ইসলামের আলোকে বৃক্ষরোপণের ফজিলত

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২২

মোহাম্মাদ হাসিব উল্লাহ

পৃথিবীর বুকে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত রাজির মধ্যে বৃক্ষ অন্যতম। কেননা বৃক্ষ থেকে খাদ্য হিসেবে প্রাণী যেমন ফলমূল লাভ করে, অনুরূপ রৌদ্রের তীব্রতার সময়ে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে। এমনকি বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষের মাধ্যমেই মহান প্রতিপালক এই বিশ্বকে সবুজায়ন করে গড়ে তুলেছেন। তাইতো, ইসলামের দৃষ্টিতে বৃক্ষরোপণের ফজিলত অত্যধিক।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও একাধিক হাদিসে বৃক্ষরোপণের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। যেমন হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا، أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا، فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ، إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ
‘যে কোনো মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায়, আর তা থেকে পাখি কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু আহার গ্রহণ করে, তবে তা তার পক্ষ হতে সদকা বলে গণ্য হবে।’ (বুখারি ২৩২০)

এছাড়া হাদিসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদের ২৩৫২০নং হাদিসেও বৃক্ষরোপণের ফজিলত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃক্ষরোপণের প্রতি উৎসাহিত করে বলেছেন-
ما من رجل يغرس غرسا إلا كتب الله له من الأجر قدر ما يخرج من ثمر ذلك الغراس
‘কোনো ব্যক্তি যখন গাছ লাগায়, উক্ত গাছে যত ফল হবে, তার আমলনামায় সেই ফল পরিমাণ সওয়াব লিপিবদ্ধ হবে।’

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বৃক্ষরোপণের তাৎপর্য অত্যধিক। কেননা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি প্রাণীর বেচেঁ থাকতে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে বৃক্ষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এজন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনা কারণে বৃক্ষ নিধনে নিষেধ করেছেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
من قَطَعَ سِدْرَةً صَوَّبَ اللَّهُ رَأْسَهُ فِي النَّارِ
‘যে ব্যক্তি কোনো বড়ই গাছ কাটবে, আল্লাহ তাকে মাথা উপর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (আবু দাউদ ৫২৩৯)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু দাউদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অপ্রয়োজনে ও অন্যায়ভাবে খোলা ময়দানের বড়ই গাছ কেটে ফেলে, যার ছায়ায় পথচারী ও চতুষ্পদ প্রাণী আশ্রয় নিয়ে থাকে, আল্লাহ তাকে উপর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’

এছাড়াও বৃক্ষরোপণের ফজিলত এতই বেশি যে, ‘কেউ যদি আপনার রোপিত বৃক্ষ থেকে ফল চুরি করেও খায়, তা আপনার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ যেমন হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا إِلاَّ كَانَ مَا أُكِلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا أَكَلَتِ الطَّيْرُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةً وَلاَ يَرْزَؤُهُ أَحَدٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ صَدَقَةٌ
‘যে কোনো মুসলিম ফলজ বৃক্ষরোপন করবে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য দান স্বরূপ, যা কিছু চুরি হয় তাও দান স্বরূপ, বন্য জন্তু যা খেয়ে নেয় তাও দান স্বরূপ। পাখি যা খেয়ে নেয় তাও দান স্বরূপ। আর কেউ কিছু নিয়ে গেলে তাও তার জন্য দান স্বরূপ।’ (মুসলিম ৩৮৬০)

তবে, ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে চুরি করা ও জোর জবরদস্তি অপরাধমূলক কাজ এবং এর জন্য শাস্তির বিধানও রয়েছে। এমনকি অন্যায়ভাবে কারো জমিতেও বৃক্ষরোপন করা যাবে না। কেননা ইহা হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যেমন ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে পতিত জমি থেকে কিছু নেবে, তাতে গর্ত খনন করবে কিংবা রোপণ করবে, সে অত্যাচারী।’

এমনকি ইসলামে বৃক্ষরোপনের প্রতি এতই গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে যে, কেয়ামতের আগ পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِنْ قَامَتْ عَلَى أَحَدِكُمُ الْقِيَامَةُ، وَفِي يَدِهِ فَسِيلَةٌ فَلْيَغْرِسْهَا
‘যদি কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ মুহূর্তেও তোমাদের কারো হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তাহলে সে যেন তা রোপণ করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমাদ ১২৯০২)

একজন মুসলিম ব্যক্তি কর্তৃক পৃথিবীর বুকে বৃক্ষরোপণের পাশাপশি জান্নাতেও বৃক্ষরোপণের সুযোগ রয়েছে। যা হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বারা স্বীকৃত। যেমন প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ জামে আত-তিরমিজির ৩৪৬৪নং হাদিসে এসেছে-
مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللّٰهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِه غُرِسَتْ لَه نَخْلَةٌ فِى الْجَنّةِ
‘যে ব্যক্তি (একবার) বলে “সুবহানাল্লাহিল আজিমি ওয়া বিহামদিহ”
আমি মহান আল্লাহ তাআলার প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা ঘোষণা করছি), তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়।

অতএব, বৃক্ষরোপণের মধ্যে যেমন ইহকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে, অনুরূপ পরকালেও মহান আল্লাহ এর যথার্থ প্রতিদান প্রদান করবেন। তাই আমাদের উচিত, বেশি বেশি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সওয়াবের অধিকারী হওয়া।
আল্লাহ সবাইকে তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : আলেম ও তরুণ গবেষক

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।