ডেল হাতে উঠালেই ঝেড়ে দৌড় মারবে। পেছনে তাকাবে না। বিপদ বলে কয়ে আসে না। বাঁধন ডান পাটা বাম হাঁটুর ওপরে উঠিয়ে জোরে জোরে পায়ের তলা চুলকালো। বলল, ‘আমাকে নিয়ে কেউ হাসি তামাশা করলে আমার পায়ের তলা চুলকায়’।
অংশু অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে হাত দুটি গুটিয়ে বসে থাকলো। ভাবলো মেয়েটিকে একটু শান্তনা দেওয়া প্রয়োজন। তাই গম্ভীর গলায় বললো, ‘একজন ব্যক্তির মূল্য আর্থিক বা মুদ্রা বিষয়ক বা অন্য কোনো পরিমাণগত ইউনিটে পরিমাপ করা যায় না। প্রতিটি ব্যক্তি অনন্য, এবং তাদের মূল্য অপরিমেয়।’
‘মানুষের সহজাত মর্যাদা এবং মূল্য আছে কেবল মানুষ হওয়ার কারণে। বাঁধন এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে টালুমালু হয়ে তাকালো। বাতাসের মাঝে তাকে কোনো ছকে ফেলা যায় তার অনুধাবন করার চেষ্টা করলো। নিজেকে জগতের কোনো ছকে ফেলা খুবই দুষ্কর ব্যাপার।’
সে তার ছক খুঁজে পেলো কি না বোঝা গেলো না। যখন তার চোখ অংশুর দিকে ফিরে এলো, অংশু আবার বলতে শুরু করলো, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির তার প্রতিভা, দক্ষতা এবং ক্ষমতার মাধ্যমে তার নিজস্ব উপায়ে বিশ্বে কিংবা মহাজগতে ইতিবাচকভাবে অবদান রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিটি ব্যক্তির ভালোবাসার, তৈরি করার, শেখার, বেড়ে ওঠার এবং তাদের চারপাশের লোকদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলার ক্ষমতাও রয়েছে।’
অতএব, একজন ব্যক্তির মূল্য অপরিমেয় এবং কোনো বাহ্যিক কারণ, যেমন তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থান, বা শারীরিক চেহারা দ্বারা তার মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। প্রতিটি ব্যক্তিই মূল্যবান এবং কেবল পৃথিবীতে তার অস্তিত্বের কারণেই সে সম্মান এবং মর্যাদার যোগ্য।
‘এটাতো রাজনীতিবিদদের মতো কথা বললেন’।
অংশু ছদ্মগাম্ভীর্যে ইতস্ততঃ করে বলল, ‘বিষয়টা সে রকম নয়, তবে যা বললাম ওটা সর্বজনীন। আর যদি নির্দিষ্ট করে তোমার কথা বলতে হয়, তাহলে তোমার কাছেও সজীবের মূল্য এক জায়গায় স্থির থাকবে না। সময়ের সাথে উঠা নামা করবে। ঐযে মনে আছে তোমাকে দেয়াশলাইয়ের উপমাটা বলেছিলাম? আমার মনে হয় তোমাদের সম্পর্কের স্পার্ক বা স্ফুলিঙ্গের মাত্রা কমেছে। ফলে সম্পর্কের মূল্য কমে এসেছে, মানুষের মূল্য নয়’।
এই যে জীবনের এক্সচেঞ্জ ভ্যালু আর ক্রেতা বা দামদরকারীর স্থান নিয়ে বাঁধন যেন হতবিহবল। হাত ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বাঁধন উঠে দাঁড়ালো। বলল, ‘চলুন উঠি, বড্ড গরম পড়েছে’।
‘চলো, তোমাকে রিকশা ডেকে দিই’। বলেই অংশু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
অংশু উঠে দাঁড়ানোর সময় লক্ষ্য করল, বাঁধনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়ে চক চক করছে। আর একটু দেরি হলে হয়তো টপ টপ করে কপাল বেয়ে মাটিতে পড়বে।
লেখক: অমিয় দাশ, ফার্মাসিস্ট, ওষুধ প্রস্তুতকারক।
বোকা রেতন, যুক্তরাষ্ট্র। amio7@yahoo.com
এমআরএম/জেআইএম