শবে বরাতে কি ভাগ্য লেখা হয়?

আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন, শবে বরাতে ভাগ্য লেখা হয়। এ ধারণা থেকে পত্র-পত্রিকায় শবে বরাতকে ‘ভাগ্যরজনী’ বলেও উল্লেখ করা হয়। অথচ এটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন ধারণা। শবে বরাতে ভাগ্য নির্ধারণ করা হয় না। কোরআনে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন ভাগ্য নির্ধারণ করা হয় কোরআন নাজিলের রাতে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
حٰمٓ وَ الۡكِتٰبِ الۡمُبِیۡنِ اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃٍ مُّبٰرَكَۃٍ اِنَّا كُنَّا مُنۡذِرِیۡنَ فِیۡهَا یُفۡرَقُ كُلُّ اَمۡرٍ حَكِیۡمٍ اَمۡرًا مِّنۡ عِنۡدِنَا اِنَّا كُنَّا مُرۡسِلِیۡنَ
হা-মিম! সুস্পষ্ট কিতাবের কসম! নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে, আমি তো সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয় আমার নির্দেশে। আমিই রাসুল প্রেরণকারী। (সুরা দুখান: ১-৫)।
আর কোরআনের অন্য দুটি আয়াত থেকে বোঝা যায় কোরআন রমজানে কদরের রাতে অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ
রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। (সুরা বাকারা: ১৮৫)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ
নিশ্চয়ই আমি এটি (কোরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। (সুরা আল কদর: ১)
সুতরাং ভাগ্যরজনী বা ভাগ্য যে রাতে নির্ধারিত হয় তা যে শাবানের ১৫ তারিখের রাত বা শবে বরাত নয় এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও ইসলামে এ রাতটিরও বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এ রাতে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীবাসীর দিকে দয়ার দৃষ্টি দেন এবং বহুসংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلاَّ لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে পৃথিবীবাসীর দিকে দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া তাঁর সৃষ্টির সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৩৯০)
আরেকটি হাদিসে এসেছে,
إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا يَوْمَهَا . فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ أَلاَ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ أَلاَ مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلاَ مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلاَ كَذَا أَلاَ كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
মধ্য শাবানের রাতে তোমরা নামাজ আদায় করো এবং দিনে রোজা রাখ। এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছ আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছ রিজিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিজিক দান করবো। কে আছ রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই এই প্রার্থনাকারী… ফজরের সময় হওয়া পর্যন্ত তিনি এভাবে ডাকেন। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৩৮৮)
ওএফএফ/এএসএম