ঈদের আনন্দ সবার জন্য

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৮:১২ এএম, ২৫ মে ২০২০

ইনশাআল্লাহ আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখেই ঈদ উদ্যাপন করবো। পবিত্র ঈদুল ফিতর সবার জন্য বয়ে আনুক অনেক অনেক আনন্দ আর কল্যাণ।

ঈদ কি?
ঈদ শব্দটি আরবি। এর বাংলা অর্থ খুশি, আনন্দ, আনন্দোৎসব ইত্যাদি। আর ফিতর অর্থ রোজা ভাঙা, খাওয়া ইত্যাদি। তাহলে ঈদুল ফিতর এর অর্থ দাড়ায় রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ।

বিজ্ঞাপন

মুসলিম উম্মাহ বছরে দু’টি ঈদ পালন করে থাকে আর তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। একটি আসে পবিত্র মাহে রমজানে রোজা পালনের মাধ্যমে আর অপরটি আসে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মহান কুরবানির স্মৃতিরূপে পশু কুরবানির মাধ্যমে।

মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ঈদ আদায় করে থাকেন। একজন আল্লাহ প্রেমিক মাত্রই তার সব আনন্দ আল্লাহর সন্তুষ্টির সঙ্গেই যুক্ত করেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তাই একজন প্রকৃত আল্লাহ প্রেমিক তার সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ পেলে শুকরিয়া আদায় করে থাকেন আর ঈদ আমাদের সেই শুকরিয়া আদায়ের সুযোগ করে দেয়। তাই সবাই মিলে-মিশে শুকরিয়াস্বরূপ দুই রাকাআত নামাজের মাধ্যমে ঈদ পালন করে মুসলিম উম্মাহ।

ঈদুল ফিতর
আল্লাহ তাআলার একান্ত রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত লাভে রমজান মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে যে ঈদ আসে, তাহলো- 'ঈদুল ফিতর'। একজন রোজাদারের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হলো আল্লাহ তাআলার আদেশ অনুযায়ী মাসব্যাপী রোজা রাখতে আল্লাহ তাকে তাওফিক দিয়েছেন।

এ খুশি প্রকাশ করতেই রমজান মাস শেষ করে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদের আনন্দে মিলিত হয় মুমিন মুসলমান। আর এই দিনটির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুমিনের জন্য সব বৈধ খাবার-পানীয় ও কাজ-কর্ম যা কিনা রোজার কারণে বিরত রেখেছিলেন তার অনুমতি প্রদান করেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ঈদের চাঁদ
মুসলমানদের জন্য ঈদের চাঁদ অত্যন্ত আনন্দের মহূর্ত। কারণ চাঁদের হিসাবেই ঈদ পর্ব শুরু হয়। রমজান মাসের শেষ দিন মুসলমান মাত্রই হোক সে বৃদ্ধ, যুবক কিংবা শিশু, চাঁদ দেখা বা চাঁদের খবর নিতে উৎসুক দেখা যায়। আমাদের প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঈদের চাঁদ দেখার জন্য উৎসুক থাকতেন। এমনকি তিনি চাঁদ দেখা মাত্র এই দোয়া করতেন-
‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনে ওয়াল ঈমানে, ওয়াস্ সালামাতে, ওয়াল ইসলামে, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহু হিলালুর রুশদিউ ওয়া খাইর’ অর্থ : হে আল্লাহ! এই চাঁদকে আমাদের উপর উদিত করুন নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে। (হে চাঁদ!) তোমার ও আমার প্রভু একমাত্র আল্লাহ। হে আল্লাহ! এ চাঁদ যেন সঠিক পথের ও কল্যাণের চাঁদ হয়। (ইমাম তিরমিযি)।

তাই আমাদের উচিত হবে ঈদের চাঁদ দেখে উক্ত দোয়াটি করা, এই চাঁদ যেন আমাদেরকে আল্লাহপাকের পথে নিয়ে যায়।

ঈদের তাকবির
ঈদের চাঁদ অর্থাৎ শাওয়ালের চাঁদ দেখার পর তাকবির পড়তে হয়। 'আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। অর্থ : আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সব প্রশংসা আল্লাহর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবাগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এমনটি করতেন।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া ঈদের নামাজ পড়ানোর পর ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে পাঠ করেন আর ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া ও আসার পথে এ তাকবির পাঠ করা উচিত।

ঈদের আগে ফিতরা আদায়
ঈদের পূর্বে প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী, শিশু এমনকি সদ্য জন্মলাভকারী শিশুর জন্যও নির্ধারিত ফিতরা আদায় করা জরুরি। ফিতরার টাকা দিয়ে গরিব, অসহায় দুঃস্থগণ অন্যান্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ করে থাকে। যেহেতু ফিতরার টাকা দিয়ে দুঃস্থ অসহায়গণ ঈদ করেন, তাই ঈদের কিছুদিন আগে এ টাকা আদায় করা সবচেয়ে উত্তম।

