মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরতে অবৈধ প্রবাসীদের দীর্ঘ লাইন

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:০৫ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কুয়ালালামপুরে অভিবাসন দপ্তরের সামনে প্রতিদিন ভোরের আগে থেকেই শতশত বিদেশি নাগরিক লাইন ধরছেন, যেন পরদিন সকালে অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে তারা ‌‘পিআরআরেএম ২.০’ কর্মসূচির আওতায় দেশে ফিরতে পারেন।

কুয়ালালামপুর অভিবাসন দপ্তরের পরিচালক ওয়ান মোহাম্মদ সাউপি ওয়ান ইউসুফ জানান, প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হওয়ায় অনেক প্রবাসী আগের রাত থেকেই সারিতে দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ কেউ রাত ৯টা বা ১০টা থেকেই দপ্তরের সামনে অপেক্ষা শুরু করেন পরের দিনের প্রক্রিয়ার জন্য।

তিনি জানান, শুধু কুয়ালালামপুরেই মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৫৯৫ জন অবৈধ প্রবাসী এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক।

‘প্রতিদিন আমাদের প্রক্রিয়ার ক্ষমতা সীমিত, কারণ আবেদনকারীদের ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ সংগ্রহসহ বেশ কিছু ধাপ সম্পন্ন করতে হয়,’ বলেন ওয়ান সাউপি।

তাই যারা অংশ নিতে চান, তারা চাইলে কম ভিড়যুক্ত রাজ্য যেমন পাহাং, কেলান্তান, তেরেঙ্গানু, কেদাহ বা নেগেরি সেমবিলানেও যেতে পারেন।

অভিবাসন কর্মকর্তার মতে, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফেরেননি; কারও পরিবারের কেউ অসুস্থ, আবার কেউ কেউ চাকরির দালালের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনেকে দশ বছর পর্যন্ত অবৈধভাবে থাকার পর আইনি ঝুঁকির ভয়ে এখন স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করছেন।

ওয়ান সাউপি জানান, পিআরআরেএম ২.০ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রবাসীরা কেবলমাত্র ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা ও নিজ খরচে দেশে ফেরার টিকিট কিনলেই দেশে ফিরে যেতে পারেন। অন্যদিকে অভিযানে ধরা পড়লে তাদের রিমান্ড, আদালত প্রক্রিয়া, কারাদণ্ড ও উচ্চ জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়।

‘আমরা চাই, যারা এখনও বাইরে আছেন, তারা যেন এই সুযোগ কাজে লাগান। ধরা পড়ার আগে নিজেরাই আত্মসমর্পণ করুন,’ সতর্ক করেন অভিবাসন পরিচালক।

  • কর্মসূচির সময়সীমা ও শর্ত

‘পিআরআরেএম ২.০’ কর্মসূচি চলবে ২০২৬ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এটি মূলত এমন অবৈধ বিদেশিদের জন্য, যারা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরতে চান।

  • শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে

বৈধ পাসপোর্ট থাকা, ১৪ দিনের মধ্যে দেশে ফেরার বিমান টিকিট, অভিবাসন দপ্তরের যে কোনো প্রয়োগ বিভাগে উপস্থিতি, নির্ধারিত ৫০০ রিঙ্গিত কম্পাউন্ড ফি পরিশোধ। আবেদন অনুমোদিত হলে প্রতিটি প্রবাসীকে ২০ রিঙ্গিত ফি দিয়ে একটি অস্থায়ী বিশেষ পাস প্রদান করা হয়, যা দেশে ফেরার দিন পর্যন্ত বৈধ থাকে। তবে যাদের বিরুদ্ধে কালো তালিকাভুক্তি বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না।

বিশ্লেষকদের মতে, পিআরআরেএম ২.০ মালয়েশিয়ার জন্য একদিকে মানবিক পদক্ষেপ—যেখানে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের আইনগত জটিলতা ছাড়াই দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে; অন্যদিকে এটি সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমবাজার শৃঙ্খলা পুনর্বিন্যাসের অংশ।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু শ্রমিক এই উদ্যোগে স্বস্তি পাচ্ছেন, কারণ এতে আটক বা শাস্তির আশঙ্কা না থাকায় সহজে দেশে ফেরার সুযোগ মিলছে।

এমআরএম/জিকেএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]