ক্ষমা ও নূরের জ্যোতি মিলবে যে তাওবায়

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৩৩ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২২

তাওবায় মিলবে গুনাহের ক্ষমা ও পরকালের কঠিন অন্ধকারে নূরের জ্যোতি। যেদিন আল্লাহর ক্ষমা ও জ্যোতি তথা আলো ছাড়া আর কারো ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। মহান প্রভু ঈমানদারকে তাই বিশুদ্ধ তাওবাহ করার এবং তার কাছে ক্ষমা ও আলো চাওয়ার কথা তুলে ধরেছেন এভাবে-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ تَوۡبَۃً نَّصُوۡحًا ؕ عَسٰی رَبُّکُمۡ اَنۡ یُّکَفِّرَ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یُدۡخِلَکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ۙ یَوۡمَ لَا یُخۡزِی اللّٰهُ النَّبِیَّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ ۚ نُوۡرُهُمۡ یَسۡعٰی بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ بِاَیۡمَانِهِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَتۡمِمۡ لَنَا نُوۡرَنَا وَ اغۡفِرۡ لَنَا ۚ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবাহ করো বিশুদ্ধ তওবাহ। সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মাফ করে দেবেন এবং তোমাদের (এমন) জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে প্রবাহিত নদী-নালা। সেই দিন আল্লাহ, নবি এবং তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের অপদস্থ করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সামনে ও ডানে বিচ্ছুরিত হবে; তারা বলবে-

رَبَّنَاۤ اَتۡمِمۡ لَنَا نُوۡرَنَا وَ اغۡفِرۡ لَنَا ۚ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতমিম লানা নুরানা ওয়াগফিরলানা ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির

‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান করুন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ৮)

এ আয়াতে প্রমাণিত বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর দয়া-মায়ার কোনো সীমা নেই। বান্দার প্রতি আল্লাহ দয়া- সীমাহীন। তাই যে বান্দা বার বার আল্লাহর কাছে ফিরে আসে, তিনি সেই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। অন্ধকারে আলো দিয়ে সাহায্য করেন।

আয়াতে ‘আলো দান করুন’- মুমিনদের এ দোয়া করা প্রসঙ্গে তাফসিরে এসেছে, ‘মুমিনরা তখন েএ দোয়া করবে, যখন আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের জ্যোতি বা আলো কেড়ে নেবেন আর তাদের উপর অন্ধকার নেমে আসবে। তখন মুমিনরা আল্লাহর কাছে বলতে থাকবেন-

رَبَّنَاۤ اَتۡمِمۡ لَنَا نُوۡرَنَا

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতমিম লানা নুরানা

অর্থ : ‘হে প্রভু! (জান্নাতে প্রবেশ করা আগ পর্যন্ত) আমাদের এই জ্যোতিকে অবশিষ্ট রাখুন এবং তাতে পূর্ণতা দান করুন।’

এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য মহা সাফল্য। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আরও বলেন-

یَوۡمَ تَرَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ یَسۡعٰی نُوۡرُهُمۡ بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ بِاَیۡمَانِهِمۡ بُشۡرٰىکُمُ الۡیَوۡمَ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ ذٰلِکَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

সেদিন তুমি বিশ্বাসী নর-নারীদেরকে দেখবে, তাদের সামনে ও ডানে তাদের আলো প্রবাহিত হবে। (বলা হবে)- ‘আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ জান্নাতের; যার নিম্নে নদীমালা প্রবাহিত, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ১২)

তাওবাহর প্রাপ্তি সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা

যে ব্যক্তি নিজের অন্যায়ের জন্য তওবা করবে, সে অবশ্যই আল্লাহর নাফরমানীর কাজ থেকে সর্বদা বিরত থাকতে সচেষ্ট হবে। আল্লাহর তরফ থেকে আরোপিত ফরজ সমূহকে যত্নসহকারে আদায় করবে। আর যদি বান্দার অধিকার খর্ব হয়; যেমন- কাউকে গাল-মন্দ, গীবত-শেকায়াত, অত্যাচার-নির্যাতন ইত্যাদি করে তবে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। কেননা তাওবাহ বান্দার জন্য সেরা নেয়ামত। হাদিসে এসেছে-

১. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিল, এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে; যে গুনাহ করে তাওবা করে; পুনরায় গুনাহ করে। আবার তাওবা করে আবার গুনাহ করে। আবার গুনাহের কাজে মশগুল হয় এবং আবার তাওবা-ইস্তিগফার করে। এ রূপ করতে থাকা ব্যক্তির কি অবস্থা হবে? হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, তার কর্তব্য হলো সর্বদা তাওবা-ইস্তিগফার করতে থাকা। কেননা তাওবা-ইস্তিগফার অব্যাহত থাকলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে যাবে। শয়তান বলবে, এ ব্যক্তিকে গুনাহর কাজে সর্বদা মশগুল রাখতে আমি অক্ষম।’

২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে তাওবা করতে থাক। কেননা আমি নিজে দৈনিক ১০০ বার তাওবা করি।’

৩. হজরত আবু আইউব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একথা শুনেছি, যা তোমাদের কাছ থেকে গোপন রেখেছিলাম তা এই, তিনি বলেছেন, যদি তোমরা গুনাহ করে আল্লাহ তাআলার মহান দরবারে তাওবা-ইস্তিগফার না করতে, তবে আল্লাহ তাআলা এমন এক মাখলুক সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা করতো, তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ক্ষমা করতেন। (মুসলিম)

সুতরাং বুঝা যায় যে, তাওবায় মিলবে ক্ষমা ও জ্যোতি। যে জ্যোতি মানুষকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছতে সহায়ক হবে। বিশুদ্ধ তাওবাহর ফলে মহান আল্লাহ দান করবেন জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত নদী-নালা। মুসলিম উম্মাহর ‍উচিত মহান আল্লাহর দরবারে প্রতিদিন তাওবা-ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রাথনা করা। যেভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা এসেছে কোরআন এবং সুন্নায়।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাঁর মহান রবের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা ও আলো কামনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।