ঈদে বাংলাদেশি পোশাক না পেয়ে নীলা গড়ে তোলেন বাংলা বুটিক হাউজ

মতিউর রহমান মুন্না
মতিউর রহমান মুন্না মতিউর রহমান মুন্না , গ্রিস প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ১৯ মে ২০২৪

ইউরোপের দেশ গ্রিসে বাড়ছে বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা। ঘর সামলানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সামাল দিচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশি নারীরা। রাজধানী এথেন্সের অলি গলিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন নারীরা। এতে নিজেরাও হচ্ছেন স্বাবলম্বী। দেশেও পাঠাচ্ছেন রেমিট্যান্স।

গ্রিসে বসবাস করছেন প্রায় ৩০ হাজারের মতো বাংলাদেশি। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা হবে প্রায় ৫ শতাধিক। বাঙালি নারীরা যে কর্ম উদ্যোগী, তারই চিত্র দেখা যায় গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে। বাংলাদেশি অনেক নারী এখানে কেউ স্বামী সহায়তায় আবার কেউ কেউ নিজ উদ্যোগেই গড়ে তুলেছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

তাদেরই একজন হাসিনা সুলতানা নীলা, ২০১২ সালে গ্রিসে এসে ঈদের কেনাকাটায় বাংলাদেশি কাপড় না পেয়ে তিনি মাত্র ২০০ ইউরো দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। হাটি হাটি পা পা করে তিনি এখন সফল নারী উদ্যোক্তা।

বাংলা বুটিক হাউজের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সদস্য সফল নারী উদ্যোক্তা হাসিনা সুলতানা নীলা জানান, ২০১২ সালে পারিবারিক ভিসায় গ্রিসে আসি। গ্রিসে আসার দুই মাসের মাথায় চলে আসে ঈদ। বাংলাদেশে থাকাকালীন প্রতি ঈদে নিজের ও পরিবারের সবার জন্য দেশীয় পোশাক কেনা ও পরিধান করলেও গ্রিসে এসে বাংলাদেশি পণ্য না পেয়ে হতাশ হয়ে যাই। গ্রিসে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক থাকলেও তখন মেলেনি দেশীয় শাড়ি, ত্রি-পিস, পাঞ্জাবি। এই বিষয়টি আমার মনে অনেক দুঃখ দেয়। আমার মতো অনেক বাংলাদেশিকে দেখতাম দেশীয় পোশাক কিনতে চাইতেন, কিন্ত পাওয়া যেত না।

নারী উদ্যোক্তা হাসিনা সুলতানা নীলা বলেন ‘সেই দুঃখই একটা সময় স্বপ্নে পরিণত হয়। স্বামীর সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য এনে বিক্রি করা শুরু করি, প্রথম থেকেই ভালো সাড়া পাই। প্রথমে নিজের বাসা থেকেই পণ্যগুলো বিক্রি করতাম। পরে বাংলাদেশ দূতাবাসের বৈশাখী মেলাসহ গ্রিসের বিভিন্ন মেলায় বাংলাদেশি পণ্য নিয়ে স্টল দিতাম।’

এভাবে নীলা ২০১৭ সালে এথেন্সে তিলে তিলে গড়ে তোলেন বাংলা বুটিক হাউস নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। মাত্র ২০০ ইউরো দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করে আজ সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন হাসিনা সুলতানা নীলা।

নীলা বলেন, ‘তখনই নিজেকে সফল মনে হয় যখন গ্রিক, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপালিসহ অন্যান্য দেশীয় ক্রেতারা আমার প্রতিষ্ঠানে এসে বাংলাদেশি পণ্য ক্রয় করে প্রশংসা করে। আমিও চেষ্টা করি বাংলাদেশি পণ্য সম্পর্কে তাদের ভালো ধারণা দিতে।

নতুন করে উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুকদের উদ্দেশ্যে নীলা বলেন, ‘তাদের আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, ধৈর্য্যশীল হতে হবে, কারণ ধৈর্য্য ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না। সৎ এবং পণ্যের মান ভালো হতে হবে, তাহলেই সফলতা একদিন না একদিন আসবেই।’

গ্রিসে রেস্তুরাঁ, মিনি মার্কেট, গার্মেন্ট, মানি ট্রান্সফার এজেন্সি, জুয়েলারি দোকান, পোশাকের ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা সামাল দিচ্ছেন নীলার মতো অনেক বাংলাদেশি নারী।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]