স্বামীর সঙ্গে তালাক হলে কি শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করা যাবে?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২৫ পিএম, ১৬ জুন ২০২৩

ছেলের বউয়ের জন্য শ্বশুর মাহরাম। তার সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ। কিন্তু ছেলে যদি মারা যায় বা স্ত্রীকে তালাক দেয় তবে এ বউয়ের জন্য শ্বশুর কি মাহরাম? তারা কি দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে?

হ্যাঁ, স্বামীর পিতা (শ্বশুর) চিরকালের জন্য মাহরাম। এমনকি তালাক সংঘটিত হওয়ার পরও কিংবা মৃত্যুবরণ করার পরও। স্বামীর পিতা (শ্বশুর) চিরকালের জন্য মাহরাম পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত যদিও তার স্বামীর সাথে তালাক সংঘটিত হয়ে গিয়ে থাকে অথবা স্বামী মৃত্যুবরণ করে থাকেন। কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন-

وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ

‘(এবং তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত সন্তানদের স্ত্রীগণকে।’ (সুরা নিসা: আয়াত ২৩)

এ প্রসঙ্গ শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন-

: لا حرج عليك في الكشف لوالد زوجك السابق؛ لأنه محرم لك ولو طلقك ابنه، وزيارته في الأوقات المناسبة مع زوجك أو محرمك مناسبة، إذا كان من أهل الصلاح والخير، وهكذا لو زرته لوحدك إذا كان منزله قريبًا لا يحتاج إلى سفر ولا كلفة، بشرط أن يرضى زوجك بذلك وفق الله الجميع لما يرضي

‘আপনার প্রাক্তন স্বামীর পিতার (শ্বশুরের) সামনে মুখমণ্ডল খোলা বা বেপর্দা হওয়ায় কোনও অসুবিধা নেই। কারণ তিনি আপনার মাহরাম (তার সাথে চিরকালের জন্য বিয়ে হারাম) যদিও তার ছেলে আপনাকে তালাক দিয়েছে। অতএব আপনার জন্য আপনার (নতুন) স্বামীর সাথে বা কোনও মাহরামের সাথে গিয়ে উপযুক্ত সময়ে তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা বৈধ-যদি সে নেককার ও সৎ হয়।

একাকিও তার বাড়িতে দেখা-সাক্ষাত করতে পারেন-যদি তার বাড়ি কাছাকাছি হয় এবং সেখানে যেতে সফর বা কষ্ট করতে না হয়। তবে শর্ত হল, এতে আপনার স্বামীর সম্মতি থাকতে হবে। আল্লাহ সকলকে ঐ কাজ করার তওফিক দান করুন; যাতে তিনি সন্তুষ্ট হোন।’ (মাজমু ফাতাওয়া ও মাকালাত শাইখ বিন বায ২১/২২, ফতোয়া প্রদানের তারিখ ২৩/২/১৪১৮ হিজরি)

উল্লেখ্য যে, স্বামীর সঙ্গে কেবল আকদ সংঘটিত হলেই তার পিতা (নারীর শ্বশুর) চিরকালের জন্য হারাম হয়ে যাবে। চাই দাম্পত্য জীবন শুরু হোক অথবা না হোক। অর্থাৎ যদি কোনও কারণে বিয়ের ইজাব-কবুল হওয়ার পরপরই এবং দাম্পত্য জীবন শুরু করার আগেই তাদের মাঝে তালাক সংঘটিত হয়ে যায় তারপরও উক্ত নারীর জন্য তার স্বামীর পিতা (তার শ্বশুর) চিরতরে হারাম বলে গণ্য হবে। সুতরাং তাদের মাঝে স্থায়ীভাবে বিয়ে বন্ধন হারাম।

অনুরূপভাবে স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে হয়ে গেলে বা স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলেও তার মা (শাশুড়ি) এবং তার দাদি-নানিগণ (দাদি শাশুড়ি ও নানি শাশুড়িগণ) উক্ত পুরুষ ব্যক্তির জন্য মাহরাম বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ তাদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ এবং তাদের সামনে কোনও পর্দা নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা যে সকল নারীকে পুরুষদের জন্য বিয়ে করা হারাম করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হল, স্ত্রীর মা এবং দাদি-নানিগণ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ

‘(আরও হারাম করা হয়েছে), তোমাদের স্ত্রীদের মাগণ (তথা জন্মদাত্রী মা এবং দাদি-নানিগণ)কে।’ (সুরা নিসা: আয়াত ২৩)

ছেলের ক্ষেত্রে যারা মাহরাম

১. মা, ২. মেয়ে, ৩. বোন, ৪. নানী, ৫. দুধ মা, ৬. খালা, ৭. ভাতিজি, ৮. ভাগ্নি, ৯. ফুফু, ১০. সৎ মা, ১১. দাদী, ১২. শাশুড়ি, ১৩. দুধ মেয়ে ও ১৪. ছেলের স্ত্রী।

মেয়ের ক্ষেত্রে যারা মাহরাম

১. বাবা, ২. ছেলে, ৩. ভাই, ৪. নানা, ৫. দুধ ভাই, ৬. মামা, ৭. ভাতিজা, ৮. ভাগিনা, ৯. চাচা, ১০. দাদা, ১১. শ্বশুর, ১২. সৎ ছেলে, ১৩. দুধ ছেলে ও ১৪. মেয়ের জামাই।

এই ১৪জন ছাড়া বাকি সবার সঙ্গে পর্দা করা ফরজ। পর্দা না করা কবিরা গুনাহ। আর একটি কবিরা গুনাহই জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দেখা-সাক্ষাতে পর্দা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।