মানবপাচার ঠেকাতে রোমানিয়ায় বাংলাসহ ৫ ভাষায় প্রচারণা

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০০ এএম, ১৫ মে ২০২৪
রোমানিয়ান ন্যাশনাল এজেন্সি এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন পার্সনস (এএনআইটিপি) এর জনসংযোগ মুখপাত্র মিহায়েলা দ্রাগুস

মানবপাচার ঠেকাতে বাংলা ও নেপালিসহ মোট পাঁচটি ভাষায় প্রচারণা শুরু করেছে রোমানিয়ান ন্যাশনাল এজেন্সি এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন পার্সনস (এএনআইটিপি)।

এএনআইটিপি রোমানিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি দপ্তর। যৌন নিপীড়ন বা সেক্স ট্রাফিকিং, কাজের প্রলোভনে মানবপাচারসহ বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হওয়া রোমানিয়ার স্থানীয় নাগরিক এবং বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এই সংস্থা।

মিহায়েলার কথায়, রোমানিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইউক্রেনীয় অভিবাসী আসায় ইউক্রেনীয় ভাষায়ও লিফলেটগুলো ছাপানো হয়েছে। এছাড়া সিরিয়াসহ বেশ কিছু দেশের শরণার্থী থাকায় পাঁচটি ভাষার মধ্যে স্থান পেয়েছে আরবি ভাষাও। ইমপ্রুভিং দ্য ন্যাশনাল অ্যাসাইলাম অ্যান্ড মাইগ্রেশন সিস্টেম নামে সরকারের পিডিপি-১ প্রকল্পের আওতায় রোমানিয়াজুড়ে এই প্রচারণাটি পরিচালিত হচ্ছে।

সম্প্রতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসীরা কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় আসা শুরু হয়েছে। ফলে ভুয়া কোম্পানির হাতে পড়ে পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।

রোমানিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ দাউদ আলী সম্প্রতি বলেন, বিগত চার বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মভিসায় দেশটিতে এসেছেন।

ভুক্তভোগীদের জন্য হটলাইন
ন্যাশনাল এজেন্সি এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন পার্সনস (এএনআইটিপি) শ্রম, যৌনতা, পর্নোগ্রাফি কিংবা যেকোনো ধরনের পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য একটি জরুরি হটলাইন চালু রেখেছে।

সংশ্লিষ্টরা রোমানিয়া থেকে ১১২ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছে এএনআইটিপি)। ভুক্তভোগীরা ০৮ ০০ ৮০ ০৬ ৭৮ এবং ০২ ১৩ ১৩ ৩১ ০০ এ দুটো নম্বরেও টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। এএনআইটিপি-এর ইমেইল: [email protected]

মুখপাত্র মিহায়েলা দ্রাগুস ব্যাখ্যা করেন, বিভিন্ন ভাষায় প্রচারণা শুরুর আগে ২০২২ সালের শেষ দিকে অভিবাসীদের মানব পাচারের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কিছু দেশের দূতাবাস ও কনস্যুলার প্রতিনিধিদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছিল।

‘ভালো উদ্যোগ’ বলছে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম শাখা
পাঁচটি ভাষায় প্রকাশিত প্রচারণা লিফলেটগুলো পড়ে দেখেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। লিফলেটের শুরুতে লেখা হয়েছে, মানবপাচারের শুরু হয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে আর শেষ হয় তথাকথিত নিরাপদ কাজের চুক্তি মাধ্যমে।

যদিও ইংরেজি লিফলেটের বিপরীতে বাংলা লিফলেটের অনুবাদে বেশ কিছু ভুল অনুবাদ নজরে এসেছে।

এ বিষয়ে মিহায়েলা দ্রাগুস বলেন, প্রথমবারের মতো হওয়ায় বেশ কিছু ভাষায় এমন ছোটখাটো ভুল থাকতে পারে। পরবর্তীতে এগুলো ঠিক করে নেওয়া হবে। তবে এগুলোর মাধ্যমে মূলত অভিবাসীদের সতর্কবার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

বুখারেস্টে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম সচিব মোহাম্মদ মহসীন মিয়া বলেন, এএনআইটিপি কর্তৃক বাংলা ভাষায় প্রকাশিত অন্তত একটা লিফলেট প্রচারপত্র আমার হাতে এসেছে। লিফলেটে দরকারি বেশ কিছু তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে- যেমন ধরুন, রোমানিয়ায় বৈধভাবে বসবাসকারীদের অধিকার সমূহ, বাধ্যবাধকতা অর্থাৎ কী কী বিষয় আবশ্যকীয়ভাবে মেনে চলতে হবে এবং বিপদগ্রস্ত হলে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে – সেসব দপ্তরের টেলিফোন নম্বর ইত্যাদি। সুতরাং আমার দৃষ্টিতে এএনআইটিপি’র উদ্যোগটি ভালো, অভিবাসীদের জন্য দরকারি এবং অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।

এমন পদক্ষেপ সম্ভাব্য পাচার ঠেকাতে ভূমিকা রাখতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মহসীন মিয়া বলেন, ‌শুধু একটি প্রচারপত্র মানবপাচার ঠেকাতে যথেষ্ট এমন বলা যাবে না তবে এমন হতে পারে এ প্রচারপত্রের একটি তথ্য কিংবা এতে উল্লেখিত টেলিফোন নম্বরে একটি কল হয়ত একজন অভিবাসন প্রত্যাশীকে বড় রকম বিপদ বা ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে। সুতরাং এএনআইটিপি’র এই পদক্ষেপ মানবপাচার ঠেকাতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে বলা যায়।

২০২৩ সালে ভুক্তভোগী ৪৫১ জন
রোমানিয়ায় মানবপাচার নিয়ে ২০২৩ সালের বিশদ রিপোর্টে এএনআইটিপি জানিয়েছে, গত বছর মোট ৪৫১ জন ব্যক্তিকে মানবপাচারের শিকার চিহ্নিত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে বড় একটি অংশ দেশটির নাগরিক। এছাড়া এর মধ্যে অভিবাসীরাও আছেন।

পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের দুজনের মধ্যে একজন শিশু এবং চার জনের মধ্যে তিন জন নারী। বড় একটা অংশ যৌন শোষণের শিকার হন।

ভুক্তভোগীদের মোট ৬৭ জন কাজ সম্পর্কিত মানবপাচারের ভুক্তভোগী বলে চিহ্নিত করেছে ন্যাশনাল এজেন্সি এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন পার্সনস। ভুয়া কাজের চুক্তি কিংবা মিথ্যা প্রলোভনে কাজের আশায় পাচার হওয়া ব্যক্তিরা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

সংস্থাটি নিয়মিত তাদের ফেসবুকে পেজের ইনবক্সে অভিবাসীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানান মিহায়েলা দ্রাগুস। অনেক বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশীয়রাও নিয়মিত তাদের প্রশ্ন করেন বলে জানান তিনি।

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

এমআরএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]