তারাবিহের আলোচনা
গনিমতের বিধান ও বণ্টন নীতির বর্ণনা

১৪৪৪ হিজরির রমজান মাসের সপ্তম তারাবিহ আজ। সুরা আনফালের ৪১নং আয়াত থেকে (৭৫) শেষ পর্যন্ত এবং সুরা তওবার শুরু থেকে ৯৩ নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে। এ সুরায় হিজরত, বদর যুদ্ধ, হুদাইবিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয়সহ গনিমতের মালের হকদার কারা ও তার বণ্টন নীতি সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। আজ থেকে প্রতিদিনের তারাবিহতে কোরআনুল কারিমের ১ পারা তেলাওয়াত করা হবে।
সুরা আনফাল : (৪১-৭৫)
সুরা আনফালের মূল বিষয়বস্তু হলো বদর যুদ্ধ, যুদ্ধে বিজয় লাভের পর যুদ্ধলব্ধ গণিমত সম্পর্কিত। এ সুরায় আরও আলোচিত হয়েছে বদরের যুদ্ধ চলাকালে সে সকল কাফির মুশরিক ও আহলে কিতাবের অশুভ পরিণতি, তাদের পরাজয় ও অকৃতকার্যতা এবং তাদের মোকাবেলায় মুসলমানদের কৃতকার্যতা সম্পর্কিত। যা মুসলমানদের জন্য ছিল একান্ত করুণা ও মহাদান আর কাফের অবিশ্বাসীদের জন্য ছিল আজাব ও প্রতিশোধস্বরূপ।
গনিমতের মাল বণ্টন
আজকের তারাবিহ নামাজের শুরুতেই গণিমত সম্পর্কিত আয়াত পড়া হবে। তাতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَا غَنِمۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَهٗ وَ لِلرَّسُوۡلِ وَ لِذِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ۙ اِنۡ کُنۡتُمۡ اٰمَنۡتُمۡ بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلٰی عَبۡدِنَا یَوۡمَ الۡفُرۡقَانِ یَوۡمَ الۡتَقَی الۡجَمۡعٰنِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ
‘আর জেনে রেখ! যুদ্ধে যা কিছু তোমরা (গনিমত হিসেবে) লাভ কর, তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তাঁর রাসুলের, রাসুলের নিকটাত্মীয়, পিতৃহীন এতিম, দরিদ্র এবং পথচারীদের জন্য। যদি তোমরা আল্লাহ ও সেই জিনিসে বিশ্বাসী হও, যা ফয়সালার দিন (বদর প্রান্তরে) আমি আমার বান্দার প্রতি নাজিল করেছিলাম; যেদিন দু’দল (মুসলিম ও কাফের) পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল। আর আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।’ (সুরা আনফাল: আয়াত ৪১)
এ আয়াতে গনিমতের বিধান ও তার বন্টননীতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অভিধানে গনিমত বলা হয় সে সব মাল-সামানকে যা শত্রুর নিকট থেকে লাভ করা হয়। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষা অনুযায়ী অমুসলিমদের কাছ থেকে যুদ্ধ-বিগ্রহে বিজয়ার্জনের মাধ্যমে যে মালামাল অর্জিত হয়, তাকেই বলা হয় ‘গনিমত’। (ফাতহুল কাদির) আর যা কিছু আপোষ, সন্ধি-সম্মতির মাধ্যমে অর্জিত হয়, তাকে বলা হয় ‘ফাই’। (ইবন কাসির)
কোরআনুল কারিমে উভয় শব্দের মাধ্যমে (অর্থাৎ ‘গনিমত’ ও ‘ফাই’) এতদুভয় প্রকার মালামালের হুকুম-আহকাম তথা বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে সুরা আনফালের প্রথম আয়াতে এবং এ আয়াতে শুধুমাত্র গনিমতের মালামালের কথাই আলোচিত হয়েছে যা যুদ্ধকালে অমুসলিমদের কাছ থেকে লাভ হয়েছে। ‘ফাই’-এর আলোচনা সুরা হাশরে আসবে।
এখানে জেহাদের পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ গনিমতের হকদারদের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সমস্ত সম্পদ পাঁচ ভাগে ভাগ করা হবে। এর চার ভাগ যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টন করা হবে। আর বাকী এক পঞ্চমাংশ বা পাঁচ ভাগের এক ভাগকে আবার পাঁচভাগে ভাগ করা হবে।
প্রথমভাগ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের। এ অংশ মুসলিমদের সাধারণ স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যয় হবে।
