হজরত ওমরের (রা.) দৃঢ় ইমান
ওমরের (রা.) ইসলাম গ্রহণের সংবাদ মক্কার মুশরিকদের নাড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ মুশরিক অবস্থায় তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে খুবই কঠোর ছিলেন। মক্কায় মুসলমানদের বিরোধিতায় সবচেয়ে সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মক্কার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং নিজের সাহসী ও বীরোচিত চরিত্রের জন্য সুপরিচিত ছিলেন।
নবীজি (সা.) ওমরের ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করতে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আবু জাহল ও ওমর—এ দুই জনের মধ্যে আপনার কাছে যে প্রিয়, তার মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। আল্লাহর কাছে ওমর প্রিয় ছিলেন। তাই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ, সুনানে তিরমিজি)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওমরের জন্যই বিশেষভাবে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি ওমরের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
ইসলাম গ্রহণের আগে ওমর (রা.) যেমন ছিলেন ইসলামের বিরোধিতায় কঠোর ও সক্রিয়, ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ইসলামের পক্ষে মুশরিকদের বিরোধিতায়ও ছিলেন দৃঢ় ও কঠোর। ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে সুনিশ্চিত হয়েই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং ইমানের পথে তিনি ছিলেন দৃঢ় ও অবিচল।
ইসলাম গ্রহণের পর বিপদের আশংকা থাকার পরও তিনি তার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ গোপন রাখার কোনো রকম চেষ্টা করেননি। বরং ইসলাম গ্রহণ করেই তিনি অন্য সাহাবিদের জিজ্ঞেস করেন, কোরাইশের কে সবচেয়ে দ্রুত কথা রটায়? একজন বলল, জামিল ইবনে মা‘মার। তিনি জামিল ইবনে মা‘মারকে খুঁজে বের করলেন, তাকে বললেন, তুমি কি জানো, আমি মুসলমান হয়ে গেছি এবং মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বীন গ্রহণ করেছি? জামিল উত্তর না দিয়ে ত্বরিত উঠে দাঁড়াল এবং এই চাঞ্চল্যকর সংবাদ সবাইকে জানাতে কাবার দিকে রওয়ানা দিলো। ওমর (রা.) তার পেছনে চললেন। জামিল কাবার দরজায় গিয়ে ঘোষণা করল, হে কুরায়শ, ওমর ইবনুল খাত্তাব ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে!
ওমর (রা.) পেছন থেকে প্রতিবাদ করে বললেন, সে মিথ্যা বলেছে; আমি বরং ইসলাম গ্রহণ করেছি, আল্লাহর ওমর ইমান এনেছি এবং তাঁর রাসুলকে বিশ্বাস করেছি।
এ কথা শোনামাত্র কোরাইশের কিছু লোক তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। দীর্ঘক্ষণ ওমর একা তাদের সঙ্গে লড়াই করলেন। এক পর্যায়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লেন। কোরাইশের ওই লোকেরা তার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে রইল। তিনি তাদের বলছিলেন, তোমাদের যা ইচ্ছা কর। আল্লাহর কসম, আমরা যদি তিন শ লোক হতাম, তাহলে তোমাদেরকে মক্কা ছেড়ে চলে যেতে হতো অথবা আমরা মক্কা ছেড়ে চলে যেতাম।
এই সময় বনু সাহমের সর্দার আস ইবনে ওয়ায়েল সেখানে উপস্থিত হলেন এবং ওমরের চারপাশে ঘিরে থাকা লোকদের বললেন, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলে, ওমর ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও! একজন নিজের জন্য একটা ধর্ম পছন্দ করেছে, তাতে তোমাদের কি করার আছে? তোমরা কি মনে কর, বনু আদি (ওমরের গোত্র) তাদের লোককে তোমাদের হাতে ছেড়ে দেবে? তাকে ছেড়ে দাও। আস ইবনে ওয়ায়েলের কথায় তারা ওমরকে ছেড়ে দিল। (সহিহ ইবনে হিব্বান, সিরাতে ইবনে হিশাম)
ইসলামের আবির্ভাবের কয়েক বছর পর ইসলাম গ্রহণ করলেও ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের প্রচার প্রসারে ওমরের (রা.) ত্যাগ-তিতিক্ষা, আল্লাহর ইবাদত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তার অগ্রগামিতা তাকে নবীজির (সা.) সাহাবিদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত করে। সাহাবিদের মধ্যে আবু বকরের (রা.) পরই ছিল তার অবস্থান। নবীজি (সা.) তাকে ও আবু বকরকে সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ওহাব আস-সুয়ায়ী থেকে বর্ণিত আলী (রা.) একদিন খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি জানেন নবীজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে ? সবাই বললেন আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি বললেন, না, নবীজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর, তারপর ওমর। (মুসনাদে আহমদ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) সাহাবিদের বলেছেন, আমার পরে আপনারা আমার সাহাবিদের মধ্যে আবু বকর ও ওমরের অনুসরণ করুন। (সুনানে তিরমিজি)
ওএফএফ