জানাজার তাকবিরের সময় আকাশের দিকে তাকানো কি সুন্নত?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
জানাজার নামাজ মসজিদের বাইরে আদায় করা সুন্নত

জানাজার নামাজে দাঁড়িয়ে ‍নিয়ত করে চারটি তাকবির বলা ওয়াজিব বা আবশ্যক। তাকবির পরবর্তী সানা, দরুদ ও দোয়া পড়া সুন্নত। জানাজার নামাজে দাঁড়িয়ে প্রথম আল্লাহ আকবার বলে কান পর্যন্ত দুহাত উঠিয়ে অন্যান্য নামাজের মতো হাত বাঁধবেন। প্রথম তাকবিরের পর সানা পড়বেন। দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদে ইবরাহিম পড়বেন। তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাদিসে বর্ণিত দোয়াসমূহের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করবেন। চতুর্থ তাকবির দিয়ে যথাক্রমে ডানে ও বামে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে জানাযার নামাজ শেষ করবেন।

জানাজার নামাজে শুধু প্রথম তাকবির বলার সময় হাত ওঠবেন, বাকি তাকবিরগুলোতে হাত ওঠাবেন না। প্রথম তাকবিরের পর অন্যান্য নামাজের মতো নাভির ওপর হাত বেঁধে রাখবেন।

জানাজার নামাজে তাকবির ও দোয়া-দরুদ পড়ার সময় দৃষ্টি নত করে সিজদার জায়গায় রাখতে হয় যেমন অন্যান্য নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার জায়গায় রাখতে হয়। অনেকে মনে করেন, জানাজার নামাজে তাকবির বলার সময় আকাশের দিকে তাকাতে হয় বা চোখ তুলতে হয়, এটা সুন্নত বা মুস্তাহাব কোনো কাজ—এ ধারণা সঠিক নয়।

নবিজি (সা.) নামাজের সময় আকাশের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছেন। জানাজার নামাজের ক্ষেত্রেও ওই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য। আনাস (রা.) থেকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, লোকদের কী হয়েছে যে তারা নামাজের মধ্যে আকাশের দিকে দৃষ্টি তুলছে? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন; এমনকি তিনি বললেন, তারা যেন অবশ্যই এ কাজ থেকে বিরত থাকে; নচেৎ অবশ্যই তাদের দৃষ্টি-শক্তি কেড়ে নেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ৭৫০)

জাবের বিন সামুরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, নামাজের মধ্যে আকাশের (ওপরের) দিকে দৃষ্টিপাত করা হতে লোকেরা অবশ্যই বিরত হোক, নচেৎ তাদের দৃষ্টি আর ফিরে না-ও আসতে পারে। (সহিহ মুসলিম: ৯৯৪)

তাই জানাজার নামাজসহ যে কোনো নামাজে দৃষ্টি নত রাখতে হবে। আকাশের দিকে তাকানো বা এদিক-ওদিক তাকানো থেকে বিরত থাকতে হবে। নামাজে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকানোও নিষিদ্ধ। এ কারণে সওয়াব কমে যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা এক ধরণের ছিনতাই। এভাবে শয়তান বান্দার নামাজের অংশবিশেষ কেড়ে নেয়। (সহিহ বুখারি: ৩২৯১) অর্থাৎ নামাজের কিছু অংশের সওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হয়ে যায়।

জানাজা শেষে কখন হাত ছাড়তে হবে এ বিষয়ে আলেমদের দুটি মত পাওয়া যায়। অনেকে বলেছেন, চতুর্থ তাকবিরের পর উভয় হাত ছেড়ে দেবে। আরেকটি মত হলো, উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর হাত ছাড়বে। দুইটি মতই শুদ্ধ, যে কোনোটির উপর আমল করা যায়।

ইসলামে মুসলমান মৃতের জন্য জানাজা পড়া ফরজে কেফায়া বা মুসলমান সমাজের আবশ্যকীয় কর্তব্য অর্থাৎ কয়েকজন জানাজা পড়লে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, কেউ না পড়লে সবাই গুনাহগার হবে।

এক মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের একটি হক হলো সে তার জানাজার নামাজ আদায় করবে, তাকে সমাহিত করবে। রাসুল (সা.) বলেন, এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের হক পাঁচটি: সালামের জবাব দেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, তার জানাজার সঙ্গে যাওয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং তার হাঁচির জবাব দেওয়া। (সহিহ বুখারি: ১২৪০, সহিহ মুসলিম: ২১৬২)

ওএফএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।