হাদিস থেকে শিক্ষা

সুখী পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের করণীয়

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:০৮ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সুখী পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের করণীয় ছবি: ক্যানভা

মুফতি মোহাম্মদ আদনান

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত একদিন আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তার মেয়ে আয়েশার (রা.) বাড়িতে খোঁজ খবর নিতে গেলেন। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে তিনি শুনতে পেলেন তার মেয়ে আয়েশা (রা.) নবীজির (সা.) সঙ্গে উঁচু আওয়াজে কথা বলছেন। তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর মেয়ের পরিবারে মনোমালিন্য চলছে। স্বামীর-স্ত্রীর কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে।

ঘরে ঢুকে তিনি মেয়েকে এই বলে শাসন করতে লাগলেন যে, কী এমন হয়েছে যে আল্লাহর রাসুলের ওপর তোমার চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাচ্ছি! একইসাথে তিনি হাত উঁচু করে মেয়েকে থাপ্পড় দেওয়ার জন্যও এগিয়ে গেলেন।

নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শশুরকে বাঁধা দিতে দ্রুত স্ত্রীর সামনে এসে দাঁড়ালে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) রাগান্বিত হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।

নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন আয়েশাকে (রা.) বললেন, দেখেছো কীভাবে তোমাকে এই লোকের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলাম!

এই ঘটনার কিছুদিন পর আবারও একদিন আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মেয়ের বাড়িতে গেলেন। তখন তিনি দেখলেন তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য নেই, ঘরে শান্তি ও ভালোবাসার পরিবেশ বিরাজ করছে। তখন তিনি বললেন, আমাকে তোমাদের শান্তির মধ্যে শামিল করে নাও যেমন ইতোপূর্বে তোমাদের বিবাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিলে।

নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বলেন, আমরা তোমাকে শামিল করে নিলাম। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯৯)

এই হাদিসটি থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি:

১. সাহাবায়ে কেরাম সন্তানদের বিবাহ দেওয়ার পরও নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর রাখতেন। মাঝেমধ্যে মেয়ের বাড়িতে যেতেন। সন্তান বড় হওয়ার পরও সাধ্যানুযায়ী তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া সুন্নত।

২. নিজের ছেলে-মেয়ে ও তাদের জীবনসঙ্গীর মধ্যে কোনো বিষয়ে বিবাদ হলে আগে নিজের সন্তানকে সংশোধন করার চেষ্টা করা উচিত। নিজের সন্তানের কোনো ভুল আছে কি না দেখা উচিত। ইনিয়ে বিনিয়ে নিজের সন্তানের পক্ষ না নেওয়া উচিত।

৩. স্বামীর উচিত তার স্ত্রীকে নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষা করা। প্রচন্ড ঝগড়ার সময়ও স্ত্রীকে একা না ছাড়া। বাবা আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মেয়েকে শাসন করতে গেলেও নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে বাঁচিয়েছেন। এভাবে তিনি স্ত্রীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন।

৪. আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বাবার শাসনকে নিজের জন্য অসম্মানজনক মনে করেননি। পরবর্তীতে তিনিই এই ঘটনা বর্ণনা বর্ণনা করেছিলেন। তাই বাবা-মা শাসন করলে তা উপকারী মনে করে গ্রহণ করা উচিত তাদের সঙ্গে বেয়াদবি না করে।

৫. স্ত্রীর সঙ্গে নবীজির (সা.) সহজ ও ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। ঝগড়া বিবাদের মধ্যেও স্ত্রীর সাথে খুনসুটি করতে ভোলেননি তিনি। শশুর বের হয়ে যেতেই স্ত্রীকে মজা করে তিনি বলেছেন, দেখেছো তোমাকে এই লোকের হাত থেকে কীভাবে বাঁচিয়েছি?

স্ত্রীর সঙ্গে সহজ সম্পর্ক রাখা, মাঝেমধ্যে হাস্যরস করে তাকে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করাও সুন্নত।

৬. সাহাবায়ে কেরাম সন্তানদের আনন্দে আনন্দিত হয়েছেন। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) যখন আবার খোঁজ-খবর নিতে গেলেন এবং তাদেরকে মিল-মহব্বত দেখতে পেলেন, তখন আনন্দিত হয়ে তাদের সাথে নিজেকে একাকার করে নিলেন।

সুখী পরিবার গঠনে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এই হাদিসে প্রত্যেকের আদর্শ ভূমিকা কী হওয়া উচিত তার একটা দৃষ্টান্ত আমরা পাই।

লেখক: খতিব, মকিম বাজার জামে মসজিদ, বংশাল, ঢাকা

ওএফএফ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।