দ্বিতীয়ভাগ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বজনদের জন্য নির্ধারিত। তারা হলেন ওই সমস্ত লোক যাদের উপর সদকা খাওয়া হারাম। অর্থাৎ বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব। কারণ তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর। তিনি তার নবুওয়তের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকায় তাদের জন্য এ গনিমতের মাল থেকে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তৃতীয়ভাগ এতিমদের জন্য সুনির্দিষ্ট।
চতুর্থভাগ ফকির ও মিসকিনদের জন্য। আর
পঞ্চম ভাগ মুসাফিরদের জন্য। (ইবন কাসির)
হজরত ইবন তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, বর্তমানে পুরো এক পঞ্চমাংশই ইমামের কর্তৃত্বে থাকবে। তিনি মুসলিমদের অবস্থা অনুযায়ী কল্যাণকর কাজে ব্যয় করবেন। (ইবন কাসির)
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, গনিমতের মাল যদিও আগে সুরা আনফালের প্রথম আয়াতে শুধু আল্লাহ ও তার রাসুলের বলা হয়েছে তবুও তা মূলতঃ মুসলিমদের মধ্যেই পুনরায় বণ্টন হয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য তার জীবদ্দশায় যা কিছু পেতেন তাও বর্তমানে সাধারণ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে।
আয়াতে উল্লেখিত সে সাহায্য ও সহায়তা, যার বদৌলতে তোমরা জয়লাভ করেছ। (মুয়াসসার) এখানে মীমাংসার দিন বলে বদরের যুদ্ধের দিনকে বুঝানো হয়েছে। কারণ এ দিন তিনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করেছেন, ঈমানের কালেমাকে কুফরীর কালেমার উপর বিজয়ী করেছেন এবং তার দ্বীন, তার নবি ও অনুসারীদের উপরে উঠিয়েছেন। (ইবন কাসীর)
বদরের জেহাদে জয়লাভ
মুমিন মুসলমান বদর যুদ্ধে জয় লাভ করেছেন। মাত্র ৩১৩ জন সৈন্যবাহিনী নিয়ে ৩ হাজারেরও বেশি বিশাল কাফের বাহিনীর সঙ্গে জেহাদে নেমে পড়েন। আল্লাহ তাআলা ঈমানদার মুমিন মুসলমানদের বিজয়ের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ حَرِّضِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ عَلَی الۡقِتَالِ ؕ اِنۡ یَّکُنۡ مِّنۡکُمۡ عِشۡرُوۡنَ صٰبِرُوۡنَ یَغۡلِبُوۡا مِائَتَیۡنِ ۚ وَ اِنۡ یَّکُنۡ مِّنۡکُمۡ مِّائَۃٌ یَّغۡلِبُوۡۤا اَلۡفًا مِّنَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاَنَّهُمۡ قَوۡمٌ لَّا یَفۡقَهُوۡنَ
'হে নবি! আপনি মুসলমানদের উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু'শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে; তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন।' (সুরা আনফাল: আয়াত ৬৫)
আয়াতে تحريض শব্দের অর্থ হল উদ্বুদ্ধকরণে অতিরঞ্জন করা। অর্থাৎ, খুব বেশি উদ্বুদ্ধ করা, আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টি করা। কেননা এই নির্দেশ মোতাবেক নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধের আগে সাহাবাদের জেহাদের জন্য অতিশয় উদ্বুদ্ধ করতেন এবং তার মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বর্ণনা করতেন। যেমন- বদর যুদ্ধের সময় যখন মুশরিকরা নিজেদের ভারী সংখ্যা নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ যুদ্ধসামগ্রীসহ ময়দানে উপস্থিত হল, তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এমন জান্নাতে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও, যার প্রস্থ আকাশ-পৃথিবী সমান।’
