ইউরোপে প্রবেশে ডিজিটাল সীমান্ত ব্যবস্থা ‘ইইএস’ চালু

এস ইসলাম
এস ইসলাম এস ইসলাম , লন্ডন থেকে
প্রকাশিত: ১১:২৫ এএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ইউরোপে প্রবেশে ডিজিটাল সীমান্ত ব্যবস্থা ‘ইইএস’ চালু/ছবি-সংগৃহীত

যুক্তরাজ্য থেকে ইউরোপ ভ্রমণকারীদের জন্য বড় পরিবর্তন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন ডিজিটাল সীমান্ত ব্যবস্থা ‘এন্ট্রি/এক্সিট সিস্টেম’ (ইইএস) রোববার (১২ অক্টোবর) থেকে চালু হয়েছে। বহু বিলম্বের পর চালু হওয়া এই প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা ভ্রমণকে নিরাপদ ও কার্যকর করতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন।

তবে প্রাথমিক পর্যায়ে যাত্রী নিবন্ধনের কারণে কিছু জায়গায় ভ্রমণকারীদের দীর্ঘ অপেক্ষা বা লম্বা সারির মুখোমুখি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইইএস কীভাবে কাজ করবে?

ইইএস মূলত ইউরোপের শেনজেন অঞ্চলের সীমান্তে প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় নন-ইইউ দেশের নাগরিকদের যাতায়াতের তথ্য সংরক্ষণ করবে। বর্তমানে এই অঞ্চলে ২৯টি দেশ রয়েছে, যার মধ্যে জনপ্রিয় গন্তব্য ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল ও গ্রিসও অন্তর্ভুক্ত।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যসহ ইইউ–বহির্ভূত দেশের নাগরিকদের আঙুলের ছাপ ও মুখের ছবি দিতে হবে। এটি পাসপোর্টে ম্যানুয়াল সিল দেওয়ার পুরোনো প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপন করবে।

কখন ও কোথায় শুরু হচ্ছে ব্যবস্থা?

ইইউ জানিয়েছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে পুরো ইউরোপজুড়ে ইইএস পদ্ধতি কার্যকর হবে। ডোভার বন্দরে প্রথমে কোচে ভ্রমণকারীদের জন্য এই সিস্টেম চালু হয়েছে ১২ অক্টোবর থেকে। অন্য পর্যটকদের ক্ষেত্রে তা ১ নভেম্বর থেকে চালু হবে। ইউরোস্টারের ক্ষেত্রে প্রথমে কিছু নির্বাচিত ব্যবসায়ী যাত্রী এই সেবা ব্যবহার করবেন। পরে ধীরে ধীরে সকল যাত্রীর জন্য তা উন্মুক্ত করা হবে। ইউরোটানেলও একই তারিখ থেকে সীমিতভাবে প্রথমে কোচ ও মালবাহী পরিবহনের ক্ষেত্রে এ সিস্টেমটি চালু করছে।

বছরের শেষ নাগাদ ইউরোপের বিভিন্ন বিমানবন্দরেও নতুন এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে। সব মিলিয়ে ২০২৬ সালের ১০ এপ্রিলের মধ্যে ২৯টি অংশগ্রহণকারী দেশের সব সীমান্তে এটি সম্পূর্ণভাবে চালু হওয়ার কথা।

যাত্রীদের কী করতে হবে?

নতুন ব্যবস্থায় প্রথমবার ভ্রমণের সময় যাত্রীদের পাসপোর্ট স্ক্যান, আঙুলের ছাপ ও মুখের ছবি দিতে হবে। এটি সীমান্ত কর্মকর্তার সহায়তায় বা স্বয়ংক্রিয় কিয়স্ক মেশিনে সম্পন্ন হবে। বিমানে ভ্রমণকারীদের গন্তব্য বিমানবন্দরে নিবন্ধন করতে হবে, আর ডোভার, ইউরোটানেল বা ইউরোস্টার ব্যবহারকারীদের যাত্রার আগেই যুক্তরাজ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

১২ বছরের নিচের শিশুদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে না। কিয়স্কে চারটি মৌলিক প্রশ্ন থাকবে — যেমন কোথায় থাকবেন, কতদিন থাকবেন, পর্যাপ্ত অর্থ আছে কি না ইত্যাদি।

নতুন অবকাঠামো ও প্রস্তুতি

ডোভার বন্দর নতুন চেকিং প্রক্রিয়ার জন্য বিশাল পরিবর্তন এনেছে। সমুদ্র থেকে ভূমি পুনরুদ্ধার করে তৈরি করা হয়েছে আলাদা প্রসেসিং জোন, যেখানে যাত্রীরা ইইএস নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। এরপর কোচ সিল করা অবস্থায় ফেরির দিকে যাবে।

ইউরোস্টার লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাস টার্মিনালে ৪৯টি নতুন কিয়স্ক বসিয়েছে। আর ইউরোটানেল দুই পাশেই শতাধিক কিয়স্ক স্থাপন করেছে, যেখানে গাড়িচালকরা গাড়ি থেকেই নিবন্ধন করতে পারবেন।

একটি মোবাইল অ্যাপও তৈরি করা হয়েছে, যেন যাত্রীরা সীমান্তে পৌঁছানোর আগে কিছু ধাপ সম্পন্ন করতে পারেন। নিবন্ধনের মেয়াদ থাকবে তিন বছর, যার মধ্যে প্রতিবার ভ্রমণের সময় তথ্য যাচাই করা হবে।

সম্ভাব্য জটিলতা নিয়ে উদ্বেগ

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, প্রত্যেক যাত্রীর কয়েক মিনিট বাড়তি সময় লাগলে ডোভার-এর মতো ব্যস্ততম জায়গায় যানজট বা দীর্ঘ সারি তৈরি হতে পারে।

তবে ইউরোটানেল ও ইউরোস্টার কর্তৃপক্ষের দাবি, ধাপে ধাপে সিস্টেম চালুর কারণে বড় কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না। তারা বলছে, প্রস্তুতি সম্পন্ন এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এরপর আসছে নতুন অনুমোদন ব্যবস্থা ইটিআইএএস।

ইইএস–এর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন চালু করতে যাচ্ছে আরেকটি ব্যবস্থা —ইউরোপীয়ান ট্যাভেল ইনফরমেশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সিস্টেম বা ইটিআইএএস। এটি হবে অনলাইনভিত্তিক ভিসা-ওয়েভার বা পূর্বানুমোদন প্রক্রিয়া, যা পাসপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।

ইইউ–বহির্ভূত দেশের নাগরিকরা — যেমন যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা — ইউরোপে প্রবেশের আগে অনলাইনে আবেদন করে এই অনুমোদন নিতে পারবেন।

২০২৬ সালের শেষের দিকে এটি চালু হওয়ার কথা, যদিও নির্দিষ্ট তারিখ এখনো জানানো হয়নি। আবেদন ফি হবে ২০ ইউরো (প্রায় ১৭ ব্রিটিশ পাউন্ড), যার বৈধতা থাকবে তিন বছর পর্যন্ত। ১৮ বছরের নিচে এবং ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে আবেদনকারীদের জন্য এই প্রক্রিয়া বিনামূল্যে থাকবে।

ইউরোপে ভ্রমণকে আরও নিরাপদ ও আধুনিক করতে ইইএস একটি বড় পদক্ষেপ। প্রথমদিকে কিছুটা সময়সাপেক্ষ মনে হলেও, ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের আশা— নতুন প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ভ্রমণকে করবে আরও দ্রুত, স্মার্ট ও নির্ভুল।

এমআরএম/জিকেএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]