তুমি আমার কে হও গো?
![তুমি আমার কে হও গো?](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/girlfand-20240521123315.jpg)
অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
হেসে সঞ্চয় করা টিফিনের পয়সার থেকে দাম শোধ করে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ ডাকটিকিটটার দিকে। ভাবলাম, আচ্ছা এই গরুর গাড়ি, গরু, গাড়িয়াল, এসবের মধ্যে কোনটা আমি? কাদা, গরুর গাড়ি, নাকি গাড়িয়াল?
পোস্টমাস্টার বলল, ‘স্ট্যাম্পটা খামে লাগিয়ে আমার কাছে দিতে পারো, আমি এখানেই ওই ডাকের বস্তায় দিয়ে দেব। ঠিক চলে যাবে। ঠিকানা লেখা হয়েছে? ঠিকানা লেখা না হলে, ঠিকানা লিখে, ওই লাল ডকবাক্সেও ফেলতে পারো।’ আমি ইতস্তত করে বললাম, ‘না, হ্যাঁ ঠিকানা লেখা হয়েছে। আর একটু দেখে নিই।’
বলেই ফুঁকোর কাছ থেকে সরে এলাম। তোমার কাছে এ চিঠি যাবে, কত হৃদয়ের মাধুরী, আমার ডিএনএ মিশিয়ে লিখেছি চিঠিটি। এ ভালোবাসা ওই বস্তায় এখনই ভরতে মন সায় দিচ্ছিলো না। এ চিঠি আমি আস্তে করে আলগোছে ওই জবা ফুলের মতো টকটকে লাল ডাকবাক্সে রাখবো। যেন আমার প্রতিটি ডিএনএ দম বন্ধ হয়ে না যায়।
চিঠিটা পরে তো বস্তায় ভরবেই। সে ঠিক আছে। তাছাড়া মনে সন্দেহ হলো, পোস্টমাস্টারের হাতে খামটা দিলেই হয়তো সে পরখ করে তোমার ঠিকানা দেখবে। তোমার ঠিকানা দেখবে চশমার ভেতর দিয়ে, তারপর চশমার বাইরে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করবে, ‘কে হয়?’ আমি তখন কি বলবো? আমার কে হয়? তাই তো, আসলে তুমি আমার কে হও গো?
আমি তো কিছুই বলতে পারব না। শুধু বুকের মাঝে একটা ধক্-ধক্, ধক্-ধক্ শব্দ হবে। গলার শব্দ নিঃশব্দ হয়ে যাবে। জানো, এসব জায়গায় আমি কিচ্ছু বলতে পারি না। আমাকে প্রকাশ করতে পারি না। আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় বরফের মতো জমে যায়। পরে সেই বরফ গলে বটে, কিন্তু ততক্ষণের হয়ত দৃশ্যপঠই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
পোস্টমাস্টার আমার নীরবতা দেখে আরও কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘আত্মীয়?’
আমি বললাম,
‘হ্যাঁ।’
আগের পর্ব পড়ুন
বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল যে, ‘আমরা আর জন্মে সাথী ছিলাম। আমার পরম আত্মার আত্মীয়।’ তা কি আর বলা যায়? এটা বললেই পোস্টমাষ্টার হয়তো আমাকে পাগল বলে পরে চিঠিটা ঠিক খুলে পড়বে। পড়ে হয়ত অনেক হাসাহাসি করবে। আর গন্তব্যে পাঠাবেই না। একবার খাম খুললে সে তার অপরাধবোধ বশতঃই পাঠাবে না, এটা একদম নিশ্চিত।
না থাক, তাই ভেবে ওখান থেকে সরে এলাম।
আমি বললাম,
‘আচ্ছা, ঠিকানা চেক করে দেখে লাল ডাকবাক্সে ফেলব।’
চিঠিটা ঠিকমতো বন্ধ হয়েছে তো? আবার একটু হাত, চোখ বুলিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিলাম। চিঠিটা আবার ভালো করে দেখে নিলাম। কোনো রকম ভুলভ্রান্তি হওয়া চলবে না। ভুল হলেই এই খামটা ভর্তি অনেক কথা তোমার কাছে পৌঁছাবেই না। হারিয়ে যাবে। কোথায় হারিয়ে যাবে তাও জানি না। হয়তো নিরুদ্দেশের চিঠিগুলোর মতো পোস্টমাস্টার কেজি দরে ওই পুরনো বই-কাগজ কেনার ফেরিওয়ালাদের কাছে বিক্রি করে দেবে।
ফেরিওয়ালার কাছ থেকে হাত বদল হয়ে গ্রামের হাটের ওই চানাচুর, ছোলা বা বারোভাজার দোকানদারের কাছে চলে যাবে। আমার চিঠি হয়ে যাবে একটা বারোভাজা খাওয়ার খিলি পাত্র। আমার চিঠি তোমার পরিবর্তে দেখবে তৃপ্তি করে খাওয়া কোনো কিশোর কিশোরীর, কিংবা লোকের তৃপ্তিতে ভরা মুখ। চিঠিটা হয়তো ভাববে কি এসে যায়?
কারো একটু হাসিমুখ তো দেখতে পেয়েছে, সেটাই কম কি? সবাই কি আর সবার মনে হাসি ফোটাতে পারে বলো? তারপর চিঠিটাকে কি করবে কে জানে? হয়তো আমার আঁকা দোয়েল পাখির ছবিটা দেখে সন্দীহান হয়ে কাগজটা পড়ে দেখবে। ভাববে কতইনা মনের আকুতি লুকিয়ে আছে এই চিঠিতে। হয়তোবা ভাববে, বিশাল একটা ঢং!
চলবে...
এমআরএম/এমএস