এ ফিতরা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা উচিত। কেননা গরিব রোজাদার যেন ফিতরার অর্থ দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ফিতরা দেয়া কারও ওপর কোনো প্রকার অনুগ্রহ নয়। এটা আমাদের জন্য ইবাদতের অংশ। এমনকি যে ব্যক্তিকে ফিতরার সাহায্য দেয়া হয়, তার নিজের পক্ষ থেকেও ফিতরা দেয়া কর্তব্য।

সবার অংশগ্রহণের ফলে সদকাতুল ফিতরের ফান্ডটি একটি সাধারণ ফান্ডে পরিণত হয়। যার ফলে এ থেকে যারা উপকৃত হয় তাদের মনে হীনমন্যতার ভাব সৃষ্টি হয় না।

মূল বিষয় হলো ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরিব ভাইদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারি এবং তাদেরকেও ঈদের আনন্দে অন্তর্ভূক্ত করি।

বিজ্ঞাপন

যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ দিয়েছেন তারা আল্লাহর রাস্তায় এবং গরিব অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন এতে কিন্তু তার ধন-সম্পদে কমতি দেখা দিবে না বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

ঈদগাহে যাওয়ার প্রস্তুতি
ঈদের অনুষ্ঠান সাধারণত খোলা আকাশের নিচে অথবা জামে মসজিদে হয়ে থাকে। আমাদের প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহ যাওয়া-আসায় ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করতেন। যেন অনেক বেশি লোকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং যেন তাদের খোঁজ খবর নেয়া যায়।

তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এটি এবার সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা করতে পারি। এ ছাড়া ঈদের দিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সম্ভব হলে নতুন পোশাক পরিধান করে ঈদগাহে উপস্থিত হতে হয়।

বিজ্ঞাপন

ঈদের তোহফা
পবিত্র ঈদ উপলক্ষে ঈদী বা ঈদের উপহার বিতরণ করা মুসলমানদের মধ্যে চালু হয়ে আসছে। ঈদের খুশিতে আত্মীয়-অনাত্মীয় পরস্পরকে তোহফা বিনিময় করে থাকে, এটি একটি ভাল রীতি। এতে পরস্পরের আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। কাপড়-চোপড়, দ্রব্যাদি, টাকা-পয়সা ইত্যাদি ঈদের তোহফা হিসাবে বিতরণ করা হয়ে থাকে।

অনেকে তৈরি খাবার, মিষ্টি বিতরণ করে থাকেন। অনেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে কুশলাদি বিনিময় ও তোহফা বিতরণ করে থাকেন। আর এসবের মাঝেই একজন আল্লাহপ্রেমিক খুঁজে পায় তার রবের স্বাক্ষাত।

ঈদের নামাজ
ঈদের নামাজের মাধ্যমেই ঈদের প্রকৃত আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঈদের সব প্রস্তুতি মূলতঃ আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে শুকরিয়াস্বরূপ দুই রাকাআত নামাজ পড়ার মাধ্যমে। সকাল-সকাল খোলা মাঠে অথবা মসজিদে এই দুই রাকাআত নামাজ আদায় করতে হয়।

ঈদের নামাজে আজান ও আকামত নেই। দুই রাকাআত নামাজে অতিরিক্ত ৬/১২ তাকবির (আল্লাহু আকবার) দিতে হয়। প্রথম রাকাআতে তাকবিরে তাহরিমা ও ছানা পড়ার পর সুরা ফাতেহার আগে অতিরক্তি ৩/৭ তাকবির (আল্লাহু আকবার) দিতে হয়। তারপর যথারীতি ১ম রাকাআত সম্পন্ন করে দ্বিতীয় রাকাআতে সুরা ফাতেহা ও কেরাত পড়ার পর রুকুর আগে ৩/৫ তাকবির (আল্লাহু আকবার) দিতে হয়। তার পর যথারীতি নামাজ সম্পন্ন করতে হয়।

অতপর সমসাময়িক বিষয়ের ওপর আলোচনা ও নসিহতমূলক খুতবা প্রদান করতে হয়। খুতবা শেষ হলে ইজতেমায়ি দোয়া করে সবাই পরস্পরের সঙ্গে মোলাকাত করতে থাকে।

ঈদ আনন্দে একে অপরকে বুকে টেনে নেয়। বুকে বুক মিলিয়ে প্রত্যেকেই আন্তরিকতায় একাকার হয়ে যায়। তবে এই কাজটি থেকে এবার আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে। আমরা দূরুত্ব বজায় রেখে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করব।


ঈদের প্রকৃত তাৎপর্য মূলতঃ মহান আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হাসিল করে তার ইবাদতের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করতে এটাকে বাস্তবে প্রকাশ করা।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

তাই এই আনন্দ শুধু খুশি বা মজার জন্য নয় বরং আপন প্রভুর বান্দা হিসাবে স্থায়ীভাবে ইবাদত প্রতিষ্ঠায় রত থাকা। আমরা যেন ঈদের আনন্দে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে সর্বদা জীবনের জন্য স্থায়ী ইবাদত হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সদা সর্বদা তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।