মহানবীর (সা.) বংশধারা

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
মহানবীর (সা.) বংশধারা ছবি: ফ্রিপিক

মহানবী (সা.) আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.) ও তার ছেলে আল্লাহর নবী ইসমাইলের (আ.) বংশধর। ওয়াসিলা ইবনে আসকা (রহ.) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা.) বলতেন, আল্লাহ তাআলা ইবরাহিমের (আলাইহিস সালাম) সন্তানদের মধ্য থেকে ইসমাইলকে, ইসমাইলের সন্তানদের মধ্য থেকে কিনানাকে, কিনানার মধ্য থেকে কুরাইশকে, কুরাইশের মধ্য থেকে বনি হাশিমকে, আর বনি হাশিমের মধ্য থেকে আমাকে মনোনীত করেছেন। (সহিহ মুসলিম)

এ ছাড়াও মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত বিভিন্ন হাদিসে তিনি নিজেকে ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইলের (আ.) বংশধর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ রকম আরেকটি হাদিস হলো, ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের সম্পর্কে বলেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং লওহে মাহফুজে লিখিত সর্বশেষ নবী তখন থেকেই যখন আদম কাদামাটি অবস্থায় পড়ে ছিলেন। আমি আমার বাবা ইবরাহিমের দোয়া, ঈসার তার জাতিকে দেওয়া সুসংবাদ এবং আমার মায়ের দেখা সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন যাতে তিনি তার থেকে এমন জ্যোতি বের হতে দেখেন যা শামের অট্টালিকাসমূহ আলোকিত করেছিল। নবীগণের মায়েরা এ রকম স্বপ্ন দেখে থাকেন।

এরপর তিনি কোরআনের এই আয়াতটি তেলাওয়াত করেন, হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি একজন সাক্ষী, সুসংবাদদাতা, সতর্ককারীরূপে, এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর অনুমতিতে আহ্বানকারী ও আলোকিত প্রদীপস্বরূপ। (সুরা আহজাব: ৪৫-৪৬) (মুসতাদরাকে হাকেম)

আরবদের পূর্বপুরুষ আদনান পর্যন্ত মহানবীর (সা.) বংশধারার ব্যাপারে মহানবীর (সা.) জীবনীকার ও ঐতিহাসিকগণের মধ্যে ঐক্যমত্য রয়েছে। তারা বলেন, তিনি হলেন মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ, ইবনু আব্দুল মুত্তালিব, ইবনু হাশিম, ইবনু আবদে মানাফ, ইবনু কুসাই, ইবনু কিলাব, ইবনু মুররাহ, ইবনু কা’ব, ইবনু লুয়াই, ইবনু গালিব, ইবনু ফিহর (যার আরেক নাম ‘কোরায়শ’। কোরায়শ গোত্র তার নামেই পরিচিত), ইবনু মালিক, ইবনু নাযর, ইবনু কিনানা, ইবনু খুজাইমাহ, ইবনু মুদরিকা, ইবনু ইলইয়াস, ইবনু মুদার, ইবনু নিযার, ইবনু মা’দ, ইবনু আদনান।

আদনানের পর থেকে ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত মহানবীর (সা.) বংশধারাও বর্ণিত রয়েছে। তবে ওই বংশধারার ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, আদনান পর্যন্ত মহানবীর (সা.) বংশধারার বিশুদ্ধতা প্রমাণিত এবং বংশজ্ঞদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। তবে আদনানের ওপরের বংশধারার ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কারো মধ্যে মতভেদ নেই যে আদনান আল্লাহর নবী ইসমাইলের (আ.) বংশধর। (যাদুল মাআদ ফি খাইরিল ইবাদ)

ইবরাহিম ও ইসমাইলের (আ.) দোয়া

যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল (আলাইহিস সালাম) কাবা ঘর নির্মাণ করছিলেন তখন তারা আল্লাহর কাছে মক্কার নিরাপত্তা ও উত্তম রিজিকের জন্য দোয়া করেন। তারা আরও দোয়া করেন, মক্কার বাসিন্দা তাদের বংশধররা যেন আল্লাহ তাআলার অনুগত হয়, ইবাদতগুজার হয়, এবং আল্লাহ তাআলা যেন তাদের মধ্যে একজন নবী প্রেরণ করেন।

তাদের এই দোয়া করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবার ভিতগুলো ওঠাচ্ছিল এবং বলছিল, হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে এ আমলটি কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসুল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা বাকারা: ১২৭-১২৯)

আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইলের (আ.) এই দোয়া কবুল করেছেন এবং তাদের বংশধর আরবদের একজনকে রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনিই সেই সত্তা, যিনি নিরক্ষরদের (নিরক্ষর আরব) মধ্যে তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসুল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট ভ্রষ্টতায় ডুবে ছিল। (সুরা জুমুআ: ২)

ওএফএফ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।