নামাজে রুকু-সিজদার তাকবির কখন বলতে হয়?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সিজদায় যাওয়া ও সিজদা থেকে ওঠার সময় তাকবির বলা সুন্নত

নামাজে রুকু-সিজদা বা এক রোকন শেষ করে আরেক রোকনে যাওয়ার তাকবির বলার সুন্নত পদ্ধতি হলো যখন কোনো রোকন শেষ হবে তখন তাকবির বলা শুরু করবে এবং পরবর্তী রোকনে গিয়ে শেষ করবে। যেমন রুকুতে যাওয়ার সময় নামাজ আদায়কারী যখন রুকুর দিকে ঝুঁকতে শুরু করবে, তখন তাকবির বলা শুরু করবে এবং তা শেষ করবে রুকুতে পৌঁছানোর আগেই, যাতে তাকবির কিয়াম বা দাঁড়ানো অবস্থা ও রুকুর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

যে রোকন শেষ হয়েছে সেখানেই তাকবির বলা অথবা পরবর্তী রোকনে পৌঁছে তারপর তাকবির বলা সঠিক পদ্ধতি নয়। ফোকাহায়ে কেরাম এটাকে মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন। বিশেষত ইমাম এভাবে তাকবির দিলে এ কারণে অনেক মুসল্লির নামাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই তাদের বিষয়টি খেয়াল করা উচিত।

আবু হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,

كَانَ رَسُولُ اللهِ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاةِ، يُكَبِّرُ حِينَ يَقُومُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْكَعُ، ثُمَّ يَقُولُ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ حِينَ يَرْفَعُ صُلْبَهُ مِنْ الرَّكْعَةِ، ثُمَّ يَقُولُ وَهُوَ قَائِمٌ: رَبَّنَا لَكَ الْحَمْد، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَهْوِي، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَسْجُدُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ، ثُمَّ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِي الصَّلاةِ كُلِّهَا حَتَّى يَقْضِيَهَا.

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাজে দাঁড়াতেন, তখন তাকবির দিতেন। তারপর রুকুতে গেলে তাকবির দিতেন। তারপর যখন রুকু থেকে উঠতেন, তখন বলতেন 'সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ'। এরপর তিনি দাঁড়িয়ে বলতেন, 'রব্বানা লাকা আল-হামদ'। তারপর যখন সিজদায় যেতেন, তখন তাকবির দিতেন। যখন মাথা তুলতেন, তখন তাকবির দিতেন। এরপর দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবির দিতেন। তারপর মাথা তোলার সময় তাকবির দিতেন। এভাবে তিনি পুরো নামাজে এই নিয়ম অনুসরণ করতেন, যতক্ষণ না নামাজ শেষ হতো। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

নামাজে তাকবির বলা কি ফরজ নাকি সুন্নত?

নামাজে শুধু তাকবিরে তাহরিমা বলা ফরজ। রুকু-সিজদার তাকবিরসহ এক রোকন থেকে আরেক রোকনে স্থানান্তরের তাকবিরগুলো বলা সুন্নত। ইচ্ছাকৃত বা ভুলে এই তাকবিরগুলো ছুটে গেলে নামাজ বাতিল হবে না, সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না।

যে তাকবিরের মাধ্যমে নামাজ শুরু করা হয়, ওই তাকবিরকে তাকবিরে তাহরিমা বলে। তাকবিরে তাহরিমার মাধ্যমে নামাজ আদায়কারী নামাজে প্রবেশ করে এবং নামাজের বাইরের সব কাজকর্ম হারাম বা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন,

مِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الطُّهُورُ وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ

সালাতের চাবি হল পবিত্রতা। তাকবিরে তাহরিমা নামাজের বাইরের সব কাজ কাজ হারাম করে দেয় আর সালাম তা হালাল করে। (তিরমিজি: ২৩৮)

নামাজের শুরুতে তাকবিরে তাহরিমা না বললে নামাজ শুদ্ধ হয় না। নামাজের জামাতে ইমাম রুকুতে চলে যাওয়ার পর কেউ যদি জামাতে শরিক হয়, তার জন্যও দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবিরে তাহরিমা বলে তারাপর রুকুতে যাওয়া জরুরি। কেউ যদি তাড়াহুড়া করে তাকবিরে তাহরিমা না বলেই রুকুতে চলে যায়, তার নামাজ শুদ্ধ হবে না।

আরেকটি জরুরি বিষয় হলো, নামাজের শুরুতে পূর্ণ তাকবীরে তাহরিমা দাঁড়ানো অবস্থায় কিংবা দাঁড়ানোর কাছাকাছি থাকা অবস্থায় বলাও জরুরি। কেউ যদি তাকবিরে তাহরিমা বলতে বলতে রুকুতে চলে যায় এবং রুকুর কাছাকাছি চলে যাওয়ার পর তাকবিরে তাহরিমা শেষ হয় তাহলে তা শুদ্ধ হবে না। তাকবিরে তাহরিমা শুদ্ধ না হলে নামাজও শুদ্ধ হয় না।

ওএফএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।