এক সাহাবি উমাইর বিন হুমাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘জান্নাতের প্রস্থ আকাশ-পৃথিবী সমান? হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ!’ তা শুনে তিনি বললেন, ‘ওহো’। অর্থাৎ, খুশি প্রকাশ করলেন এবং এই আশা ব্যক্ত করলেন যে, ‘আমিও জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই।’ তিনি (নবিজি) বললেন, ‘তুমি তাদের একজন হবে।’ অতএব তিনি নিজের তরবারির খাপকে ভেঙ্গে ফেললেন এবং কিছু খেজুর বের করে খেতে লাগলেন। খেতে খেতে অবশিষ্ট খেজুর তিনি মাটিতে ফেলে দিয়ে বললেন, ‘এগুলো খাবার জন্য জীবিত থাকলে সে জীবন তো বড় দীর্ঘ জীবন!’ এরপর তিনি জেহাদ করার জন্য বীরত্বের সঙ্গে সামনের দিকে অগ্রসর হলেন। পরিশেষে তিনি কাফেরদের সঙ্গে লড়তে লড়তে শহীদ হয়ে গেলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হন। (মুসলিম, ইমারাহ অধ্যায়)
আয়াতে উল্লেখিত এটা মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ যে, তোমাদের মধ্যে দৃঢ়তার সঙ্গে যুদ্ধকারী ২০ জন যোদ্ধা ২০০ জন কাফের সৈন্যের বিরুদ্ধে এবং ১০০ জন যোদ্ধা তাদের এক হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে যথেষ্ট হয়ে বিজয়ী থাকবে।
গনিমতের মাল থেকে খাওয়ার নির্দেশ
যুদ্ধলব্দ গনিমতের মাল বা সম্পদ থেকে খাওয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ। কোরআনে এসেছে-
فَکُلُوۡا مِمَّا غَنِمۡتُمۡ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
'সুতরাং তোমরা খাও গণীমত হিসাবে তোমরা যে পরিচ্ছন্ন ও হালাল বস্তু অর্জন করেছ তা থেকে। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, মেহেরবান।' (সুরা আনফাল : আয়াত ৬৯)
এ আয়াতে গনিমতের মাল হালাল ও পবিত্র হওয়ার কথা উল্লেখ করে মুক্তিপণ গ্রহণ করার বৈধতা ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে এ কথার সমর্থন হয় যে, ‘লিপিবদ্ধ’ বিধানে সম্ভবত গনিমতের মাল হালাল হওয়ার কথাই ছিল।
যারা সত্যিকারের মুসলমান
ইসলামের জন্য ত্যাগ স্বীকারকারী আনসার ঈমানদারকে সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ هَاجَرُوۡا وَ جٰهَدُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ الَّذِیۡنَ اٰوَوۡا وَّ نَصَرُوۡۤا اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ حَقًّا ؕ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ رِزۡقٌ کَرِیۡمٌ
'আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুজি।' (সুরা আনফাল : আয়াত ৭৪)
এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে আনসার-মুহাজির সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরিসহ আনসারদের মধ্যে চালু থাকা বিগত দিনের শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা কলহ-বিবাদের অবসান ঘটিয়ে ইসলামি রাষ্ট্রের প্রথম ধাপ ইসলামি জাতীয়তা প্রতিষ্ঠা করেন।
দ্বিতীয় ধাপে মদিনার ইয়াহুদি খ্রিস্টানদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ সকল চুক্তির বিষয়াদি আলোচিত হয়েছে এ সুরায়। এ সুরার শেষে বদরের যুদ্ধের যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিতে করণীয় ও মুক্তিপণের বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে।
এ আয়াত থেকে আরও সুস্পষ্ট যে, তাদের জন্য মাগফেরাত তথা ক্ষমা নির্ধারিত। যেমন বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, ‘ইসলাম গ্রহণ যেমন তার আগের সব পাপকে নিঃশেষ করে দেয়, তেমনিভাবে হিজরত তার আগের সব পাপকে নিঃশেষ করে দেয়।’ (মুসলিম ১২১)
সুরা তওবা: ০১-৯৩
সুরা তওবা। মদিনায় অবতীর্ণ। আয়াত সংখ্যা ১২৯। ১৬ রুকু। নবম হিজরিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রোমানদের শায়েস্তা করার অভিযানে বের হচ্ছিলেন তখন এ সুরাটি নাজিল হয়। ইসলামের ইতিহাসে সে অভিযানটি তাবুক যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।
