যেসব অপকর্মের কারণে অভিশপ্ত হয়েছিল বনি ইসরাইল

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:২৪ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০২৫
বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ইসরায়েল

আল্লাহর নবি ইবরাহিমের (আ.) ছেলে ইসহাকও (আ.) নবি ছিলেন। ইসহাকের (আ.) ছেলে ইয়াকুবও (আ.) নবি ছিলেন। তার আরেক নাম ছিল ইসরাইল। তার বংশধররা বনি ইসরাইল বা ইসরাইলের সন্তান নামে পরিচিত। পরবর্তীতে নবি মুসার (আ.) অনুসারি হিসেবে তারা ইহুদি নামে পরিচিত হয়েছে।

কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইল তথা ইহুদিদের বিভিন্ন অপকর্মের কথা তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলার বিধান প্রত্যাখ্যান, নবিদের হত্যাকাণ্ড, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতরণাসহ এমনসব অপকর্মে তারা বার বার জড়িত হয়েছে যে কারণে আল্লাহ তাআলা ক্রুদ্ধ হয়েছেন তাদের ওপর, তারা আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে বঞ্চিত ও অভিশপ্ত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহর অনুকম্পা ও মানুষের আশ্রয় ছাড়া যেখানেই তারা অবস্থান করুক, সেখানেই তারা হয়েছে লাঞ্ছিত, তারা আল্লাহর ক্রোধে পরিবেষ্টিত এবং তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দারিদ্রের কশাঘাত। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ প্রত্যাখ্যান করতো এবং নবিদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতো, এটা এজন্য যে, তারা অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করতো। (সুরা আলে ইমরান: ১১২)

কোরআনে তাদের যেসব অপকর্মের কথা বলা হয়েছে তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি:

১. নবিদের হত্যাকাণ্ড

কোরআনের অন্তত ৩টি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, বনি ইসরাইল বা ইহুদিরা আল্লাহর প্রেরিত নবিদের অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল। ইহুদিদের ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও লানতের অন্যতম কারণ এটি। যেমন ওপরে উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদের অন্যান্য অপকর্মের সাথে নবিদের হত্যাকাণ্ডের কথাও বলেছেন।

কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে ক্রমান্বয়ে রাসুলদের প্রেরণ করেছি, মারইয়াম পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি এবং জিবরাঈলের মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করেছি। যখনই কোন রাসুল এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের পছন্দ নয়, তখনই তোমরা অহংকার করেছ এবং একদল নবিকে তোমরা অস্বীকার করেছ, একদল নবিকে হত্যা করেছ। (সুরা বাকারা: ৮৭)

কোরআনের অনেক ব্যাখ্যাকার বলেছেন, বিভিন্ন সময় ইহুদিরা আল্লাহ তাআলার কয়েকশ নবিকে হত্যা করেছে। তবে তাদের হাতে নিহত নবি কারা ছিলেন সে সম্পর্কে কোরআন বা হাদিসে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা কাজি নাসিরুদ্দিন বায়যাবি (রহ.) তার তাফসিরগ্রন্থে লিখেছেন, ইহুদিদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার উল্লেখযোগ্য তিন জন নবি হলেন, আশইয়া (আ.), জাকারিয়া (আ.) এবং তার ছেলে ইয়াহিয়া (আ.)।

২. নিজেদের শ্রেষ্ঠ ও অন্যদের তুচ্ছ মনে করা

বনি ইসরাইল নিজেদেরকে আল্লাহর নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ জাতি ও অন্যদের তুচ্ছ মনে করতো। তারা নিজেদেরকে আল্লাহ তাআলার সন্তান দাবি করতো। আল্লাহ তাআলা বলেন, ইয়াহুদি ও নাসারারা বলে, আমরা আল্লাহর পুত্র ও তাঁর প্রিয়পাত্র। বল, তাহলে তোমাদের পাপের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দেন কেন? বরং তিনি যাদের সৃষ্টি করেছেন তোমরা তাদের অন্তর্গত মানুষ, তিনি যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন, যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেন, আকাশসমূহ ও পৃথিবী আর এদের মধ্যে যা আছে সবকিছুর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই জন্য, আর প্রত্যাবর্তন তাঁরই দিকে। (সুরা মায়েদা: ১৮)

অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির কারণে বনি ইসরাইল বা ইহুদি ছাড়া অন্যদের সাথে অন্যায় অসততা করাকেও শরঈভাবে বৈধ মনে করতো তারা। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আহলে কিতাবের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে, যদি তার নিকট তুমি অঢেল সম্পদ আমানত রাখ, তবুও সে তা তোমার নিকট আদায় করে দেবে এবং তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছে, যদি তুমি তার নিকট এক দিনার আমানত রাখ, তবে সর্বোচ্চ তাগাদা ছাড়া সে তা তোমাকে ফেরত দেবে না। এটি এ কারণে যে, তারা বলে, উম্মীদের (বনি ইসরাইলের বাইরে সাধারণ নিরক্ষর আরব) ব্যাপারে আমাদের ওপর কোন পাপ নেই। তারা তো জেনে-শুনে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা বলে। (সুরা আলে ইমরান: ৭৫)

৩. আল্লাহ তাআলার ওপর মিথ্যা আরোপ

বনি ইসরাইল নিজেদের স্বার্থে নিজেদের মর্জি মতো শরিয়তের নতুন বিধান বানাতো বা বাদ দিতো। যেমন উম্মীদের সাথে অন্যায় করা বৈধ এটা তারা বানিয়েছিল। এ ছাড়াও আল্লাহ তাআলার ওপর আরও অনেক মিথ্যা আরোপ করেছিল তারা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লেখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস। তারা বলে, ‘গুটি কয়েক দিন ছাড়া আগুন আমাদেরকে কখনো স্পর্শ করবে না’। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহর নিকট ওয়াদা নিয়েছ, ফলে আল্লাহ তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করবেন না? নাকি আল্লাহর ওপর এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না’? (সুরা বাকারা: ৭৯, ৮০)

৪. পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করা

বনি ইসরাইল সুযোগ পেলেই পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করতো ও সংঘাতে লিপ্ত হতো। আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা (বনি ইসরাইল) যতবার যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে, মহান আল্লাহ ততবার তা নিভিয়েছেন। তারা পৃথিবীতে অশান্তি ছড়িয়ে বেড়ায়; আর আল্লাহ অশান্তি বিস্তারকারীদেরকে ভালবাসেননা। (সুরা মায়িদা: ৬৪)

৫. প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা

বনি ইসরাইলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করতো। আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা (বনি ইসরাইল) যখনই কোনো অঙ্গীকার করেছে, তা ভঙ্গ করেছে; বরং তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী। (সুরা বাকারা: ১০০)

আল্লাহ তাআলা এসব অপকর্ম থেকে আমাদের বেঁচে থাকার তওফিক দিন। আমাদের ওপর তার রহমতের বারিধারা জারি রাখুন। তার ক্রোধ ও লানত থেকে আমাদের দূরে রাখুন। আমিন!

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।