সুরা তওবা দুইটি মৌলিক বিষয় আলোচিত হয়ছে। একটি হলো-
১. মুশরিক ও আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে জেহাদের বিধান।
২. তাবুক যুদ্ধে মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন।
মূল কথা হলো সুরাটিতে জেহাদ সম্পর্কিত আলোচনা হয়েছে। এ সুরা প্রসঙ্গে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি ফরমান লিখেছিলেন। ফরমানটি হলো-
'তোমরা নিজেরা সুরা তওবা শিখ আর তোমাদের স্ত্রীদেরকে সুরা নূর শিক্ষা দাও। এর কারণ হলো- সুরা তওবাতে জেহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে আর সুরা নূরে পর্দা প্রথা প্রচলনের তাগিদ দেয়া হয়েছে।'
আজকের তেলাওয়াতে সুরা তওবার প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
بَرَآءَۃٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖۤ اِلَی الَّذِیۡنَ عٰهَدۡتُّمۡ مِّنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ
মুশরিকদের মধ্যেকার যাদের সঙ্গে তোমরা সন্ধিচুক্তি করেছিলে তাদের সঙ্গে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হল।’ (সুরা তওবা: আয়াত ০১)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবম হিজরিতে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হজের আমির করে পাঠানোর পরে এ আয়াতসমূহ নিয়ে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠালেন। তিনি কোরবানির দিন এগুলোকে মানুষের মধ্যে ঘোষণা করলেন। এর সঙ্গে আরও ঘোষণা ছিল যে, এরপর আর কোনো লোক উলঙ্গ হয়ে (কাবা শরিফ) তওয়াফ করবে না। কোন মুশরিক হজ করবে না। মুমিন ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না। এভাবে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা বলতেন, যখন অপারগ হতেন, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন।’ (ইবন কাসির)
বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের পর ৯ হিজরিতে হজরত আবু বকর, আলি এবং অন্যান্য সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে কোরআনের এই আয়াতসমূহ ও বিধান দিয়ে মক্কা পাঠালেন, যাতে তাঁরা তা প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করে দেন। তাঁরা নবির আদেশ মোতাবেক ঘোষণা করলেন যে, কোনো ব্যক্তি উলঙ্গ হয়ে কাবা ঘরের তাওয়াফ করবে না। বরং আগামী বছর থেকে কোন মুশরিককে বাইতুল্লাহর হজের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে না।’ (বুখারি: নামাজ ও হজ অধ্যায়; মুসলিম: হজ অধ্যায়)
এ সুরায় আরও ওঠে এসেছে আল্লাহর গণণায় ১২মাসের বর্ণনা। যার মধ্যে ৪টি সম্মানিত। এ সম্মানিত মাসে আল্লাহ তাআলা রক্তপাতকে নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡهِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ وَ قَاتِلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ کَآفَّۃً کَمَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ کَآفَّۃً ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ
'নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে রয়েছেন।' (সুরা তওবা : আয়াত ৩৬)
নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস হল বারোটি। এখানে উল্লেখিত عدة অর্থ গণনা। شهور হল شهر এর বহুবচন। আয়াতের সারমর্ম হল, আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি নির্ধারিত, এতে কম বেশি করার কারো সুযোগ নেই। জাহেলিয়াতের লোকেরা বদলালেও তোমরা সেটা বদলাতে পার না। তোমাদের কাজ হবে আল্লাহর এ নির্দেশ মোতাবেক সেটাকে ঠিক করে নেয়া।’ (কুরতুবি)
বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খুতবায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মানিত মাসগুলো চিহ্নিত করে বলেন, ‘তিনটি মাস ধারাবাহিক- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম, অপরটি হল রজব।’ (বুখারি ৩১৯৭, মুসলিম ১৬৭৯)
হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই সময় আবার ঘুরে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফিরে এসেছে। যে পদ্ধতিতে আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিনের মত। মাসের সংখ্যা বারোটি। তন্মধ্যে চারটি হচ্ছে, হারাম মাস। তিনটি পরপর জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর হচ্ছে মুদার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাস সানী ও শাবান মাসের মাঝখানে থাকে।’ (বুখারি ৪৬৬২, মুসলিম ১৬৭৯)
এ ছাড়াও সুরা তওবায় মক্কা বিজয়, জিযিয়া ও খেরাজ প্রসঙ্গ, ইসলামি আকিদার মৌলিক বিষয় তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতের আলোচনা রয়েছে। আজকের তেলাওয়াত অংশে জেহাদের প্রস্তুতি, জেহাদের সরঞ্জাম সংগ্রহ, আরবের সব গোত্রের সঙ্গে করা হুদায়বিয়ার সন্ধিসহ সব চুক্তি বাতিলকরণের বিষয়ও আলোচিত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে মক্কা বিজয়, হুনাইন ও তাবুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
তাবুক যুদ্ধে মুনাফিকদের আচরণ
তাবুকের যুদ্ধে মুনাফিকরা যা করেছিল সেসব দোষগুলো তুলে ধরা হয়েছে এ সুরায়। আর তাহলো-
মিথ্যা অজুহাত
لَوۡ کَانَ عَرَضًا قَرِیۡبًا وَّ سَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوۡکَ وَ لٰکِنۡۢ بَعُدَتۡ عَلَیۡهِمُ الشُّقَّۃُ ؕ وَ سَیَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ لَوِ اسۡتَطَعۡنَا لَخَرَجۡنَا مَعَکُمۡ ۚ یُهۡلِکُوۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ ۚ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ اِنَّهُمۡ لَکٰذِبُوۡنَ
'যদি আশু লাভের সম্ভাবনা থাকতো এবং যাত্রাপথও সংক্ষিপ্ত হতো, তবে তারা অবশ্যই আপনার সহযাত্রী হতো, কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হল। আর তারা এমনই শপথ করে বলবে, আমাদের সাধ্য থাকলে অবশ্যই তোমাদের সাথে বের হতাম, এরা নিজেরাই নিজেদের বিনষ্ট করছে, আর আল্লাহ জানেন যে, এরা মিথ্যাবাদী।' (সুরা তওবা : আয়াত ৪২)
যুদ্ধে অংশগ্রহণে তালবাহানা
لَا یَسۡتَاۡذِنُکَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ اَنۡ یُّجَاهِدُوۡا بِاَمۡوَالِهِمۡ وَ اَنۡفُسِهِمۡ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌۢ بِالۡمُتَّقِیۡنَ
'আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতের প্রতি যাদের ঈমান রয়েছে তারা মাল ও জান দ্বারা জেহাদ করা থেকে আপনার কাছে অব্যাহতি কামনা করবে না, আর আল্লাহ সাবধানীদের ভাল জানেন।' (সুরা তওবা : আয়াত ৪৪)
اِنَّمَا یَسۡتَاۡذِنُکَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ ارۡتَابَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ فَهُمۡ فِیۡ رَیۡبِهِمۡ یَتَرَدَّدُوۡنَ
'নিঃসন্দেহে তারাই আপনার কাছে অব্যাহতি চায়, যারা আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতে ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তর সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, সুতরাং সন্দেহের আবর্তে তারা ঘুরপাক খেয়ে চলেছে।' (সুরা তওবা : আয়াত ৪৫)
وَ لَوۡ اَرَادُوا الۡخُرُوۡجَ لَاَعَدُّوۡا لَهٗ عُدَّۃً وَّ لٰکِنۡ کَرِهَ اللّٰهُ انۡۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَ قِیۡلَ اقۡعُدُوۡا مَعَ الۡقٰعِدِیۡنَ
আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক।' (সুরা তওবা : আয়াত ৪৬)
জেহাদ থেকে অব্যহতির ফন্দি
وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّقُوۡلُ ائۡذَنۡ لِّیۡ وَ لَا تَفۡتِنِّیۡ ؕ اَلَا فِی الۡفِتۡنَۃِ سَقَطُوۡا ؕ وَ اِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِیۡطَۃٌۢ بِالۡکٰفِرِیۡنَ
‘আর তাদের কেউ বলে, আমাকে অব্যাহতি দিন এবং পথভ্রষ্ট করবেন না। শোনে রাখ, তারা তো আগে থেকেই পথভ্রষ্ট এবং নিঃসন্দেহে জাহান্নাম এই কাফেরদের পরিবেষ্টন করে রয়েছে। (সুরা তওবা : আয়াত ৪৯)
ঈমানদারের বিপদে আনন্দ-উল্লাস
اِنۡ تُصِبۡکَ حَسَنَۃٌ تَسُؤۡهُمۡ ۚ وَ اِنۡ تُصِبۡکَ مُصِیۡبَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا قَدۡ اَخَذۡنَاۤ اَمۡرَنَا مِنۡ قَبۡلُ وَ یَتَوَلَّوۡا وَّ هُمۡ فَرِحُوۡنَ
‘আপনার কোন কল্যাণ হলে তারা মন্দবোধ করে এবং কোন বিপদ উপস্থিত হলে তারা বলে, আমরা পূর্ব থেকেই নিজেদের কাজ সামলে নিয়েছি এবং ফিরে যায় উল্লসিত মনে।' (সুরা তওবা : আয়াত ৫০)
মুসলমানদের সঙ্গে মিথ্যা শপথ
وَ یَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ اِنَّهُمۡ لَمِنۡکُمۡ ؕ وَ مَا هُمۡ مِّنۡکُمۡ وَ لٰکِنَّهُمۡ قَوۡمٌ یَّفۡرَقُوۡنَ
'তারা আল্লাহর নামে হলফ করে বলে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত, অথচ তারা তোমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়, অবশ্য তারা তোমাদের ভয় করে।' (সুরা তওবা : আয়াত ৫৬)
সম্পদ পেলে আনন্দ ও না পেলে ক্ষোভ
وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّلۡمِزُکَ فِی الصَّدَقٰتِ ۚ فَاِنۡ اُعۡطُوۡا مِنۡهَا رَضُوۡا وَ اِنۡ لَّمۡ یُعۡطَوۡا مِنۡهَاۤ اِذَا هُمۡ یَسۡخَطُوۡنَ
'তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা সদকা বন্টনে আপনাকে দোষারূপ করে। এর থেকে কিছু পেলে সন্তুষ্ট হয় এবং না পেলে বিক্ষুব্ধ হয়।' (সুরা তওবা : আয়াত ৫৮)
নবিজিকে (সা.) গালমন্দ
وَ مِنۡهُمُ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ النَّبِیَّ وَ یَقُوۡلُوۡنَ هُوَ اُذُنٌ ؕ قُلۡ اُذُنُ خَیۡرٍ لَّکُمۡ یُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ یُؤۡمِنُ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ رَحۡمَۃٌ لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ رَسُوۡلَ اللّٰهِ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
'আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ নবিকে ক্লেশ দেয়, এবং বলে, এ লোকটি তো কানসর্বস্ব। আপনি বলে দিন, কান হলেও তোমাদেরই মঙ্গলের জন্য, আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখে এবং বিশ্বাস রাখে মুসলমানদের কথার উপর। বস্তুতঃ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার তাদের জন্য তিনি রহমতবিশেষ। আর যারা আল্লাহর রসূলের প্রতি কুৎসা রটনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব।' (সুরা তওবা : আয়াত ৬১)
পরস্পর মন্দ কাজে জড়িত
اَلۡمُنٰفِقُوۡنَ وَ الۡمُنٰفِقٰتُ بَعۡضُهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍ ۘ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمُنۡکَرِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَقۡبِضُوۡنَ اَیۡدِیَهُمۡ ؕ نَسُوا اللّٰهَ فَنَسِیَهُمۡ ؕ اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
'মুনাফেক নর-নারী সবারই গতিবিধি একরকম; শিখায় মন্দ কথা, ভাল কথা থেকে বারণ করে এবং নিজ মুঠো বন্ধ রাখে। আল্লাহকে ভুলে গেছে তার, কাজেই তিনিও তাদের ভূলে গেছেন নিঃসন্দেহে মুনাফেকরাই নাফরমান।' (সুরা তওবা : আয়াত ৬৭)
সর্বোপরি মুনাফেকরা ছিল কাফেরদের প্রতিনিধিত্বকারী। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টিও কোরআনের আজকের তেলাওয়াতের অংশে তুলে ধরেন-
کَالَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ کَانُوۡۤا اَشَدَّ مِنۡکُمۡ قُوَّۃً وَّ اَکۡثَرَ اَمۡوَالًا وَّ اَوۡلَادًا ؕ فَاسۡتَمۡتَعُوۡا بِخَلَاقِهِمۡ فَاسۡتَمۡتَعۡتُمۡ بِخَلَاقِکُمۡ کَمَا اسۡتَمۡتَعَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ بِخَلَاقِهِمۡ وَ خُضۡتُمۡ کَالَّذِیۡ خَاضُوۡا ؕ اُولٰٓئِکَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ۚ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তোমাদের চেয়ে বেশী ছিল শক্তিতে এবং ধন-সম্পদের ও সন্তান-সন্ত তির অধিকারীও ছিল বেশী; অতঃপর উপকৃত হয়েছে নিজেদের ভাগের দ্বারা আবার তোমরা ফায়দা উঠিয়েছ তোমাদের ভাগের দ্বারা-যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীরা ফায়দা উঠিয়েছিল নিজেদের ভাগের দ্বারা। আর তোমরাও বলছ তাদেরই চলন অনুযায়ী। তারা ছিল সে লোক, যাদের আমলসমূহ নিঃশেষিত হয়ে গেছে দুনিয়া ও আখেরাতে। আর তারাই হয়েছে ক্ষতির সম্মুখীন। (সুরা তওবা : আয়াত ৬৯)
আজকের তারাবিহতে পঠিত শেষ ৪ আয়াতে ওঠে এসেছে আল্লাহ ও তার রাসুলের জন্য জীবন ও মাল দিয়ে জেহাদে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সুসংবাদ এবং অসহযোগিতাকারীদের জন্য শাস্তির ঘোষণা। আর যারা অসহায় গরিব কিংব রুগ্ন তাদের জন্য ছাড়ের বিষয়টিও। আল্লাহ তাআলা বলেন-
لٰکِنِ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ جٰهَدُوۡا بِاَمۡوَالِهِمۡ وَ اَنۡفُسِهِمۡ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَهُمُ الۡخَیۡرٰتُ ۫ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
'আর রাসুল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে।' (সুরা তওবা : আয়াত ৮৮)
اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
'আল্লাহ তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তারা তাতে বাস করবে অনন্তকাল। এটাই হল বিরাট কৃতকার্যতা।' (সুরা তওবা : আয়াত ৮৯)
وَ جَآءَ الۡمُعَذِّرُوۡنَ مِنَ الۡاَعۡرَابِ لِیُؤۡذَنَ لَهُمۡ وَ قَعَدَ الَّذِیۡنَ کَذَبُوا اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ ؕ سَیُصِیۡبُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
'আর ছলনাকারী বেদুঈন লোকেরা এলো, যাতে তাদের অব্যাহতি লাভ হতে পারে এবং নিবৃত্ত থাকতে পারে তাদেরই যারা আল্লাহ ও রসূলের সাথে মিথ্যা বলে ছিল। এবার তাদের উপর শীগ্রই আসবে বেদনাদায়ক আযাব যারা কাফের।' (সুরা তওবা : আয়াত ৯০)
لَیۡسَ عَلَی الضُّعَفَآءِ وَ لَا عَلَی الۡمَرۡضٰی وَ لَا عَلَی الَّذِیۡنَ لَا یَجِدُوۡنَ مَا یُنۡفِقُوۡنَ حَرَجٌ اِذَا نَصَحُوۡا لِلّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ ؕ مَا عَلَی الۡمُحۡسِنِیۡنَ مِنۡ سَبِیۡلٍ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
'দূর্বল, রুগ্ন, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের জন্য কোন অপরাধ নেই, যখন তারা মনের দিক থেকে পবিত্র হবে আল্লাহ ও রসূলের সাথে। নেককারদের উপর অভিযোগের কোন পথ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী দয়ালু।' (সুরা তওবা : আয়াত ৯১)
আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। কোরআন নাজিলের মাস রমজানে এ মহাগ্রন্থ বুঝে পড়ে সে অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম